বিশেষ নিবন্ধ

মহারাষ্ট্রের অর্থনীতিকে বাঁচান
পি চিদম্বরম

বর্তমান মহারাষ্ট্র রাজ্যটি কংগ্রেস পার্টির তৈরি। বম্বে প্রদেশ থেকে মহারাষ্ট্র নামক রাজ্যের সৃষ্টি হয় ১৯৬০ সালের ১ মে। সেখানে সেদিন থেকে এপর্যন্ত মোট ২০ জন মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন (ওই পদে কয়েকজন একাধিকবার বসেছেন ধরে নিয়ে)। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন ছাড়া বাকি সবাই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা। (শারদ পাওয়ারকেও কংগ্রেসি বলে ধরেছি, কেননা তিনি একবার কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আইএনসি (সোশ্যালিস্ট) নামক একটি বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন)। কংগ্রেস বিরোধী শিবিরের যে পাঁচজন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তাঁরা হলেন—মনোহর যোশী, নারায়ণ রানে, দেবেন্দ্র ফড়নবিস, উদ্ধব থ্যাকারে এবং একনাথ সিন্ধে। এই লেখা পর্যন্ত মহারাষ্ট্র রাজ্যটির বয় ৬৪ বছর ৬ মাস ও ১৭ দিন। মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি এই পাঁচজনের দখলে রয়েছে তার মধ্যে প্রায় ১৫ বছর। বাদবাকি বছরগুলিতে কংগ্রেস দলের কোনও একজন করে মুখ্যমন্ত্রীই সরকারকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
রাজ্য বিধানসভার পূর্ববর্তী নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালের নভেম্বরে। গত পাঁচবছরে মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মোট তিনজন! তাঁদের মধ্যে, দেবেন্দ্র ফড়নবিস ও একনাথ সিন্ধে রয়েছেন ‘মহাযুতি’তে এবং উদ্ধব থ্যাকারে মহা বিকাশ আঘাড়ি বা এমভিএ’র সঙ্গে রয়েছেন। শিবসেনা, কংগ্রেস এবং এনসিপি’র এমভিএ জোটের দু’বছর ২১৪ দিনের শাসনকাল (২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত) বাদ দিলে, ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে এরাজ্যে ক্ষমতা ভোগ করেছে বিজেপি। শিবসেনা এবং এনসিপি’তে ভাঙন ধরাবার কৌশল করে বিজেপি। তার ফলে এমভিএ সরকারের পতন ঘটে। অতঃপর ক্ষমতা দখল করে বিজেপির তৈরি জোট সরকার (মহাযুতি)।  
রাজ্যটি এখন নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই চলেছে। সেখানে ভোটগ্রহণ আগামী পরশু, ২০ নভেম্বর। শেক্সপিয়রের একটি উক্তির নিহিত সত্য আমার মনে পড়ছে, ‘...ভালো জিনিসটি প্রায়ই মজ্জাগত হয়ে থাকে।’ অতীত গৌরবের জন্য কেউ ভোট দেয় না। আজকের মহারাষ্ট্র কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং এর ভবিষ্যৎই-বা কী—এই নির্বাচনে সমর্থন বা বিরোধিতা হবে এই প্রশ্নকে সামনে রেখে। 
অর্থনীতির হাল 
অর্থনীতি প্রসঙ্গে নিঃসন্দেহে এটাই সত্য যে, শিল্পায়নে মহারাষ্ট্রকে দেশের মধ্যে ১ নম্বর জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল যে দল তার নাম কংগ্রেস। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্যটি ‘উন্নয়নের’ বিভিন্ন মাপকাঠিতে পিছিয়েই গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কিছু পরিসংখ্যানেই রয়েছে তার প্রমাণ:
ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব 
দেশে যুবদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১০.৮ শতাংশ। বেকারত্বের হার ১১.১ শতাংশ শহুরে মহিলাদের ক্ষে঩ত্রে। মহারাষ্ট্রে বেশিরভাগ কর্মসংস্থান হল স্বনিযুক্তিমূলক (সেলফ-এমপ্লয়মেন্ট)। নানা সময়ে চাকরির বিজ্ঞাপন বেরয় আর সামান্য কয়েকটি পদে সরকারি চাকরির পিছনে ছুটছেন হাজারে হাজারে প্রার্থী। ১১ লক্ষাধকি প্রার্থী একযোগে আবেদন করেছেন ১৮,৩০০ পুলিস কনস্টেবল/ড্রাইভার এবং ৪,৬০০ তালাতি (গ্রাম আধিকারিক) পদের জন্য। কর্মসংস্থান বা চাকরির ব্যবস্থা করে যেসব বিশ্বমানের ব্যবসা, তারা মহারাষ্ট্রে আমন্ত্রিত হয়ে প্রতিষ্ঠান গড়তে রাজি ছিল, ক্ষমতার উচ্চাসন থেকে সেগুলিকে পরে গুজরাতে উঠে যেতে প্রলুব্ধ করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে দুটি