দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের সুফল আশা করতে পারেন। শেয়ার বা ফাটকায় চিন্তা করে বিনিয়োগ করুন। ব্যবসায় ... বিশদ
কয়েকমাস আগে বেহালার বাসিন্দা সন্তু গঙ্গোপাধ্যায় সরশুনা থানায় অভিযোগ করেন, জোনাল রেলওয়ে ইউজার্স কনসালটেটিভ কমিটিতে সদস্যপদ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর কাছ থেকে দফায় দফায় প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। টাকা দিয়ে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। লেনদেনের প্রমাণস্বরূপ তিনি একাধিক ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট ও নথি জমা দেন পুলিসকে। প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর কাছে কারা তাঁর হয়ে সুপারিশ করেছিলেন, সেই সংক্রান্ত একাধিক চিঠিও তদন্তকারী সংস্থাকে দেন। থানা প্রথমে তদন্ত শুরু করে। মামলায় বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের নাম উঠে আসায় তাঁকে দু’বার ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। মুকুলবাবু দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হচ্ছে। মামলার পরিধি বেড়ে যাওয়ায় গড়া হয় সিট।
তদন্তে নেমে সিটের সদস্যরা দিল্লিতে যান। সুপারিশ সংক্রান্ত যে চিঠি সন্তুবাবু দেন, তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নিয়ে গিয়ে যাচাই করা হয়। দেখা যায়, এই চিঠি জাল নয়। মেমো নম্বর ঠিক রয়েছে। মন্ত্রক থেকে এই সংক্রান্ত কাগজ নেওয়া হয়। পাশাপাশি অভিযোগকারীকে নিয়ে রাহুলবাবু যে সংসদে গিয়েছিলেন, তার প্রমাণও হাতে আসে অফিসারদের। তাঁদের সংসদে ঢোকার জন্য যে এমপি সুপারিশ করেন, তার কাগজও নেওয়া হয় দিল্লি থেকে। এখান থেকেই তদন্ত অন্য দিকে মোড় নিতে শুরু করে। রাহুল কেন তাঁকে সংসদে নিয়ে গেলেন, তার খোঁজ করতে গিয়ে জানা যায়, তিনি এক বিজেপি নেতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। রাহুলকে সংগঠনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ওই নেতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তদন্তে উঠে আসে, অভিযোগকারীকে ওই বড় নেতা বলেন, রাহুলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতে। সন্তুবাবু পুলিসকে জানান, তাঁর কাছ থেকে ধৃত ৯.৭৩ লক্ষ টাকা নেন। ধাপে ধাপে তা নেওয়া হয়। টাকা দেওয়ার প্রমাণস্বরূপ ব্যাঙ্কের নথি তুলে দেন অফিসারদের হাতে। আধিকারিকরা সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে গিয়ে সেখান থেকেও কাগজপত্র জোগাড় করেন। দেখা যায়, অভিযোগকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে রাহুলের অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে। এমনকী এও দেখা যায়, রাহুলের অ্যাকাউন্ট থেকে বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট ঘুরে টাকা উঠে গিয়েছে।
এর মাঝেই রাহুল হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করে বসেন। আদালত রক্ষাকবচ দিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। অক্টোবর মাসে রক্ষাকবচ তুলে নেয় আদালত। এরপর থেকেই তাঁকে খুঁজছিলেন অফিসাররা। টাকা লেনদেনের স্টেটমেন্ট হাতে আসার পর অভিযুক্তকে জেরা করা জরুরি হয়ে পড়ে। রাহুল প্রথমে উত্তরপ্রদেশে যান, সেখান থেকে পালিয়ে উত্তরাখণ্ডে আসেন। সূত্র মারফত পুলিসের কাছে খবর আসে, তিনি হৃষিকেশে রয়েছেন। সেখানে পৌঁছে যায় টিম। তিনি যে বাড়িতে ছিলেন, সেখানে হানা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। টাকা যে সদস্যপদ পাইয়ে দেওয়ার জন্যই নেওয়া হয়, তার প্রমাণও হাতে এসে গিয়েছে অফিসারদের। কার নির্দেশে তা নেওয়া হয় এবং কার কাছে টাকা গিয়েছিল, তা তাকে জেরা করে বার করতে চাইছেন অফিসাররা।
ধৃত রাহুল সাউ। -নিজস্ব চিত্র