কর্মপ্রার্থীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। নিকটস্থানীয় কারও প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। পুরোনো কোনও বন্ধুর ... বিশদ
১৯৮৪ সাল থেকে দলের রজতজয়ন্তী বর্ষ থেকে কলকাতায় নান্দীকার ‘জাতীয় নাট্যমেলা’ শুরু করে । আমি তখন নান্দীকারের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। সেই সুবাদে ভারতবর্ষের বিখ্যাত সব নাট্যব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে দেখার, তাঁদের সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ আমার হয়। সেই জন্যই ১৯৮৫ সালে সুযোগ হয়ে গেল ডাঃ শ্রীরাম লাগুর সঙ্গে আলাপের। তিনি তখন জনপ্রিয় অভিনেতা। সবাই তাঁকে দেখার জন্য ভিড় করছে। কিন্তু তিনি স্বাভাবিক। সেই বছর তাঁর অভিনীত ‘কন্যাদান’ নাটক নাট্যমেলায় অভিনীত হবে। অভিনেতারা সবাই এসে গিয়েছেন অ্যাকাডেমিতে। কিন্তু তাদের নাটকের মঞ্চ সামগ্রী, আহার্য ইত্যাদি সব ট্রেনের লাগেজে বুক করা, আর সেই ট্রেন তখনও কলকাতায় এসে পৌঁছায়নি। কী করব ভেবে আমরা তো খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। কী করে নাটক হবে? এদিকে হল তো হাউসফুল! আমরা যখন এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করছি তখন কিন্তু ডাঃ লাগুর মধ্যে কোনও উদ্বেগ নেই। তিনি খুব ঠান্ডা মাথায় কতগুলি জিনিস আমাদের থেকে চাইলেন। কিছু আসবাবপত্র আর কিছু মঞ্চ সামগ্রী। আমরা বেরিয়ে পড়লাম সব জোগাড় করতে এবং প্রায় সাড়ে পাঁচটার মধ্যে সব সাজিয়ে দেওয়া হলো। তিনি বললেন ঠিক আছে, হয়ে যাবে। আমার উপর দায়িত্ব ছিল স্টেজ ম্যানেজারের। নাটক শুরুর আগে তখন দেখি ডাঃ লাগু, সদাশিব আম্রপুরকর সহ অন্য অভিনেতারা গ্রিনরুমে কথা বলছেন। আমি তখন , ফার্স্ট বেল দেব বলে সবাইকে ‘সাইলেন্স’ বলে বলে বেল দিলাম। ডাঃ লাগু আমায় ডেকে বললেন, ‘কেন তুমি সাইলেন্স বলছ? আমরা তো বলব বলেই এসেছি, আর দর্শকরাও তো শুনবেন বলেই টিকিট কেটেছেন! তবে কেন ‘সাইলেন্স’?’ ওঁর এই কথায় আমি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। আমার সেই অবস্থা দেখে উনি হো হো করে হেসে উঠলেন আর বললেন, ‘না না, তুমি ঠিক করেছ।’ তার একটু আগেই যে নাটক নিয়ে অত সমস্যা হয়েছে কে বলবে! মঞ্চে উঠলেন এবং অভিনয় করে দর্শকমন্ডলীকে মুগ্ধ করে দিলেন। দর্শকরা জানতেও পারলেন না নাটকের সেট, পোষাক, রিকুইজিশন কিছুই এসে পৌঁছয়নি। এই হলেন ডাঃ লাগু, সত্যিকারের একজন পেশাদার অভিনেতা।
মানুষ হিসাবেও তিনি ছিলেন সৎ, উদার এবং বন্ধু বৎসল। পরের বছর ওঁর ‘আত্মকথা’ নাটকটি নাট্যমেলায় অভিনয় হওয়ার কথা, কিন্তু উনি ট্রেনের টিকিট পাননি। উনি নিজের পয়সায় বিমানে এলেন এবং নান্দীকার থেকে কিছুতেই সেই বিমানের ভাড়া নিলেন না। বললেন এই উৎসব কি শুধু নান্দীকারের? আমাদের নয়? এইরকম মানুষ ক’জন পাওয়া যায়? আজ তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে একজন সামান্য নাট্যকর্মী হিসেবে নিজেকে ধন্য মনে করছি।