বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ

মার্কিন নির্বাচনেও কারচুপি, হিন্দুত্ব কার্ড!
হিমাংশু সিংহ

দুই বিপরীত গোলার্ধের গণতন্ত্রের দেশে এ যেন এক অদ্ভুত সমাপতন! বছরের শুরুতে পৃথিবীর বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশে টানটান উত্তেজনার নির্বাচন। মোদিজি তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরলেন বটে, কিন্তু প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে চারশো আসনের খোয়াব থামল মাত্র ২৪০-এ। একদলীয় সরকার বদলে গেল জোটে। নিঃসন্দেহে ১৪২ কোটি মানুষের দেশ ভারত এখন হরেক কিসিমের ভোগ্যপণ্য বিক্রির সেরা ঠিকানা। তাই দিল্লিতে ক্ষমতায় কে, তাঁর বৈদেশিক নীতি কতটা উদার, তা দুনিয়ার কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ। মোদি ক্ষমতায় ফেরার ছ’মাস পর ১৮০ বছর আগের পাশ করা আইন মেনে নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ধনী ও ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র আমেরিকার ভোট। অর্থাৎ, মাত্র ৪৮ ঘণ্টা দূরে। মানতেই হবে, আগামী দিনের জগৎ সংসার দুধেভাতে থাকবে নাকি পদে পদে রক্তাক্ত হবে, অস্ত্র প্রতিযোগিতার ঝনঝনানি থমকে যাওয়া অর্থনীতিকে আরও কতটা বিধ্বস্ত করবে, তার স্পষ্ট আভাস মিলবে আগামী বুধবারই। শুধু আমেরিকাবাসীর আগ্রহই নয়, ওই ভোটের ফলাফলের উপরই নির্ভর করছে বিশ্ব রাজনীতির পরবর্তী চার বছরের গতিপথ। ক্ষমতার ওঠাপড়া। রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইজরায়েল-ইরানের জোড়া যুদ্ধের ভবিষ্যৎ। তেলের দাম। মন্দা মোকাবিলা ও কর্মসংস্থান। নিঃসন্দেহে মার্কিন মুলুকে লড়াই এবার যতটা হাড্ডাহাড্ডি, তার চেয়েও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বাইরের দুনিয়ার জন্য। সেইসঙ্গে আমেরিকার মতো উন্নত রাষ্ট্র প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট পাবে নাকি দু’শো বিতর্ক মাথায় নিয়ে ট্রাম্পই দ্বিতীয়বার অধিষ্ঠিত হবেন হোয়াইট হাউসে, সেই প্রশ্নেরও নিষ্পত্তির অপেক্ষা। তবে সব ছাপিয়ে মার্কিন মুলুকে মুখে মুখে ঘুরছে একটা কথাই, কান ঘেঁষে এবারও হারলে সহজে দান ছাড়বেন তো রিপাবলিকান নেতা? নাকি চার বছর আগের পুনরাবৃত্তি দেখব আমরা। এই ভোটকে ‘প্রহসন’ বলে আবারও চূড়ান্ত ফল প্রকাশ রুখে আদালতের দরজায় তাল ঠুকবেন সোচ্চারে? কোথাও কোথাও শুরু হবে ফের গণনা। হারলেই নির্বাচনকে প্রহসন আখ্যা দেওয়া ট্রাম্পের পুরনো অভ্যাস। চাতুরি বলতে রাজি নই। ২০১২ সালের নির্বাচনে ওবামার জয়ের পরও প্রতিপক্ষ প্রার্থী না-হয়েও রিপাবলিক দলের নেতা হিসেবেই ওই নির্বাচনকে ‘আমেরিকার লজ্জা’ আখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। এবারও সুইং স্টেটগুলি কিন্তু দোদুল্যমান। উনিশ-বিশ অবস্থা অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাডা, উইসকনসিন, মিশিগান, ফ্লোরিডা সহ বিভিন্ন প্রদেশে।  
লড়াই যে কতটা তীব্র তার ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। ভারতের অষ্টাদশ সাধারণ নির্বাচনে নথিভুক্ত ৯৬ কোটি ভোটারের মধ্যে ৬৪ কোটি অধিকার প্রয়োগ করেছিলেন ভোটযন্ত্রে। চাঞ্চল্যকরভাবে নিজ অধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত ছিলেন ৩২ কোটি ভোটার। তাঁরা সবাই ভোট দিলে ফলাফল অন্যরকমও হতে পারত অনায়াসে। রং বদলে যেতে পারত সাউথ ব্লকের, নয়া সংসদের। বিপরীতে মার্কিন মুলুকে মোট ভোটার সংখ্যা কুড়ি কোটির আশপাশে। ইভিএম নয়, ভোট হচ্ছে ‘প্রাচীন’ কাগজের ব্যালটে। এখনও