উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
গত ২৯ এপ্রিল কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট দুই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ পর্ব মিটেছে। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে ৮৩.৭৭ শতাংশ ও রানাঘাট কেন্দ্রে ৮৪.১৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। তারপর থেকে সমস্ত রাজনৈতিক দলই এলাকা ধরে ধরে পর্যালোচনা চালাচ্ছে। কোন দল কোথায় কতটা ভোট টানতে পারল বা কাদের ভোট কতটা ধস নামল তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
কৃষ্ণনগর, রানাঘাট দুই কেন্দ্রেই ভোটের হাল হকিকতের খবর নিয়ে বাম নেতারা স্বীকার করেছেন, এবারের নির্বাচনে তাদের নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্কের মধ্যে ‘নির্গমন’ ও ‘আগমন’ ঘটেছে। অর্থাৎ কিছু ভোট যেমন অন্য দলে চলে গিয়েছে, তেমনই কিছু ভোট অন্য দল থেকে এসেছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বামেরা নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখতে পারেনি। সংখ্যালঘুদের ভোট গিয়েছে ঘাসফুলের পালে। যদিও সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, আমাদের সংখ্যালঘু ভোট অটুট থাকবে। ভোট অন্য কোথাও সুইং হবে না।
গত কয়েকবছর ধরেই কংগ্রেসের নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্কেও ক্রমাগত ধস নেমেছে। নদীয়া জেলায় সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল হয়েছে পড়েছে রাহুল গান্ধীর দল। সাংগঠনিক দুর্বলতায় এবারের নির্বাচনে দুই কেন্দ্রে সেভাবে প্রচারেও নামতে পারেননি কংগ্রেস প্রার্থীরা। হেভিওয়েট নেতারা কেউ প্রচারেও আসেননি। আবার জেলা নেতারাও এই ভোটে ঘাম ঝরাননি। ফলে নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্কে ব্যাপক হারে ধস নেমেছে। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, কংগ্রেসে তাদের নিজস্ব সংখ্যালঘু ভোট ধরে রাখতে পারেনি। সেই ভোট সুইং করে গিয়েছে শাসক দলের পক্ষে। যদিও কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক নওশাদ আলি বলেন, দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে ঠিকই। তবে আমাদের সংখ্যালঘু ভোট অন্য প্রতীকে যাবে না।
তৃণমূলের জেলা নেতারা দাবি করছেন, এবারের নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলেছে। মেরুকরণের রাজনীতি ওরাই আমদানি করেছে। এর জেরে সমাজের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর জেলার বেশ কিছু জায়গায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এসে বিজেপি নেতারা সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন। এর জেরে সংখ্যালঘু মানুষেরা আতঙ্কিত হয়েছেন। তার জেরেই তাঁরা আস্থা রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরই। বাম ও কংগ্রেস সমর্থিত যেসব সংখ্যালঘু মানুষ এতদিন ওই দুই দলকে ভোট দিয়ে এসেছেন, তাঁরা নিজেদেরকে অসুরক্ষিত ভেবেছেন। তাই দু’হাত উজাড় করে মমতাদিকে সমর্থন করেছেন।
কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের মধ্যে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত চাপড়া, কালীগঞ্জ ও পলাশীপাড়া বিধানসভা। চাপড়ায় ৬৫ শতাংশ, কালীগঞ্জে ৬০ শতাংশ ও পলাশীপাড়ায় ৬০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট। ওই তিন বিধানসভায় বাম ও কংগ্রেসের নিজস্ব সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে। এবারের নির্বাচনে বাম ও কংগ্রেসের সংখ্যালঘু ভোটে সিঁধ কেটেছে শাসক দল। রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বাম ও কংগ্রেসের ভোটে থাবা বসিয়েছে তৃণমূল।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, বাম ও কংগ্রেস কেউই নিজেদের ভোট ধরে রাখতে পারবে না। ওদের সংখ্যালঘু ভোট সুইং হয়েছে আমাদের পক্ষে। এর পাশাপাশি ওদের সংখ্যাগুরু ভোটও আমরা পাব। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প কেউ নেই। যারা অন্য রাজ্য থেকে লোক নিয়ে এসে এখানে গুন্ডামি চালায়, তাদের ভোট দেয়নি এ জেলার মানুষ।
বিজেপির নদীয়া (উত্তর) জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার বলেন, বামেদের আর প্রাসঙ্গিকতা নেই। বামেদের সংখ্যাগুরু ভোট যেমন আমাদের পালে আসবে, তেমনই সংখ্যালঘু ভোটও পাব। তৃণমূল সংখ্যালঘু ভোট একা পাবে, এটা যদি ভেবে থাকেন ওদের নেতারা, তাহলে ভুল করছেন। সংখ্যালঘুরা এখন নরেন্দ্র মোদিকে সমর্থন করছেন। কংগ্রেসের ভোটও আমাদের পক্ষে আসবে। কারণ, ওদের প্রার্থীদের এবার প্রচারই ছিল না। ২৩ মে তৃণমূলের সব হিসেব নিকেশ উল্টে যাবে।