রূপাঞ্জনা দত্ত, লন্ডন: ঘটনাস্থল কলকাতা থেকে দূরত্ব প্রায় কয়েক হাজার মাইল। কিন্তু, আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে শামিল ব্রিটেনের প্রবাসী বাঙালিরাও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় এমনই এক শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের সাক্ষী থাকল লন্ডন, বার্মিংহাম, মিল্টন কেইনস, গ্লাসগো সহ ব্রিটেনের ১৬টি জায়গা। নারী, পুরুষ নির্বিশেষে এই জমায়েতে ছিলেন বহু চিকিৎসক, প্রচুর বাঙালি।
মধ্য লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কোয়ারে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে জড়ো হয়েছিলেন শ’দুয়েক প্রতিবাদী। তাঁদের হাতে ছিল মোমবাতি, প্ল্যাকার্ড, ভারতের জাতীয় পতাকা। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল চারিদিক। ন্যায়বিচারের দাবিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে, সাদা গোলাপ দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। গাওয়া হয় জাতীয় সঙ্গীত। ডাঃ দীপ্তি জৈন ও অন্যান্যদের তরফে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। ডাঃ জৈনের উদ্যোগেই ‘মেডিকস উইমেন চ্যারিটি অর্গানাইজেশন’ এই ঘটনার বিষয়ে ডিজিটালি প্রতিবাদ সংগ্রহ করছে। এরপর সবার প্রতিবাদের স্বর পৌঁছে দেওয়া হবে ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, হাইকমিশন ও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
বার্মিহামে বিক্ষোভের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল ভিক্টোরিয়া স্কোয়ারকে। সংগঠক সোহিনী বিশ্বাস আর জি করের ঘটনায় ভারতজুড়ে প্রতিবাদের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, লড়াই এখন শুধু একজন মহিলার খুন ও ধর্ষণের উপরই সীমাবদ্ধ নেই। এই লড়াই এখন গোটা মহিলা সমাজের। মিল্টন কেইনস-এ ন্যায়বিচারের দাবিতে স্টেশনের বাইরে ৬০ জনের জমায়েতে ছিল শিশুরাও।
অপরদিকে, গ্লাসগোর জর্জ স্কোয়ারের জমায়েতে মৌন প্রতিবাদে কারও হাতে ছিল ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’ প্ল্যাকার্ড। কারও প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘সেফ ওয়ার্কপ্লেসেস, কনফিডেন্ট উইমেন।’ কলকাতার ঘটনায় তাঁরা যে কতটা বিচলিত, তা বোঝা যাচ্ছিল প্রত্যেকের শরীরীভাষায়, বক্তব্যে। তাঁদের আশা, ন্যায়বিচার পাবেন কলকাতার ‘অভয়া’। ডাঃ শান্তনু আচার্য জানালেন, পাঁচ হাজার মাইল দূরে থেকেও এই ঘটনা তাঁদের নাড়া দিয়েছে। সংগঠক সুকন্যা যোগ করেন, ‘বিবেকের ডাকা সাড়া দিয়েই সবাই এখানে জড়ো হয়েছেন।’ প্রতিবাদীদের ভিড়ে ছিলেন এক বছর আগে গ্লাসগোয় আসা ডাঃ অনামিকাও। তিনি জুনিয়র ডাক্তারদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। মধুমিতা বলেন, ‘গত পাঁচ, দশ বছরে ধর্ষণের ঘটনা খুব বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু, ভারতের আইন ও বিচারবিভাগের উপরে আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।’ তাঁর আশা, এক্ষেত্রেও সুবিচার মিলবে। মধুমিতার সুরেই প্রবাসী বাঙালি অর্ণব যোগ করলেন, ‘ভারতের আইন খুব কঠোর। দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের সময়েই আমরা তার প্রমাণ পেয়েছি। আর জি করের ক্ষেত্রেও দোষীদের দ্রুত শাস্তি দেবে, এই আশাই করি।’