দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: ‘ওরা যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে...’। এমনই আশঙ্কা ছিল হীরক রাজার। আর সেই শঙ্কার দোলাচলে হীরক রাজার দেশে উদয়ন পণ্ডিতের পাঠশালা একেবারে বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। হীরক রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রগুপ্তি আউড়ে দিয়েছিলেন, ‘লেখাপড়া করে যে, অনাহারে মরে সে।’ সত্যজিৎ রায়ের এই কালজয়ী সিনেমার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠল শিক্ষামন্ত্রকের সাম্প্রতিক রিপোর্টে। তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সরকারি, সরকার পোষিত, বেসরকারি—সব মিলিয়ে একবছরের মধ্যে গোটা দেশে ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার স্কুলের। এই পরিসংখ্যানে চোখ কপালে উঠে গিয়েছে শিক্ষা বিশেষজ্ঞ মহলের। কিন্তু অভিযোগ, এরপরও হুঁশ ফেরেনি কেন্দ্রের মোদি সরকারের। কারণ, গোটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক শিক্ষামন্ত্রক।
কী রয়েছে বিস্ফোরক ওই রিপোর্টে? বলা হয়েছে, সরকারি বিদ্যালয়, সরকারের আনুকূল্যে চলা স্কুল, বেসরকারি এবং অন্যান্য স্কুলের সম্মিলিত সংখ্যা ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ছিল মোট ১৫ লক্ষ ৯ হাজার ১৩৬। অথচ ২০২১-২২ অর্থবর্ষে সেই সংখ্যা কমে হয়েছে ১৪ লক্ষ ৮৯ হাজার ১১৫টি। অর্থাৎ, এক বছরে স্কুলের সংখ্যা কমেছে ২০ হাজার ২১টি। এর মধ্যে সরকারি স্কুলের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৬৩টি। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে দেশে নথিভুক্ত সরকারি স্কুলের সংখ্যা ছিল ১০ লক্ষ ৩২ হাজার ৪৯টি। অথচ ২০২১-২২ আর্থিক বছরে ওই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১০ লক্ষ ২২ হাজার ৩৮৬টি।
সংসদে এই সংক্রান্ত একটি খতিয়ানও পেশ করেছে শিক্ষামন্ত্রক। তারা জানিয়েছে, ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস ব্যবস্থার মাধ্যমেই যাবতীয় তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। সেইমতোই এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এক্ষেত্রে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির অবস্থা তুলনায় সঙ্গীন। অসম, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের মতো ডাবল ইঞ্জিন রাজ্য তো আছেই। কিন্তু নথিভুক্ত সরকারি স্কুল বন্ধে বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে ছাপিয়ে গিয়েছে সম্ভবত মধ্যপ্রদেশ। উল্লিখিত এক বছর সময়ে মধ্যপ্রদেশে নথিভুক্ত সরকারি স্কুলের সংখ্যা কমেছে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার।
তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলছে, কোন রাজ্যে কত স্কুল বন্ধ হচ্ছে, তার হিসেব দাখিল করলেই কেন্দ্রের দায় ফুরিয়ে যায় না। কারণ, তারাই জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি করছে, রাজ্যগুলিকে অনুদান পাঠাচ্ছে, সেই অনুদান ঠিকমতো খরচ হচ্ছে কি না, তা তদারক করছে। তাই শিক্ষার অধিকার ছেলেমেয়েরা বাস্তবে অর্জন করছে কি না, সে ব্যাপারে খোঁজখবর রাখাটাও কেন্দ্রের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। মিড ডে মিল, সর্বশিক্ষা মিশনের মতো একাধিক প্রকল্পে বহু রাজ্যই নিজেদের কোষাগার থেকে ভর্তুকি দেয়। কিন্তু প্রচারের সময় সব কৃতিত্ব দিতে হয় মোদি সরকারকে। কাজেই যদি প্রশ্ন যদি ওঠে, ২০ হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রের হুঁশ নেই কেন, তা কি অমূলক!