নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পরিসংখ্যান বলছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রভাব বয়স্ক মানুষদের উপর সবচেয়ে বেশি। এই মহামারীর প্রকোপে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বিচার করলে এগিয়ে প্রবীণরাই। কার্যত বলা যেতে পারে এই মারণ ভাইরাসের মূল টার্গেট ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা। তাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসায় সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। বিষয়টি মাথায় রেখেই অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে শহরের বৃদ্ধাশ্রমগুলি। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আগাম সমস্ত সতর্কতা মেনে চলছে বৃদ্ধাশ্রমগুলি। দেশে লকডাউন জারি হওয়ার আগে থেকেই বৃদ্ধাশ্রমগুলিতে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বেশিরভাগ কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি প্রত্যেক প্রবীণের ঘরে মজুত রাখা হয়েছে স্যানিটাইজার, হ্যান্ড ওয়াশ এবং মাস্ক। হাতিবাগান এলাকার ‘রামকৃষ্ণ ওল্ড এজ হোম’-এর ম্যানেজার প্রবীরকুমার পাল জানিয়েছেন, দেশে লকডাউন হওয়ার আগে থেকেই হোমের বয়স্কদের প্রায় ঘরবন্দি করে দেওয়া হয়েছে। সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় তাঁদের সঙ্গে কোনও বহিরাগতকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকী, পরিবারের সদস্যদেরও দেখা-সাক্ষাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। প্রবীরবাবুর মতে, বৃদ্ধাশ্রমের বেশিরভাগ আবাসিকই স্বচ্ছল পরিবারের। তাই পরিবারের কোনও সদস্য ইদানীং বিদেশ ভ্রমণ করে তাঁদের সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি থেকেই যায়। সেখান থেকে এই আবাসিকদের সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। লকডাউন চলাকালীন বৃদ্ধাশ্রমের মূল দরজা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই সময় পরিবারের সদস্যদের টেলিফোনে যোগাযোগ রাখার আর্জি জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, বৃদ্ধাশ্রমের অধিকাংশ কর্মীকে লকডাউন চলাকালীন সেখানেই থাকতে বলা হয়েছে। কর্মীদের মারফত কোনওভাবে যাতে জীবাণু বৃদ্ধাশ্রমে প্রবেশ করতে না পারে, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেশিরভাগ বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ। তবে অনেক জায়গাতেই কর্মীদের থাকা-খাওয়ার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। যাঁরা সেই সুযোগ পাচ্ছেন না, তাঁরা প্রতিদিনই আসছেন, তবে বাইরে থেকে আসার পর পোশাক বদলে বৃদ্ধাশ্রমের নিজস্ব পোশাক পরতে হচ্ছে।
ঠাকুরপুকুর এলাকার ‘গীতারানি’ বৃদ্ধাশ্রমের অধিকর্তা মালা সেন জানিয়েছেন, পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বয়স্ক আবাসিকদের জন্য বিশেষ মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিদিন এই আবাসিকদের একবার করে চেক-আপ করছেন বৃদ্ধাশ্রমের চিকিৎসকরা। তাঁদের নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের দিকেও নজর রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আবাসিকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর ও সুষম আহার দেওয়া হচ্ছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে বৃদ্ধাশ্রমের তরফে যথোপযুক্ত আপ্যায়ন পেয়ে খুশি ষাটোর্ধ্বরা। বাইরের জগতের সঙ্গে কয়েকদিনের জন্য যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও আক্ষেপ নেই তাঁদের। উপরন্তু, নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করেই সময় কাটাচ্ছেন তাঁরা। তবে এই ভাইরাসকে কোনও ছাড় দিতে নারাজ প্রবীণরা। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই চলছে আড্ডা।