ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
মাতৃযানের চালক ভাদু শেখ বলেন, শিড়শি গ্রাম পঞ্চায়েতের নেংড়াপাড়া থেকে প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কল পাই। গ্রামে যাওয়ার সময় রাস্তায় আচমকা একটি ছাগল চলে আসায় ধাক্কা লাগে। এতে ছাগলটি সামান্য জখম হয়। আমি গাড়ি না থামিয়ে প্রসূতিকে বাড়ি থেকে তুলে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হই। গ্রাম থেকে বের হওয়ার মুখে ওই দম্পতি আমার গাড়ি আটকে দেয়। আমার কাছে জরিমানা দাবি করে। সেসময় কাছে টাকা না থাকয় পরে দেব বলে জানাই। কিন্তু তারা গাড়ি আটকে রেখে চাবি খুলে নেয়। বারবার অনুরোধ করেও কোনও কাজ হয়নি। এদিকে গাড়ির ভিতরে প্রসূতি তখন যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। এভাবে আধ ঘণ্টা আটকে থাকার পর বাসিন্দাদের হস্তক্ষেপে তারা গাড়ি ছাড়তে রাজি হয়। আমি প্রসূতির অবস্থা দেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছই। তবে রাস্তায় প্রসূতি সন্তান প্রসব করলেও সদ্যোজাতটিকে বাঁচানো গেল না। জীবনে আমার এই প্রথম এমন নির্মম অভিজ্ঞতা হল।
প্রসূতির স্বামী এন্তাজুল ইসলাম বলেন, নেংড়াপাড়া গ্রামে থেকে বেরোনোর মুখে আমাদের অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয় দু’জন। তারা মাতৃযানের চাবি খুলে নেয়। আমি হাসপাতালে আগে স্ত্রীকে ভর্তি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলে হাত পা ধরলেও তারা ছাড়েনি। মাতৃযানেই স্ত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। গাড়িতে থাকা আশাকর্মী প্রাথমিক সেবা করেন। আমার পুত্র সন্তান হলেও হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাঁচাতে পারলাম না। আর একটু হলে স্ত্রীর মৃত্যু হয়ে যেত। আমি এনিয়ে থানায় অভিযোগ করেছি। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
হরিরামপুর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক, সৌভিক আলম বলেন অ্যাম্বুলেন্স আটকানোর ফলে জটিলতা তৈরি হয়েছে। জন্মের সময় শ্বাস, প্রশ্বাস জনিত সমস্যায় সদ্যোজাতের মৃত্যু হওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। প্রসূতি হাসপাতালে আসার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়। ডাক্তার আমাকে রিপোর্ট করে জানিয়েছে। ওই প্রসূতির অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। বেশি দেরি হলে প্রসূতির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত। অ্যাম্বুলেন্স আটকে অভিযুক্তরা বড় অপরাধ করেছে। যা কখনই কাম্য নয়। হরিরামপুর থানার আইসি সঞ্জীব বিশ্বাস বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে আটকে রাখার ফলে সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছাগল মালিকের এমন অমানবিক ও নির্মম আচরণে জেলাজুড়ে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। সকলেই এই ঘটনায় ধিক্কার জানিয়েছেন। যখন অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে একজন মা প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তখন জখম ছাগলের ক্ষতিপূরণ চেয়ে আটকে রাখা এক চূড়ান্ত অমানবিকতার নিদর্শন। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। তাদের এই ঘৃণ্য আচরণের কারণে একটি শিশু পৃথিবীর আলো দেখতে পেল না।