পড়শির ঈর্ষায় অযথা হয়রানি। সন্তানের বিদ্যা নিয়ে চিন্তা। মামলা-মোকদ্দমা এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেমে বাধা। প্রতিকার: একটি ... বিশদ
নেপালবাবু চারবার বিধায়ক হলেও ২০১১ সালে তিনি ছিলেন কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোটের প্রার্থী। পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৪৫৮ ভোট। ২০১৬ সালেও নেপালবাবু ছিলেন বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী। পেয়েছিলেন ৮৮ হাজার ৭০৭ ভোট। তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ৮০ হাজার ১২০ ভোট। আর বিজেপি পেয়েছিল ১১ হাজার ২১৯ ভোট। ফলে শেষ দু’বার বিধানসভা নির্বাচনে নেপালবাবু জোট প্রার্থী হিসেবে জিতেছিলেন।
নেপালবাবু জেলা কংগ্রেসের সভাপতিও। তাই লোকসভা ভোটে তাঁকেই প্রার্থী করেছিল কংগ্রেস। তখন তিনি ভোট পেয়েছিলেন সাড়ে ২৯ হাজার। তখন পাশে কোনও দল ছিল না। আর তৃণমূলের ভোটও একধাক্কায় ৮০ হাজার থেকে নেমে প্রায় সাড়ে ৪৭ হাজার হয়ে গিয়েছিল।
পরিসংখ্যান বলছে, বাঘমুণ্ডিতে কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক বলতে যা বোঝায় তা মেরেকেটে ৩০ হাজার। আর তৃণমূলের সাড়ে ৪৭ হাজার। এবারের বিধানসভা ভোটের লড়াইটা এখান থেকেই শুরু। ‘ফ্লোটিং ভোট’ টানার উপরেই নির্ভর করছে নেপালবাবু পঞ্চমবার বিধায়ক হবেন, নাকি বাঘমুণ্ডিতে ইন্দ্রপতন ঘটবে।
নেপালবাবুর দাবি, তাঁর পঞ্চমবার বিধায়ক হওয়াটা একপ্রকার নিশ্চিত। কারণ তিনি বিপদে আপদে পাশে দাঁড়ান। তাই লোকসভা ভোটে যাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই আমাদের ভোট দেবেন। বিজেপির ৭৫ ভাগ ভোট এবার আমিই পাব।
বাঘমুণ্ডিতে আজসুর প্রার্থী হয়েছেন আশুতোষ মাহাত। আসনটি আজসুকে ছেড়ে দেওয়ায় বিজেপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তাঁদের বিচারে, বাঘমুণ্ডি বিজেপির ‘সেফ সিট’ ছিল। সেটা আজসুকে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। বিজেপি কর্মীরা নির্বাচনে গা লাগাচ্ছে না। আশুতোষবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, বিজেপির জেলার সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর মাহাত বলেন, জোটধর্ম মেনেই আজসুকে সিটটি ছাড়া হয়েছে। আমাদের কর্মী সমর্থকরা আজসুকেই ভোট দেবেন। কারণ প্রতিটি আসন আমাদের জন্য মূল্যবান।
ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দেবেন মাহাত বলেন, কংগ্রেস জয়পুরে আমাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে। তাই আমরাও এখানে লড়াই করছি। জয়লাভ করা অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু এটা আমাদের কাছে আত্মমর্যাদা রক্ষার লড়াই।
ঝালদা শহরের নামো পাড়ায় মহুকুদর গ্রামের গিরিধারী মাহাতর সঙ্গে নতুনডিহি গ্রোমের ঝাড়ু মাহাতর কথা হচ্ছিল ভোট নিয়েই। তাঁদের কথার মাঝে গিয়ে নাক গলাই। কংগ্রেস সমর্থক গিরিধারীর দাবি, ‘এখানে কংগ্রেসই জিতবে। কারণ নেপালবাবু মানুষের পাশে থাকেন। ঝালদার এসডিও অফিস উনিই করেছেন।’ সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদে সরব হন তৃণমূল সমর্থক ঝাড়ু মাহাত। তিনি বলেন, ‘অফিস দিদি করেছেন। তুই কী করে বলছিস নেপালবাবু করেছেন?’ গিরিধারীর জবাব, ‘কেন, একদিন মিছিল করেছিলেন, মনে নেই?’ ঝাড়ু বলেন, ‘একদিন মিছিল করলেন, আর এসডিও অফিস হয়ে গেল? কত ক্ষমতা রে! আর এই যে দিদি রেশনে চাল দিচ্ছে, কন্যাশ্রী দিচ্ছে, রূপশ্রী দিচ্ছে, তার কোনও দাম নেই? কাছের মানুষ নয়, দরকার কাজের মানুষ।’ গিরিধারীবাবুর সেই এক কথা, ‘নেপাল মাহাত কাছের মানুষ’। বুঝলাম, এ তর্ক শেষ হওয়ার নয়। তাই রণে ভঙ্গ দেওয়াই শ্রেয়।
তৃণমূল প্রার্থী সুশান্ত মাহাতরও লোকজনকে ‘সার্ভিস’ দেওয়ার ব্যাপারে একটা সুনাম আছে। তবে তাঁর বক্তব্য, যেটুকু পরিষেবা দিই তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। আমাদের শক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামাজিক প্রকল্প আর শান্তি। এক সময় যে অযোধ্যা পাহাড় মাওবাদীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল, এখন তা আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। দিদি জঙ্গলমহলে শান্তি এনেছেন। তাঁকে সুরক্ষিত রাখাই আমাদের লক্ষ্য।
অযোধ্যা পাহাড়ের আপার ড্যামের কাছে জনা তিনেক যুবক শসা, মশলামুড়ি, চা বিক্রি করছিলেন। ঢেঁকির কাজ ধান ভাঙা, সাংবাদিকের কাজ খবর সংগ্রহ। তাই শসা দিতে বলে জানতে চাই, ভোটের হাওয়ার কথা। শসার খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে যুবকের উত্তর, হাওয়া টাওয়া বলতে পারব না। তবে আমরা শান্তিতে আছি। এখন সিজিনে প্রচুর পর্যটক আসছে। কামাইও ভালো হচ্ছে। তাই পাহাড়ের পাশাপাশি বাড়িতেও শান্তি। আমরা চাই, এই শান্তিটুকু থাক।