ড্রিব্রুগড়ের জঙ্গলে

সুভাষ বন্দ্যোপাধ্যায় :  উত্তর-পূর্ব ভারতের বহু বনভূমিই এখনও পর্যটকদের কাছে সেভাবে পরিচিত নয়। ফলে সেখানে ভিড় যেমন কম তেমনই বন্যপ্রাণীর দেখা পাওয়াও তুলনামূলকভাবে সহজ। মানস বা কাজিরাঙা অবশ্য এই অচেনার তালিকায় পড়ে না। উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রায় অপরিচিত এমনই একটি বনভূমি হল অসমের তিনসুকিয়া ও ডিব্রুগড় জেলা জুড়ে অবস্থিত ডিব্রু-সাইখোয়া জাতীয় উদ্যান। যেখানে দেখতে পাওয়া যায় প্রায় ৭৯০টি প্রজাতির বন্যপ্রাণী এবং প্রায় ৬৮০ প্রজাতির গাছপালা।
তিনসুকিয়া শহর থেকে ১২ কিমি উত্তরে ডিব্রু-সাইখোয়া জাতীয় উদ্যান। যার উত্তরে ব্রহ্মপুত্র ও লোহিত নদী। দক্ষিণে ডিব্রু নদী। এখানে এমন কিছু বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর দেখা মেলে যাদের ভারতের অন্য কোনও অভয়ারণ্য বা জাতীয় উদ্যানে দেখা যায় না। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখানে নথিভুক্ত ৩৬টি স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে ১২টি বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন শিডিউল-১ এর অর্ন্তভুক্ত।
১৮৯০ সালে এই বনাঞ্চলকে ডিব্রু রিজার্ভ ফরেস্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯২০ ও ১৯৩৩-এ অতিরিক্ত বনভূমি এর সঙ্গে যোগ হয়। ১৯২৯-এ সাইখোয়াকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন পর ১৯৮৬ সালে অসম সরকার সাইখোয়াকে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে এবং বনাঞ্চলকে এক সঙ্গে যোগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৯৭ সালে ডিব্রু-সাইখোয়াকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ঘোষণা করা হয়। সবশেষে ১৯৯৯ সালে ডিব্রু-সাইখোয়াকে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষণা করা হয়। সমগ্র বনাঞ্চলের আয়তন ৭৬৫ বর্গ কিমি। যার মধ্যে ৩৪০ বর্গ কিমি হল কোর এরিয়া।
ডিব্রু নদীর ধারে গুইজান শহর। এখানেই আছে বনবিভাগের অফিস। থাকার জায়গা। ডিব্রু-সাইখোয়া জাতীয় উদ্যানে ঢোকার রাস্তা দু’টি। প্রথমটি এই গুইজানে। এখানেই নদী পার হয়ে জঙ্গলে ঢোকা যায়। দ্বিতীয়টি হল সাইখোয়া ঘাট। প্রথমটির দূরত্ব তিনসুকিয়া থেকে ১০ কিমি। দ্বিতীয়টি ৫০ কিমি।
অন্যান্য জঙ্গলের মতো এখানে কিন্তু কোনও জিপ বা হাতির পিঠে চড়ে জঙ্গল সাফারির ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় নৌকো ভাড়া করে বনে ঘুরতে হবে। অথবা গাইডের সঙ্গে পায়ে হেঁটে জঙ্গল পরিক্রমা করতে হবে। এজন্য ডিব্রু-সাইখোয়া দেখতে অন্তত ২-৩ দিন সময় নিয়ে যাওয়াই ভালো। এখানে যাওয়ার সেরা সময় হল নভেম্বর থেকে এপ্রিল। তারপর বর্ষা নামে।
তিনসুকিয়া থেকে গুইজান পৌঁছে প্রথম দিন দেখুন চা বাগান এবং জঙ্গলের মধ্যে থাকা ধাদিয়া, লইকা ও মাগুরি গ্রাম। সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় সময় কেটে যাবে। দ্বিতীয় দিন সকালে বোটে চেপে চলুন বনবিহারে। নদীপথে ঘুরতে ঘুরতেই দেখা পাবেন গ্যাঞ্জেটিক ডলফিনের। একই সঙ্গে অচেনা কিছু মাছও। এখানকার ডলফিনরা বড় ভালো। তারা ছবি তোলার জন্য রীতিমতো পোজ দেয়। জলপথে আরও যেতে যেতেই দুর্লভ প্রজাতির গ্রাসল্যান্ড পাখির দেখা মিলবে। পাখি চেনা মোটেই সহজ কম্ম নয়। তাছাড়া তারা আপনার নাগালে এসে হাজির হবে এমন মনে করারও কোন কারণ নেই। সেজন্য সঙ্গে দূরবীন থাকলে ভালো হয়। বনবিভাগের গাইডও পাখি চিনতে সাহায্য করে।
