সুকান্ত বসু ও রাহুল চক্রবর্তী, কলকাতা: ভোর চারটেয় মঙ্গলারতি দিয়ে পুজোর শুরু। তারপর নিত্যপূজা, ভোগ নিবেদন, সন্ধ্যা আরতি, শয়ন। ফলে দিনভর প্রচুর জবার মালা প্রয়োজন হয় কালীঘাট মন্দিরে। কিন্তু লকডাউনে দু’টি মাত্র মালাও জোগাড় করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান কালীঘাট মন্দিরের পূজারিরা। করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই কালীঘাট মন্দিরে সাধারণের প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। তবে প্রতিদিনের পুজো চলছে নিয়মরীতি মেনেই। কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী পুজোর উপকরণে বিস্তর ফারাক হয়েছে বলে জানালেন মন্দিরে পূজোর সঙ্গে যুক্ত সকলে। তাঁদের বক্তব্য, ফুল পাওয়া যাচ্ছে না। ১০৮টি জবার মালা জোগাড় করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে। মন্দির কমিটির সহ সভাপতি বাবলু হালদার বলেন, ফুল পেতে বিরাট সমস্যা হচ্ছে। ফলে মায়ের মূর্তি সাজান, অঞ্জলি দেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মন্দিরের পূজারীদের বক্তব্য, আগে ৩০-৪০টি মালা দিয়ে দেবীমূর্তি সাজান হতো। এখন সেখানে কষ্টেশিষ্টে জোগাড় হচ্ছে দু-তিনটি মালা। মন্দিরের পূজারী অলোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আগে মন্দিরে শয়ন পর্ব হতো রাত সাড়ে দশটা-এগারোটা নাগাদ। এখন সেটা সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে সেরে ফেলতে বাধ্য হতে হচ্ছে। প্রায় ৪০ বছর ধরে মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত বাবলু হালদার। তাঁর বক্তব্য, জরুরি অবস্থা, হরতাল, বন্ধ— কোনও ক্ষেত্রেই মন্দির চত্বরের বর্তমানের এই শুনশান অবস্থা দেখিনি। আজ ভক্ত সমাগম নেই, দোকানপাট বন্ধ, পাণ্ডারা নেই। একটি অচেনা ছবি। তবে কলকাতা সহ শহরতলি জুড়ে যে ফুলের তীব্র আকাল দেখা দিয়েছে, তা মানছেন ব্যবসায়ীরাও। একমুঠো খুচরো ফুলের দাম ১৫-২০ টাকা নেওয়াটাকেই এখন রেওয়াজ করে ফেলেছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, লকডাউনে পাইকারি বাজারে ফুল ঠিকভাবে আসছে না। যেটুকু ফুল পাওয়া যাচ্ছে, আমাদেরকে তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের বেশি দামে ফুল বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিন বরানগর, আলমবাজার, চিৎপুর, কাশীপুর, বাগবাজার, শ্যামপুকুর, শোভাবাজার প্রভৃতি এলাকার প্রমাণ সাইজের একটি গাঁদার মালা বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। কোথাও কোথাও আবার ৩৫ টাকাতেও। আর রজনী দিয়ে গাদার ছোট মালার দাম ছিল দশ টাকা পিস। ১৫-২০ টাকায় বেলপাতা, তুলসী, দুর্বার সঙ্গে যে ফুল দেওয়া হচ্ছিল, তা অতি সামান্য। ফলে কোথাও কোথাও ক্রেতাদের সঙ্গে ফুল ব্যবসায়ীদের তর্ক-বিতর্কও হয়।-ফাইল চিত্র