কাজকর্ম, বিদ্যাশিক্ষায় দিনটি শুভ। বৃত্তিগত প্রশিক্ষণে সাফল্যের সুবাদে নতুন কর্মপ্রাপ্তির সম্ভাবনা। দেহে আঘাত লাগতে পারে। ... বিশদ
কিন্তু হঠাৎ করে শ্বশুর-শাশুড়িকে আর্থিকভাবে ভরণ-পোষণের প্রশ্ন এল কীভাবে? বয়স্ক বাবা-মা বা সিনিয়র সিটিজেনদের ভরণ-পোষণের অধিকার নিশ্চিত করতে ২০০৭ সালে পাশ হয় ‘দ্য মেন্টেইন্যান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অব পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্ট’। আইন অনুযায়ী, বাধ্যতামূলকভাবে বয়স্ক বাবা-মায়ের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান ও চিকিৎসার দায়িত্ব সন্তানের। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, সন্তানের অবর্তমানে সেই দায়িত্ব কি বউমার উপর বর্তায়?
এই প্রশ্ন তুলেই বয়স্ক ব্যক্তিদের ভরণ-পোষণ সংক্রন্ত মেন্টেইন্যান্স ট্রাইব্যুনালের একটি নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নদীয়ার তেহট্টের বাসিন্দা শঙ্খমালা বিশ্বাস (নাম পরিবর্তিত)। মামলার বয়ানে তাঁর অভিযোগ, ২০১০ সালে তাঁর স্বামী সুমন বিশ্বাসের (নাম পরিবর্তিত) নামে একটি সম্পত্তি দানপত্র করেছিলেন শ্বশুর চন্দন বিশ্বাস (নাম পরিবর্তিত)। এরপর সব ঠিকঠাকই চলছিল। মাঝে সম্পর্কে চিড় ধরে। মামলাকারীর অভিযোগ, ২০২০ সালে তেহট্টের মহকুমা শাসকের কাছে ‘দ্য মেন্টেইন্যান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অব পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্ট ২০০৭’-এর আওতায় ভরণ-পোষণের আবেদন জানান শ্বশুর। কিন্তু ওই বছরই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মামলাকারীর স্বামীর মৃত্যু হয়। তার আগেই শ্বশুর মশাইয়ের দানপত্র করা ওই সম্পত্তিটি শঙ্খমালার নামে মিউটেশন হয়ে গিয়েছিল।
ইতিমধ্যে, ২০২২ সালে শ্বশুরের দায়ের করা ভরণ-পোষণ সংক্রান্ত আবেদনের নিষ্পত্তি করে মেন্টেইন্যান্স ট্রাইব্যুনাল জানায়, বউমাকেই শ্বশুর-শাশুড়ির ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিতে হবে। সেই বাবদ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী শঙ্খমালার বেতন অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতি মাসে ভরণ-পোষণ বাবদ ২ হাজার টাকা শ্বশুরকে দেওয়ার নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি দানপত্র করা সম্পত্তিটি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ট্রাইব্যুনালের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শঙ্খমালা। তাঁর অভিযোগ ছিল, ট্রাইব্যুনালের এই নির্দেশ ভরণ-পোষণ সংক্রান্ত আইনের বিরোধী। কারণ ওই আইনে সন্তানের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তাতে বউমার উল্লেখ নেই। রাজ্যের তরফে এই বক্তব্যের বিরোধিতা করা হয়নি। উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি শম্পা সরকার ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি করে জানান, মেন্টেইন্যান্স আইন অনুযায়ী নিজের ছেলে, মেয়ে (পালিত বা পালিতা হলেও) এবং নাতি-নাতনিকে ‘সন্তান’ হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে ভরণ-পোষণের দায়িত্বও তাদেরই উপর বর্তাবে। বউমা যেহেতু সেই তালিকায় নেই, তাই শ্বশুর কিংবা শাশুড়ির ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তাঁর নয়। তবে মানবিক দিক থেকে ভবিষ্যতে এই আইন পরিবর্তন সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে মামলাটির নিষ্পত্তি আপাতত করেনি হাইকোর্ট।