সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
ইতিহাস বিখ্যাত মোগল সম্রাট শাহজাহান ও পুত্র ঔরঙ্গজেবের এই কাহিনী সবারই জানা। সম্প্রতি নাটকটি তৌর্যাত্রিক নতুনরূপে মঞ্চস্থ করল অ্যাকাডেমি মঞ্চে। নাটকে ঔরঙ্গজেবের আচরণ দেখে বন্দি নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ সাজাহান যখন অশ্রুসিক্ত নয়নে চিৎকার করে বলেন, কোনও পিতা যেন তার সন্তানকে বুকে জড়িয়ে আগলে না রাখেন, কিংবা সন্তানের অধঃপতন দেখে নিজের চোখ উপড়ে ফেলতে না চান তখন দর্শকাসনে বসে আজকের অসহায় পিতামাতার কথাই মনে পড়ে। তাই এই কাহিনী এখনও বাস্তব ও প্রাসঙ্গিক।
অসীম ঔদ্ধত্যের অধিকারী সম্রাট নিজের প্রজাবৎসল পিতাকে দুর্গের কারাগারে বন্দি করেই ক্ষান্ত থাকেনি, ছলনা করে ভাই মুরাদকে বন্দি করে, চক্রান্ত করে দারাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় এবং সুজাকে ভয়াবহ পরিণতির মুখে ঠেলে দেয়। এ সব কিছুই তিনি আল্লার ইচ্ছাতেই করেন! এমনটাই বিশ্বাস ঔরঙ্গজেবের। তাই যুদ্ধ, রাজ্যলাভ, সিংহাসন দখল করার পরেও শুধুমাত্র বিবেকের তাড়নাতেই ঔরঙ্গজেব পিতা, ভগিনীর কাছে নতজানু হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করে।
সাজাহানের চার পুত্রের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী, দুর্নীতিগ্রস্ত, অসৎ পুত্র ছিল ঔরঙ্গজেব। পুত্রের ছলনা, অন্য পুত্রদের সঙ্গে প্রতারণার সাক্ষী থাকা সত্ত্বেও দয়াপ্রবণ স্নেহময় পিতা কিন্তু ঔরঙ্গজেবকে ক্ষমা করে দেন এবং জাহানারাকেও অনুরোধ করেন ক্ষমা করতে। দারার কন্যা অবশ্য তাকে অভিশাপ দেয়।
মোগল সাম্রজ্যের পতনের মূল কারণ যে সাজাহানের রাজত্বকাল থেকেই প্রকট আকার ধারণ করে সে কথা সর্বজনবিদিত। তবে তা পরিণতিলাভ করে ঔরঙ্গজেবের সময়েই। নাটকে ঔরঙ্গজেবই মূল নায়ক। অসাধু, দুর্নীতিপরায়ণ, ক্ষমতালোভী ঔরঙ্গজেবের আস্ফালন, নিষ্ঠুরতা যথার্থভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি অর্চন চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সাজাহানের চরিত্রে তরুণ তপন মিত্র এক কথায় অনবদ্য। ছোট ছোট দৃশ্যে তাঁর ম্যানারিজম, পুত্রের জন্য হাহুতাশ করার অভিব্যক্তি দীর্ঘদিন মনে থাকবে। অন্যান্য চরিত্রগুলোর মধ্যে যশোবন্ত সিংহের ভূমিকায় স্বপন চক্রবর্তী, জাহানারার চরিত্রে সুদেষ্ণা চক্রবর্তী, দারার ভূমিকায় ঋত্বিক ভট্টাচার্য বেশ স্বচ্ছন্দ। সামঞ্জস্যপূর্ণ, যথোপযুক্ত গানের ব্যবহার নাটকটিকে এক আলাদা মাত্রা দেয়। তবে আলোর প্রয়োগে সময়ের দিকে একটু নজর দেওয়া প্রয়োজন ছিল। ঐতিহাসিক নাটকে মঞ্চসজ্জার চাকচিক্য থাকলে রাজদরবার, রাজসভাটি আরও আকর্ষণীয় লাগে, সেদিক থেকেও একটু নিষ্প্রাণ মনে হয়েছে। এই ধরনের ঐতিহাসিক নাটকে মেকআপ এবং পোশাকও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সেদিকে এঁদের আরও নজর দেওয়া উচিত। তবে সবমিলিয়ে তরুণ তপন মিত্র পরিচালিত নাটকটি দেখতে মন্দ লাগে না।