উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ধৃত গৌতম চট্টোপাধ্যায় এবং লক্ষ্মীকান্ত সাউ জেরায় জানিয়েছে, তাদের দায়িত্ব ছিল বার্নপুরের ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে বারাসতের নির্দিষ্ট ডেরায় পৌঁছে দেওয়া। সেই মতো তারা কাজ করেছিল। তবে ওই ব্যবসায়ীর কাছে কীভাবে এক কোটি টাকা এসেছিল সেই সম্পর্কে নির্দিষ্ট ভাবে তারা কিছু বলতে চায়নি। বার্নপুরের ওই ব্যবসায়ীকে জেরা করার পরেই তা বোঝা যাবে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছে। এই লেনদেনের মাঝে বার্নপুরের আরও এক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। প্রয়োজনে তাকেও জেরা করা হতে পারে।
পুলিস সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ওই ব্যবসায়ী এর আগেও টাকা পাঠিয়েছিল। দিল্লির বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত সাউ বিজেপি’র অত্যন্ত দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিত। সে নির্বাচনের অনেক আগেই দিল্লি থেকে এসে এরাজ্যে ডেরা বেঁধেছিল। খড়্গপুর, উত্তর ২৪ পরগনা এবং বারাসত সহ বিভিন্ন জেলায় সে নিচু স্তরে সংগঠনের কাজ করেছে। তার মতো আরও অনেকেই এবারে ভোটের সময় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সংগঠনের কাজ করেছে। আসানসোলেও তিন বহিরাগতকে পুলিস ভোটের বেশ কয়েকমাস আগে একটি ঘর থেকে আটক করেছিল। ভিন রাজ্যের এই যুবকরা মগজ ধোলাইয়ের কাজ করে। এছাড়া তারা দলের হয়ে সব কাজ করতেই প্রস্তুত থাকে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনে প্রচারে এসে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, কয়লা পাচারের টাকা বিজেপি এবং আরএসএস নিচ্ছে। তাই দিলীপবাবুর আপ্ত সহায়কের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া টাকা শিল্পাঞ্চলের কোনও মাফিয়া দিয়েছিল, না হাওলার মাধ্যমেই টাকা এসেছিল তা ওই ব্যবসায়ীকে জেরা না করা পর্যন্ত সিআইডি নিশ্চিত হতে পারছে না। তদন্তকারীরা প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছে, বার্নপুরের ওই ব্যবসায়ীর পক্ষে এক কোটি টাকা পার্টি ফান্ডে দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি ততটা মাপের বড় ব্যবসায়ী নন।
এদিকে, টাকা উদ্ধারের পর তিন দিন কেটে গেলেও এই ইস্যুতে এখনও শিল্পাঞ্চল সরগরম রয়েছে। তৃণমূল ও বিজেপি’র মধ্যে তর্জাও অব্যাহত রয়েছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূলের সহ সভাপতি পূর্ণশশী রায় বলেন, হাওলার মাধ্যমে বহু টাকা বিজেপি দিল্লি থেকে পাঠাচ্ছে। সেই কারণে ওরা নির্বাচনে দেদার টাকা খরচ করছে। এই চক্রে বিজেপি’র বড় বড় মাথারা জড়িত রয়েছে। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
পশ্চিম বর্ধমানের বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘড়ুই বলেন, আমরা আগেই বলেছি, পুরোটাই চক্রান্ত। বার্নপুরের কোনও ব্যবসায়ী ওই টাকা দেয়নি। তাছাড়া যে ব্যবসায়ীর কথা বলা হচ্ছে, সেই নামে আমাদের দলে কেউ নেই। সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি ও তৃণমূল দু’পক্ষই এবারের নির্বাচনে টাকা উড়িয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেছে।
প্রসঙ্গত, রবিবার রাতে জিআরপি আসানসোল স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে গৌতম এবং লক্ষ্মীকান্ত নামে দু’জনকে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে জিআরপি আটক করে। তাদের ব্যাগে তল্লাশি চালাতেই এক কোটি টাকা উদ্ধার হয়। ৫০০ এবং ২০০০ টাকার নোট ছিল। সেই রাতেই আয়কর দপ্তর, কমিশনারেটের পুলিস এবং জিআরপি জেরা করে। পরে ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সিআইডি ওই দু’জনকে জেরা শুরু করেছে। তারা এখন সিআইডির হেফাজতে রয়েছে। তদন্তকারীরা বলেন, ধৃতরা জেরায় আগেই জানিয়েছিল তারা পার্টি ফান্ডের টাকা নিয়ে যাচ্ছিল। আদালতেও তারা একই স্বীকারক্তি দিয়েছিল। তবে তাদের কথায় এখনও বেশ কিছু ‘মিসিং লিঙ্ক’ রয়েছে। বার্নপুরের ওই ব্যবসায়ীকে জেরার পরেই সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশেন ধরে ওই ব্যবসায়ী অবস্থান জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। ওই দুই ব্যক্তি রবিবার দুপুরে বার্নপুরে ব্যবসায়ীর কাছে এসেছিল। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে থাকার পর তারা টোটো ভাড়া করে স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হয়। এখন বিভিন্ন জায়গায় নাকা চেকিং চলছে। তাই গাড়িতে টাকা নিয়ে যাওয়া হলে ধরা পড়ার ঝুঁকি থাকত। সে কথা মাথায় রেখে তারা ট্রেনে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। পুলিস কমিশনার লক্ষ্মী নারায়ণ মিনা বলেন, সিআইডি ওদের জেরা করছে। তাই তদন্তের বিষয়ে ওরা সব কিছু বলতে পারবে।