পর্যন্ত আগাম ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন সাড়ে চার কোটির মতো নাগরিক। শতাংশের হিসেবে প্রায় ২০ শতাংশের আশপাশে। এই অব্দি সব ঠিকই ছিল। ভাবছিলাম, অত বড় সম্পদশালী, সমীহ আদায় করা দেশ, আর্থিক সমৃদ্ধি ও স্বাধীনতা দু’টোই হাতে হাত ধরে চলে আসছে বহুদিন। মানুষ স্বাবলম্বী ও সচেতন। সেখানে ভয় দেখিয়ে, নানা প্রলোভনের ফাঁদে কে আবার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগে বাধা দেবে। সব মিলিয়ে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আদর্শ পরিবেশ। কিন্তু গোল বাধল যখন শুনলাম গণতন্ত্রের সেই সুউচ্চ মিনারেও (মন্দির বলতে রাজি নই কিছুতেই) বজ্রআঁটুনিকে ফাঁকি দিয়ে ব্যালট গায়েব হয়ে গিয়েছে! এখানেই শেষ নয়, কয়েকশো পোড়া ব্যালটও উদ্ধার হয়েছে এখানে ওখানে! উধাও ব্যালটের খোঁজে তল্লাশি পর্যন্ত চালাতে হয় পুলিসকে। সবাইকে অবাক করে সেই হারানো ব্যালট উদ্ধার হয় ইন্ডিয়ানা প্রদেশের রিপাবলিকান পার্টির নেতা ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ ল্যারি স্যাভেজের বাড়ির বাইরে রাখা গাড়ি থেকে। গোটা বাড়ি ঘিরে মার্কিন পুলিসের চিরুনি তল্লাশি মোটেই আমেরিকার নিষ্কলুষ গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তির পক্ষে ভালো বিজ্ঞাপন হতে পারে না।
এখানেই না থেমে শেষপর্বের প্রচারে মোদির স্টাইলে কট্টর হিন্দুত্বের কার্ডও খেলতে কসুর করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংখ্যালঘু হিন্দুদের পক্ষে দাঁড়িয়ে তাঁর এই সওয়াল ভোটে কতটা প্রভাব ফেলে তার দিকেই নজর সবার। মার্কিন মুলুকে মেক্সিকানদের পরই দ্বিতীয় স্থানে ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা। সংখ্যায় আধ কোটিরও বেশি। তাই ট্রাম্পের এমন হিন্দু প্রীতি? পৃথিবীজুড়ে হিন্দুরা আক্রান্ত হচ্ছে দেখেও জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস কোনও ব্যবস্থা নেননি বলেই রিপাবলিক দলের অভিযোগ। ইউক্রেন-রাশিয়া ও গাজার সঙ্কটে আমেরিকার কর্তৃত্ব বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। দেশ দুর্বল হয়েছে। ক্ষমতায় ফিরলে ফের শক্তিশালী আমেরিকা তৈরি করবেন বলেই দাবি ট্রাম্পের। তাঁর অভিযোগ, হিন্দুদের উপর নারকীয় অত্যাচার নেমে এসেছে বাংলাদেশে।
তবে এটা নিশ্চিত, আমেরিকার ভবিষ্যৎ কাণ্ডারী কে হবেন, তার উপর নির্ভর করছে গাজা সঙ্কট কোনদিকে যাবে। বিশ্ব রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ট্রাম্প জিতলে ইজরায়েলের হাত আরও শক্ত হবে। কারণ নেতানিয়াহুর সঙ্গেও ট্রাম্পের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। সেই সুবাদেই ‌একটি বসতির নাম ‘ট্রাম্প হাইটস’ দিয়েছিল ইজরায়েল। আর বাইডেনের পূর্ণ সমর্থন যতটা ইউক্রেন পেয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে, তাও আগামী দিনে ধাক্কা খাবে। মার্কিন মুলুকে ফের ট্রাম্প সর্বেসর্বা হয়ে এলে রাশিয়ার সঙ্গে শীতল সম্পর্ক আবার কিছুটা গতি পাবে। এ তো গেল বিশ্ব রাজনীতির কথা। কিন্তু কোভিড-পরবর্তী যে মন্দা মার্কিন অর্থনীতিকে গ্রাস করেছে, তা থেকে কি মুক্তি দিতে পারবেন নয়া প্রেসিডেন্ট? সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির ক্ষত। এই পটভূমিতে দাঁড়িয়েই আর একটা অর্থনৈতিক মন্দার হাতছানি যথেষ্ট ভাবাচ্ছে। মার্কিন মুলুকের নাগরিকদের স্বার্থে বেআইনিভাবে থেকে যাওয়া অনুপ্রবেশকারীদের বহিষ্কারও ট্রাম্পের ভোট জেতার বড় টোপ।  তবে প্রশ্ন তিনি কতটা কঠোর হতে পারবেন?
