বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
ভ্রমণ
 

 লেপচাজগতের পথে

লকডাউনের পর পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই কোভিড স্পেশালের টিকিট কাটলাম। দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং, গ্যাংটক কিংবা পেলিংয়ের ভিড় এড়াতে এখন অনেকেরই স্বপ্নের গন্তব্য লামাহাটা, তিনচুলে, তাকদা, লেপচাজগতের মতো নির্জন স্বল্পখ্যাত এলাকাগুলো। পর্যটন মানচিত্রে লামাহাটা এখনও বেশ নতুন। দার্জিলিং থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরেই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে অফুরন্ত পাইন বনের সমারোহ। নির্জন ঘন জঙ্গল আর জমাট হয়ে আসা অন্ধকারের বাধাকে অতিক্রম করে সূর্যের আলো এসে পড়ছে ফাঁকে ফাঁকে। সবুজের শিশুরা সে আলোয় লুকোচুরি খেলছে এগাছ-সেগাছে। ‘লামাহাটা’ মানেই পাহাড়ের পর পাহাড়, আর নিবিড় নির্জনতা। প্রকৃতি এখানে প্রতি মূহূর্তে রং বদলায়। আলো-ছায়ার খেলাঘর আর খোলা পাহাড়ি পরিবেশে ছড়িয়ে রয়েছে মন মাতানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নিস্তব্ধতা। হোমস্টের ঘরোয়া পরিবেশ, স্থানীয় খাবারের অতুলনীয় স্বাদ। 
 দশ টাকার টিকিট কেটে সুসজ্জিত পার্কে প্রবেশ করে সময় যে কীভাবে কেটে যাবে, বুঝবেন না কিছুই। পাইন বনের ভিতর দিয়ে আঁকাবাকা পথে সোজা উপরের দিকে হেঁটে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম এক সুন্দর কৃত্রিম লেকে। অদ্ভুত শান্ত গা ছমছমে পরিবেশ। এই লামাহাটা থেকেই পরদিন গাড়ি নিয়ে ঘুরে এলাম ‘লাভার্স মিট ভিউপয়েন্ট’। যেখানে পাহাড়ি দুই নদী রঙ্গিত ও তিস্তার মিলন হয়েছে। এটাকে ত্রিবেণীও বলে। তারপরে গেলাম ‘পেসক চা বাগান’। স্বর্গের নন্দনকানন যেন নেমে এসেছে এই মর্ত্যভূমে। ঘন সবুজ চা-বাগানের অপূর্ব সৌন্দর্য মনকে মুগ্ধ করবেই। পরের গন্তব্য বড় মাংগোয়া— কমলালেবুর গ্রাম। পাতাহীন ছোট ছোট  গাছ ভর্তি হলুদ কমলালেবুতে। লোভ সামলাতে না পারলে বিপদ, দিতে হতে পারে জরিমানা। যেমন মিষ্টি আর তেমন তার রস। সাধে কী বলে দার্জিলিঙের কমলালেবু? দাম কিন্তু কম নয়, বড় সাইজের লেুবর দাম ১৮০ টাকা ডজন। আর মাঝারি সাইজের দাম মোটামুটি ১৪০থেকে ১৫০ টাকা। এই ছোট এবং বড় মাংগোয়াকে বলে ‘অরগ্যানিক গ্রাম’। শুধুমাত্র জৈব সারের ব্যবহারে এখানে বিভিন্ন সব্জির চাষ হচ্ছে। ‘তাকদা অর্কিড সেন্টারে’ আবার বিভিন্ন ধরনের অর্কিডে সমারোহ। সুন্দর সাজানো চারদিকে সুউচ্চ পর্বতশ্রেণির মাঝে অবস্থিত এই স্থানটি। এরপর ‘তিনচুলে’। তিনটি সুউচ্চ চুলহা অর্থাৎ উনুনের ন্যায় পর্বতের ভিউ থেকেই সম্ভবত এই তিনচুলে নামকরণ হয়েছে। চারদিকে নিবিড় অরণ্যের নির্জনতা আর পাখির কলকাকলির মুগ্ধতা আপনাকে নিয়ে যাবে এক মায়াবী স্বপ্নের জগতে। ইচ্ছে হলে একটা রাত থাকতে পারেন, কিছু হোম স্টের সুব্যবস্থাও আছে। তিনচুলে ভিউ পয়েন্ট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য অপরূপ। 
পরের গন্তব্য ছিল ‘লেপচাজগৎ’। এখানে মূলত ‘লেপচা’ জনজাতির বাস। সামনেই দেখা যায় শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ। সুখিয়া পোখড়ি, মানেভঞ্জন বা সান্দাকফুর পথে এই ছোট্ট পাহাড়ি জনপদ। অরণ্য ঘেরা নির্জনতার কুহকে আবদ্ধ এক মায়াবিনী। এখনও পরিচিত ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন না হলেও একদম অপরিচিতও নয়। ১০০-১৫০ মিটার দূরত্বে অসাধারণ এক ভিউপয়েন্ট আছে। প্রায় ৩৬০ডিগ্রি ভিউ। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত খুব সুন্দর দেখা যায়। সূর্যোদয়ের সময় কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা এখন যাঁদের সম্ভব হয়নি, তাঁদের টাইগার হিল যাওয়ার দরকার নেই, লেপচাজগৎ চলে আসুন। 

সঞ্জীবকুমার দাস, সিউড়ি, বীরভূম

28th     March,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