দৃষ্টান্ত হল—টাটা-এয়ারবাস ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্র্যাফট ফ্যাক্টরি এবং বেদান্ত-ফক্সকন সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাক্টরি। ‘ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী’ হিসেবে মুম্বইয়ের বহুকালের গর্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য ‘গিফট সিটি’কে বিশেষ আইন ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানসহ জোরপূর্বক প্রচারের আলোয় তুলে আনা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গান্ধীনগরের গুজরাত ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স টেক সিটিকে সংক্ষেপে জিআইএফটি বা গিফট সিটি বলা হয়। 
মারাত্মক অব্যবস্থাপনা
মহারাষ্ট্রের অর্থনীতির দুর্দশাকে আমি দুটি রেফারেন্স দিয়ে তুলে ধরব। জেলাগুলির মধ্যে বিস্তৃত বিভাজনমূলক চারটি স্বতন্ত্র অঞ্চল রয়েছে মহারাষ্ট্রে। অত্যন্ত সমৃদ্ধ জেলাগুলি হল—মুম্বই, পুনে ও থানে। অন্য প্রান্তে রয়েছে নাদুরবার, ওয়াশিম, গড়চিরোলি, যবতমাল, হিঙ্গোলি এবং বুলদানা। খুব ধনী জেলাগুলির নেট ডিস্ট্রিক্ট ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট (এনডিডিপি)-এর পরিমাণ অত্যন্ত গরিব জেলাগুলির তিনগুণ। মাথাপিছু এনডিডিপির ফারাক মারাত্মক বেড়ে গিয়েছে! মাথাপিছু এনডিডিপির তফাত ২০১১-১২ সালে ছিল ৯৭,৩৫৭ টাকা। সেটি বেড়ে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা হয়ে গিয়েছে ২০২২-২৩ সালে। তার পরিষ্কার মানে, রাজ্যের ন্যায়সঙ্গত উন্নয়নে (ইকুইটেবল ডেভেলপমেন্ট) সরকার চরম অবহেলা করেছে।
আর একটি উদাহরণ হল কৃষকদের দুর্দশা। ২০২৩ সালে মহারাষ্ট্রে ২,৮৫১ জন কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের পেঁয়াজ-নীতির দিকে তাকান। প্রথমত, পেঁয়াজ রপ্তানি সরকার নিষিদ্ধ করেছিল। কৃষকের প্রতিবাদের ঠেলায় নিষেধাজ্ঞা সরকার তুলে নিয়েছে বটে কিন্তু তারপরই চাপিয়ে দিয়েছে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য (মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস) এবং ৪০ শতাংশ হারে রপ্তানি শুল্ক (এক্সপোর্ট ডিউটি)। এর ফলে পেঁয়াজ চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। একইসঙ্গে ভারত হারিয়েছে তার সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক বাজার। জুলাই মাসে স্বাভাবিক রপ্তানির পরিমাণ ১৫ লক্ষ টন, সেখানে এবছর রপ্তানি হয়েছে মাত্র ২.৬ লাখ টন।
মহারাষ্ট্রের অর্থনীতির বিরাট অব্যবস্থাপনার উদাহরণ রয়েছে ভূরি ভূরি। ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের বড়াইটা নিতান্তই ফাঁপা। প্রথম ইঞ্জিন ট্রেনটিকে গুজরাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং দ্বিতীয় ইঞ্জিন এমন ভারী হয়ে গিয়েছে যে তাকে টেনে নিয়ে যাওয়াই এখন অত্যন্ত কঠিন কাজ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একজন ভোটারের যদি যথাযথ অর্থনৈতিক চিন্তাচেতনা থাকে তবে তিনি সেই প্রার্থী এবং দলকেই ভোট দেবেন, যিনি মহারাষ্ট্রের অর্থনীতিকে যাবতীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে রাখবেন। মহারাষ্ট্রের অর্থনীতি এতটাই মূল্যবান একটি ‘পুরস্কার’ যে, সেটি যেকোনও পরিস্থিতিতে উপেক্ষিত অথবা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। 
• লেখক সাংসদ ও ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। মতামত ব্যক্তিগত
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

সব কাজকর্মেই কমবেশি বাধা থাকবে। ব্যয়ের চাপ একটু বাড়তে পারে। শরীর-স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখুন। সন্তানের সৌভাগ্য...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.৫৮ টাকা৮৫.৩২ টাকা
পাউন্ড১০৫.২৭ টাকা১০৯.০১ টাকা
ইউরো৮৭.৪৪ টাকা৯০.৮০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
15th     November,   2024
দিন পঞ্জিকা