এই নির্বাচন ভারতের পক্ষে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? চার বছর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে টেক্সাসে গিয়ে অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে কূটনৈতিক পরম্পরা লঙ্ঘন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তখন তিনি সবে দ্বিতীয়বার ভোটে জিতে এসেছেন। দিল্লিতে একক দলের সরকার। টেক্সাসে ‘হাউডি মোদি’ কিংবা গুজরাতের চোখ ধাঁধানো স্টেডিয়ামে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ ঘিরে অনেক বিতর্ক হয়েছে। এবার তাঁর তৃতীয় টার্ম চলছে। বিজেপির একক দলের সরকার আর নেই, চলছে জোট সরকার—মূলত দু’টি আঞ্চলিক দলের সমর্থনে। তাই মোদিজিরও সমস্যা অনেক—দেশে এবং দেশের বাইরেও। উনিশে টেক্সাসের মাটিতে দাঁড়িয়ে রীতি ভেঙে যাঁকে তিনি আগাম প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিলেন, তিনি চব্বিশে জয়ী হলে ভারত কি উপকৃত হবে? অস্বীকার করার উপায় নেই, এই মুহূর্তে রাশিয়ার চেয়েও আমেরিকার বড় বিপদ চীন। একই কথা প্রযোজ্য নয়াদিল্লির শাসকের জন্যও। চীন ও পাকিস্তানের গা ঘষাঘষি নয়াদিল্লিরও না পসন্দ। তাই ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলা কমলা হ্যারিসের তুলনায় মোদিজির পছন্দ কি এবারও ট্রাম্পের দিকেই সামান্য ঢলে? তবে ট্রাম্প এতটাই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ যে তাঁর আচরণে কখনও কোথাও নিশ্চিতভাবে দাঁড়ি টানা যায় না। এবারের টানটান মার্কিন নির্বাচন নিয়েও এই একই কথা বড্ড বেশি করে প্রযোজ্য। কারণ দেশটার নাম আমেরিকা। হোয়াইট হাউসের একটা সিদ্ধান্তই বিশ্বজুড়ে শান্তির বাতাবরণ তৈরি করতে পারে নিমেষে। তেমনই আবার হলাহলেও ভরে দিতে পারে গোটা দুনিয়াকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দল, তার নীতি সব ছাপিয়ে জয় হয় আধুনিকতার, উন্নয়নের এবং প্রযুক্তির। রাজনীতির তাস নিছকই ফিকে সেখানে। অনেকটা সেমিকোলনের মতো। উল্টোদিকে আমরা দেশটার প্রগতির তারিফ করি, কিন্তু সংকীর্ণ রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারি না। ১৮৪৫ সালে পাশ হয়েছিল ‘আমেরিকান প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশন ডে অ্যাক্ট’। সেখানেই বলা আছে চার বছর অন্তর নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার আমেরিকার ভোট। তারপর কত ক্ষমতাধর এসেছেন, আবার হারিয়ে গিয়েছেন সময়ের পরিবর্তনে। কেউ কিন্তু আইনটাকে বদলে দেননি। আমাদের দেশ হলে কোনও ক্ষমতাধর এতদিনে সংশোধন করে ওই দিনটিকে ডিসেম্বরের শেষ শুক্রবার নির্ধারিত করে দিত! ফারাকটা এইখানেই। কুর্সির দম্ভ কখনও দেশের স্বার্থের চেয়ে বড় হয় না। হতে পারে না।
2Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

অংশীদারি কারবারে মন্দার সম্ভাবনা। যে কোনও কাজকর্মে বাধার মধ্যে উন্নতি। বৃত্তিগত শিক্ষা লাভে বিশেষ সাফল্য।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৬৮ টাকা৮৭.৪২ টাকা
পাউন্ড১০৫.৮৯ টাকা১০৯.৬২ টাকা
ইউরো৮৮.৬৬ টাকা৯২.০৪ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা