পড়শির ঈর্ষায় অযথা হয়রানি। সন্তানের বিদ্যা নিয়ে চিন্তা। মামলা-মোকদ্দমা এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেমে বাধা। প্রতিকার: একটি ... বিশদ
পরক্ষণেই আওয়াজ উঠছে—আর নয় এনআরসি। মোদি-শাহ দূর হটো...দূর হটো...। জোড়াফুল চিহ্নে ভোট দিন...ভোট দিন। চালক বললেন, ‘এলাকাটা নগরবেরা বাজার। বকো বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে।’ তিনি এটাও জানিয়ে রাখলেন—‘এখানে তৃণমূলের প্রার্থী গোপীনাথ দাস। মনে হচ্ছে বেরিয়ে যাবেন। এনআরসি নিয়ে মানুষের যা ক্ষোভ!’
বাজারে মাইকের চার-পাঁচটা চোঙ টাঙিয়ে প্রচার করছেন গোপীনাথবাবু। ছোটখাটো একটা জনসভা। তৃণমূল প্রার্থী বলছেন, ‘বন্ধুগণ, ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণার পর যে নেত্রী আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, বাঙালিকে সাহস জুগিয়েছিলেন তিনি মমতা ব্যানার্জি। তাঁর আদর্শে আমি এখানকার প্রার্থী।’ হাততালির জোরালো আওয়াজ থামতেই ফের শুরু করলেন, ‘আপনারা একটু ভেবে দেখুন, বিজেপি সরকার দুঃশ্চিন্তা ছাড়া আমাদের কিছুইদেয়নি। রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে জোড়াফুল চিহ্নে ভোট দিন।’
বকো কেন্দ্রের চারবারের বিধায়ক গোপীনাথবাবু। হিতেশ্বর শইকিয়া মন্ত্রিসভায় ফরেস্ট সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রীও ছিলেন। ২০১৮ সালে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। বর্তমানে অসম প্রদেশ তৃণমূলের সভাপতি। নগরবেরা বাজারেই তাঁর প্রথম প্রচার। গলায় অসমের ট্র্যাডিশনাল গামছা। জোড়হাতে মানুষের ভোট চাইছেন তিনি। হাঁটতে হাঁটতে গোপীনাথবাবু বলছিলেন, ‘দেখলেন তো কেমন সাড়া পাচ্ছি। দিদিকে গিয়ে বলবেন।’
বাজার এলাকাতেই পার্টি অফিস করেছেন তৃণমূল প্রার্থী। প্রচার সেরে সেখানেই বসেন। এদিনও তাই করলেন। অফিসে টাঙানো তৃণমূলের পতাকা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশাল ছবি। ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে জোড়াফুলের ঝাণ্ডা-ব্যানার। চা’য়ের কাপে চুমুক দিয়ে প্রশ্নটা করেই ফেললাম—হঠাৎ কেন তৃণমূল করতে গেলেন? ‘নিষ্ঠার সঙ্গে মমতাদি’র আন্দোলন আমাকে আকৃষ্ট করেছে। আমরা ১৫টি আসনে লড়াই করছি। হাইলাকান্দি, সোনাই, গোলকগঞ্জ, বিলাসিপারা পশ্চিম, অভয়াপুরী উত্তর, গোয়ালপাড়া পূর্ব ও পশ্চিম, জলেশ্বর, জানিয়া, সারুক্ষেত্রী, ছেঙ্গা, বকো, নলবাড়ি, যমুনামুখ এবং লামডিং। এর মধ্যে সাত-আটটা সিটে জোর ফাইট হবে। তা নিয়ে বিজেপি খুব চাপে।’—একটানা বলে থামলেন গোপীনাথবাবু।
অসমের মূলত বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাতেই প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। সেগুলির মধ্যে বিলাসিপাড়া পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র অন্যতম। প্রার্থী আব্দুর রেজ্জাক শেখ দু’বার জেলা পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী এখনও জেলা পরিষদের সদস্য। জলেশ্বরের তৃণমূল প্রার্থী খুরশিদ মির্জা আশিকুর রহমান। তাঁর বাবা ওই কেন্দ্র থেকে ছ’ বার নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রচারে বেশ ভালই সাড়া পাচ্ছেন খুরশিদ। জানিয়ার প্রার্থী আব্দুল জলিল তালুকদারও পরিচিত মুখ। জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন তিনি।
বকো সহ এই তিনটি কেন্দ্র ছাড়াও তৃণমূল টক্কর দিচ্ছে শিলচর থেকে ১২ কিমি দূরে সোনাই কেন্দ্রে। প্রার্থী ডঃ এম শান্তি সিং ‘খেলা হবে’ স্লোগান তুলে প্রচার জমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমি এখানকার ভূমিপুত্র। এনআরসি নিয়ে মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভই ইভিএমে প্রভাব ফেলবে।’ জয়ের ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত তিনি। আশাবাদী গোয়ালপাড়া পশ্চিমের প্রার্থী নিজামুদ্দিনও। বলছিলেন, ‘১৯ লক্ষ বাঙালির নাম বাদ পড়ার পর দিল্লিতে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছিলেন মমতাদি। আমরা তাঁর ছবি নিয়ে প্রচারে যাচ্ছি। মানুষের সাড়া পাচ্ছি।’ তবে শতাব্দী-দেব সহ বাংলার কয়েকজন তারকাকে প্রচারে চাইছেন তাঁরা। জনসভায় যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা।
গোপীনাথ বা শান্তি সিংয়ের মতো ২০১১ সালে অসমে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন দীপন পাঠক। জিতে ছিলেন তিনি। অসমে সেই প্রথম জোড়াফুল ফোটা। এবার এনআরসি’র কারণে তৃণমূল কতটা বাড়তি সুবিধা পায়, সেটাই এখন দেখার।