বিরল প্রজাতির ব্ল্যাক বেস্টেড প্যারোট বিল, সোয়াম্প প্রিনিয়া, মার্শ ব্যবলার, জর্ডন্স ব্যবলার প্রভৃতি পাখিদের বাসস্থান আলাদা। দেখতেও ভিন্ন ধরনের। মনে রাখবেন এদের দেখা পেতে একটা পুরো দিনও লাগতে পারে। দরকারে নদী পাড়ে নেমে ঘাসের জঙ্গলে হাঁটতেও হতে পারে। অবশ্য এত পরিশ্রম না করতে চাইলে নদীবক্ষে ভাসতে ভাসতে অন্যান্য প্রজাতির সলজ পাখির দেখা পাবেন। সেই সঙ্গে ডিব্রু নদীতে সূর্যাস্ত।
পরদিন নদী পার হয়ে জঙ্গলে ট্রেক করে (৮ কিমি প্রায়) চলুন কলমি ক্যাম্প এরিয়ায়। ভাগ্যে থাকলে এই চলার পথে অনেক বন্য জন্তুর দেখা পেতে পারেন। ওদের সঙ্গে দেখা হোক বা না হোক জঙ্গলকে স্বমহিমায় দেখা এবং অনুভব করার স্মৃতি বহুদিন বেঁচে থাকবে। কলমি ক্যাম্পে পৌঁছে দেখুন জায়ান্ট স্কুইরেল, জর্ডন্স বুশ চ্যাট প্রভৃতি।
যদি হাতে সময় এবং উৎসাহ থাকে তাহলে চতুর্থ দিন ঘুরে আসতে পারেন পার্কের উত্তরাংশে চুরকি চাপোরি থেকে। ওখানে দেখতে পাবেন ফেরাল হর্স। যদিও এদের খুঁজে পাওয়া কঠিন। ফেরাল হর্স দক্ষিণ ভারতের পয়েন্ট ফ্যালিমোর এবং উত্তর-পূর্বের ডিব্রু সাইখোয়া ছাড়া সমগ্র ভারতে আর কোথাও পাওয়া যায় না। বনবিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই ফেরাল হর্স হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফৌজি শিবির থেকে পালিয়ে যাওয়া ঘোড়া। যারা কালক্রমে বুনো ঘোড়ায় রূপান্তরিত হয়েছে।
বুনো ঘোড়ার পিছনে ছুটে সময় নষ্ট করতে রাজি না থাকলে গুইজান থেকে চলে আসুন তিনসুকিয়া। তারপর ওখান থেকে ট্রেন ধরে গুয়াহাটি হয়ে বাড়ির পথে।
হাতে যদি একটু সময় তাকে তহালে গুয়াহাটিতে থেকে একবার কামাখ্যা মন্দির দর্শন করে নিতে পারেন। দেবী দর্শনের পর ব্রহ্মপুত্রের বুকে উমানন্দ ভৈরব দর্শন অবশ্য কর্তব্য। 
প্রয়োজনীয় তথ্য
হাওড়া-ডিব্রুগড় কামরূপ এক্সপ্রেসে যেতে পারেন তিনসুকিয়া। ওখান থেকে অটো বা গাড়িতে গুইজান। ট্রেনে না গেলে আকাশ  পথে ডিব্রুগড়। সেখান থেকে   গাড়িতে গুইজান। দূরত্ব প্রায় ৪০ কিমি।
জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা। স্টিল ক্যামেরা ৫০ টাকা। ভিডিও ক্যামেরা ৫০০ টাকা।
থাকার জন্য আছে: 
ওয়েব ইকো ক্যাম্প। ভাড়া ১০০০ টাকা জনপ্রতি খাবার সহ।
ডিব্রু-সাইখোয়া ন্যাশনাল পার্ক সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করতে পারেন ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার, ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশন, তিনসুকিয়া, অসম।
ফোন- (০৩৭৪) ৩৩১৪৭২/ ৩৩৩০৮২
অথবা দেখুন ওয়েবসাইট—
 www.assamtourism.gov.in
45Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায়...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.১৩ টাকা৮৫.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৪.২৭ টাকা১০৭.৯৮ টাকা
ইউরো৮৬.৪২ টাকা৮৯.৭৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা