পড়শির ঈর্ষায় অযথা হয়রানি। সন্তানের বিদ্যা নিয়ে চিন্তা। মামলা-মোকদ্দমা এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেমে বাধা। প্রতিকার: একটি ... বিশদ
দক্ষিণ কলকাতা থেকে মেদিনীপুরে ভোটযুদ্ধ লড়তে আসা দলীয় তারকা প্রার্থীর এই পারফরম্যান্সে খুশি তৃণমূলের স্থানীয় নেতা ও কর্মীরা। মেদিনীপুর কেন্দ্রের প্রার্থীর প্রধান এজেন্ট করা হয়েছে নারায়ণগড়ের বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক প্রদ্যোৎ ঘোষকে। দল এবার তাঁকে প্রার্থী না করে অন্য দায়িত্ব দিয়েছে। মেদিনীপুরের শহরের বাসিন্দা প্রদ্যেৎবাবু জানালেন, নানা ধরনের পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা জুন দেবীর আছে। তিনি এবারই প্রথম প্রার্থী হয়েছেন। অনেকে নতুন ভূমিকায় প্রথমে ঠিকমতো মানিয়ে নিয়ে পারেন না। কিন্তু তৃণমূল প্রার্থী গ্ল্যামার জগৎ থেকে এসেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে একেবারে মিশে গিয়েছেন। ভোটে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন তিনি। জুন দেবীও বলছেন, নেত্রী তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আসনটি নেত্রীকে উপহার দেবেন।
তৃণমূল প্রার্থীর প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির সমিত দাস অবশ্য মনে করেন জুনকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা আলোড়ন পড়লেও ভোটের ফলাফলে তার কোনও প্রতিফলন পড়বে না। মেদিনীপুরের মানুষ আগেও চিত্রতারকা প্রার্থীকে দেখেছেন। বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় এখান থেকে লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু ভোটে জেতার পর মানুষ তাঁকে বিশেষ পায়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকেই মানুষ ভোট দেবেন। বিজেপির জয় নিশ্চিত, দাবি তাঁর। সমিতবাবু মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা। প্রার্থী হওয়ার আগে পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের বিজেপি সভাপতি ছিলেন। শহর ও সংলগ্ন এলাকায় বিজেপির জোরদার সংগঠন তাঁর একটা বড় ভরসা।
গত দু’টি বিধানসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর পুরসভা ও সংলগ্ন দু’টি ব্লকের (মেদিনীপুর সদর ও শালবনী) কিছু গ্রামীণ এলাকা নিয়ে গঠিত এই আসনটি থেকে প্রায় ৩০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন মৃগেন মাইতি। তিনি ছিলেন মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা ও কর্মজীবনে সরকারি কর্মী সংগঠনের প্রভাবশালী নেতা। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর রাজনীতিতে যোগ দেন। নির্বাচনী এলাকায় তাঁর যথেষ্ট প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা ছিল। মেদিনীপুর-খড়্গপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান হিসেবে উন্নয়নে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় দফার বিধায়ক থাকার সময় বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন মৃগেনবাবু। ভোট ঘোষণার কিছুদিন আগে তাঁর মৃত্যুতে প্রার্থী বাছাই নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই কেন্দ্রের একাধিক স্থানীয় দাবিদার ছিলেন। স্থানীয় কাউকে প্রার্থী করা হলে গোষ্ঠী লড়াই বাধার আশঙ্কায় সিনেমার পরিচিত মুখকে প্রার্থী করে মাস্টার স্ট্রোক দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার বাসিন্দা হলেও অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার সঙ্গে তৃণমূল প্রার্থীর সম্পর্ক আছে। মহিষাদলের রাজ পরিবারের সঙ্গে রয়েছে তাঁর পারিবারিক যোগসূত্র।
মেদিনীপুর আসনটিতে ‘হাই প্রোফাইল’ প্রার্থী দাঁড় করানো রাজনৈতিকভাবে প্রয়োজন ছিল তৃণমূলের। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে জেলার অন্যান্য বেশ কয়েকটি আসনের মতো এখানেও অনেকটা এগিয়ে এসেছে বিজেপি। মেদিনীপুর বিধানসভা অংশে বিজেপি প্রার্থী তৃণমূলের থেকে প্রায় ১৮ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। গত বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে ২০ হাজারের কিছু বেশি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। লোকসভা ভোটে বিজেপি এখানে প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার ভোট পায়। ভোটপ্রাপ্তির এই হিসেবে অবশ্য গুরুত্ব দিচ্ছে না তৃণমূল। দলের নেতারা বলছেন, লোকসভা ভোটে অন্য ইস্যু ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে উন্নয়নের জোয়ার এনেছেন তাতে এবারও অন্তত ৩০ হাজার ভোটে জিতবে তৃণমূল। পাশের খড়্গপুর সদর বিধানসভা অংশে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি আরও বেশি ভোটে জিতেছিল। কিন্তু কয়েক মাস পরেই উপনির্বাচনে সেখানে বিপুল ভোটে হারে বিজেপি। ভোটযুদ্ধে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী সিপিআইয়ের তরুণ ঘোষ মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা। এই বিধানসভাটি সিপিআইয়ের শক্ত ঘাঁটি ছিল। সিপিআই প্রার্থীর বাবা কামাখ্যা ঘোষ চারবার এখান থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন। গত লোকসভা ভোটের বিচারে বামেদের এখানে বিপুল শক্তিক্ষয় হয়েছে। এই ভোটের প্রচারেও তৃণমূল-বিজেপির থেকে বেশ পিছিয়ে সিপিআই। তবে লোকসভায় বিজেপির দিকে যাওয়া ভোটের বেশ কিছুটা ফিরে পাওয়ার আশা করছে বামেরা। বিশেষত সংখ্যালঘু ভোট ফিরে পাওয়ার আশায় আছে তারা আইএসএফের সৌজন্যে।