মন দিন ধ্যানে। স্ট্রেস, টেনশন, ক্ষোভ সরিয়ে ভালো থাকার পরামর্শে সাহেব চট্টোপাধ্যায়।
রাগ, ক্ষোভ, স্ট্রেস এগুলো অতীতে আমাকে খুব জ্বালিয়েছে। একটা সময় আমি হঠাৎ হঠাৎ বেমক্কা রেগে যেতাম, একটু বেচাল দেখলেই ক্ষোভ চড়ত মাথায়। বছরের পর বছর এমন চলতে চলতে একসময় বুঝতে পারি, এতে আমার শরীরের ক্ষতি হচ্ছে। আমার চারপাশের মানুষজনও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সেই প্রথম আমি অনুভব করি, যেভাবেই হোক, রাগ কমাতে হবে।
সেই সময়টা সদ্য লকডাউন শুরু হয়েছে। হাতে অনেকটা সময়। শ্যুটিং, গানের অনুষ্ঠান সব বন্ধ। এমন সময় আমাকে বাঁচিয়ে দিলেন বিবেকানন্দ এবং শিরডি সাঁইবাবা। এই অবধি পড়ে, আপনি হয়তো একটু থমকালেন। ভাবছেন, রাগ কমানোর কথা বলতে গিয়ে সাহেব এসব কী লিখছে! কিন্তু আমি শুধু সেইটুকু বলতে পারি, যেটুকু করে নিজে লাভবান হয়েছি। শিরডি সাঁইবাবা ও বিবেকানন্দ সম্পর্কে বিশদে জেনে, বিবেকানন্দের অধ্যাত্মচেতনার কথা পড়ে আমি খুবই প্রভাবিত হই। মেডিটেশন শুরু করি। গত তিন-চার বছরের এই অভ্যেস আমাকে রাগ, ক্ষোভ, হতাশার মতো নেতিবাচক আবেগ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। বিশ্বাস করুন, আমার আর কোনও অবস্থাতেই রাগ হয় না।
তাহলে চোখের উপর অবিচার, অনাচার দেখলেও কি চুপ করে থাকি? না, সাধ্যমতো শান্তভাবেই প্রতিবাদ করি। তবে যা আমার হাতের বাইরে, এই দুনিয়ায় যা কিছু আমি ঠিক করে দিতে অক্ষম, তা নিয়ে স্ট্রেস নেওয়ার অভ্যেস আমি ছেড়ে দিতে পেরেছি। আমি কখনও বলব না, আপনি রাগ হলেই বড় বড় করে শ্বাস নিন বা এক থেকে একশো গুনুন। আমি নিজে বহুবার সেসব করে দেখেছি, রাগ আমার কমেনি। আবার কেউ কেউ নিশ্চয় এতে উপকার পেয়েছেন, নইলে এই তত্ত্ব বাজারে খাটবে কেন? প্রত্যেক মানুষের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি আলাদা। নিজেকে প্রকাশের ভঙ্গিও ভিন্ন। তাই আমি যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছি, তা যে সকলের বেলায় খাটবে, এমন নয়। তবে আমার পদ্ধতিতে একজনেরও উপকার হলে, আমার সাফল্য।
আমার এ টিপস তাঁদের জন্যই, যাঁরা আমার সমমনস্ক। আমি অন্তর থেকে আস্তিক। ঈশ্বরবাদী মানুষ। তা বলে আমি মন্দির-মসজিদ বা অন্য কোনও উপাসনাস্থলে যাই না। বাড়িতেও নিয়মিত পুজোআচ্চা করি না। কিন্তু আমি ধর্মীয়ভাবে অধ্যাত্মবাদী মানুষ। তাই আমার টিপস একমাত্র তাঁদেরই কাজে লাগবে, যাঁরা এই অধ্যাত্মচেতনাকে অস্বীকার করেন না। যাঁরা নিজেদের উৎসের সন্ধানে থাকতে ভালোবাসেন, সেই শক্তি বা পাওয়ারে বিশ্বাস করেন ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকেন।
রাগ, হিংসা, ক্ষোভ, স্ট্রেস সবকিছুর বিরুদ্ধে আমার একটিই থেরাপি, ধ্যান। রোজ সকালে যিনি আমার আরাধ্য, তাঁর সামনে আমি ধ্যানে বসি। সামনে জ্বলে একটি প্রদীপ। ওই ১৫ মিনিট আমি নিজের মনের গভীরে ডুব দিই। নিজের উৎস যে শক্তি থেকে, তাঁকে ধন্যবাদ দিই। আমার যাবতীয় কাজ, সারাদিনের সবরকম অবস্থাকে আমি তাঁর কাছে অর্পণ করি। চার বছর ধরে দিনের পর দিন এই অভ্যাস একটু একটু করে রপ্ত করতে করতে আজ আমি রাগ, স্ট্রেস এসব থেকে মুক্ত। মন ও মাথা সম্পূর্ণ ঠান্ডা থাকে।
আমি ‘কর্মফল’-এ বিশ্বাসী। প্রতি মুহূর্তে বিশ্বাস করি, এই দুনিয়ায় আমি এসেছি উন্নততর আর একটি জন্ম পাওয়ার উদ্দেশ্যে। আমি সবসময় খেয়াল রাখি, আমার কোনও কাজ, কোনও কথায় কেউ যেন আঘাত না পান। আমিও যেন কোনও ঘটনা বা কথায় এমন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ফেলি, যা আমার মনকে অশান্ত করে। আমার ইহজীবনের কর্মকে যেন কিছু নষ্ট না করে। আর এটা যত সহজে লিখছি, মোটেও তত সহজে আয়ত্তে আসেনি। আপনারও এই সাফল্য এত সহজে আসবে না। দীর্ঘ বহু বছরের সৎ অভ্যাস ও চেষ্টার ফল এই সাফল্য। প্রথম দিকে মন বসত না, জোর করে মনকে শাসন করে একটু একটু করে সময় বাড়িয়েছি। আজ ওই ১৫ মিনিট আমি কোথায় হারিয়ে যাই নিজেও জানি না! উপকারের মধ্যে, রাগ আমাকে সম্পূর্ণ ছেড়ে গিয়েছে। স্ট্রেস, টেনশনেও মাথা ও মনকে শান্ত রাখার পাঠ আমি করায়ত্ত করে ফেলেছি। এখন যিনি আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন, তাঁর সঙ্গে আমি এত ভালো ব্যবহার করি যে একসময় তিনি বুঝতে পারেন, ভুল জায়গায় রাগ দেখিয়ে ফেলেছেন। না বুঝলেও তা আমি গায়ে মাখি না। আমি এতে শান্তিতে আছি! চেষ্টা করে দেখতে পারেন কিন্তু।