বম্বে রোড ধরে খড়্গপুরের দিকে এলেই কোলাঘাট বা মেছোগ্রামে দশ মিনিট জিরিয়ে নেওয়া বরাবরের অভ্যেস। শুধু কি জিরিয়ে নেওয়া? আলু, মোচা, ফুলকপি, ডিম, পটল, টমেটোর চপের ভ্যারাইটি আইটেম থেকে রসনা মেটানো এখানে থামার অন্যতম কারণ। তবে, করোনার মাঝে চপ খাওয়াতে ভীষণ ভয় ড্রাইভার সাহেবের। যাইহোক, চপ, চা খেয়ে দেবী করোনাশ্বরীকে মানত করে উঠে পড়লাম গাড়িতে। তারপর মেছোগ্রাম থেকে ডানদিকের ঘাটালের রাস্তা ধরে দাসপুর, ক্ষীরপাই হয়ে চন্দ্রকোণা টাউন। সেখান থেকে রসকুণ্ডু হয়ে সোজা গনগনি ডাঙার কাজু জঙ্গলে। আসার পথেও অনেকটা রাস্তা শাল-পিয়ালের ঘন জঙ্গলে ঘেরা। এই জঙ্গলটাই হুমগড়, গোয়ালতোড় হয়ে বেলপাহাড়ি, বান্দোয়ান ছাড়িয়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে গিয়েছে। আমাদের গন্তব্য, গড়বেতার গনগনিতে কাজু জঙ্গলে লুকোচুরি খেলা আর পাশের শিলাবতী নদীর রূপময়ী রূপের সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া। গড়বেতা ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে বাঁদিকে হুমগড়ের রাস্তা ধরে এক দেড় কিলোমিটার এগতেই চোখে পড়ল ‘গনগনি যাওয়ার রাস্তা’। গাড়ি ডান দিকে ঘুরিয়ে একটু এগতেই সামনে ঘন কাজু জঙ্গল । কাজু জঙ্গল পেরিয়ে পৌঁছলাম লাল টিলার মতো ছোট পাহাড়ি এলাকায়। আর সেখান থেকেই দেখতে পেলাম শিলাবতী নদীর অপূর্ব শোভা। চারিদিকে এক নিস্তব্ধতা। সামনে সিঁড়ি নেমে গিয়েছে নদী পর্যন্ত। স্থানীয় এক গ্রামবাসী বললেন, ‘দাদা নামবেন না। বালি তুলে তুলে চারদিকে খাদ আর ঘূর্ণিতে ভর্তি। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।’
অগত্যা নদীকে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকলাম। এবার গনগনির পাড় বরাবর হাঁটার পালা। পিছিয়ে এসে ঢুকে পড়লাম কাজুবাদামের জঙ্গলে। আট-দশ ফুট উচ্চতার গাছ। সত্যি এক অনাবিল আনন্দ। কলকাতা থেকে তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টার রাস্তা পেরলে এত মনোরম স্থানের দেখা মেলে, তা না এলে জানতেই পারতাম না। নদী, খাদ, টিলা, জঙ্গল, লাল মাটি সবের স্বাদ যেন এক লপ্তে পেয়ে গেলাম। ঘণ্টা দুই কাটিয়ে এবার যেতে হবে ত্রিশ কিলোমিটার দূরে মন্দিরের দেশ বিষ্ণুপুরে। সেখানে রাত্রিযাপন ও পরের দিন ঘুরে ফেরার পালা। ফেরার পথে ঘুরে নিলাম গড়বেতার জাগ্রত সর্বমঙ্গলার মন্দিরটিও।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: কলকাতা-গড়বেতা ১৫০ কিলোমিটার। ট্রেনে যাওয়া যায়। তাছাড়া ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে গাড়িতে যাওয়া যায়। মেছোগ্রামে পৌঁছে ডানদিকে ঘুরতে হবে। একদিনেই ফেরা যায়। চাইলে আর একটু এগিয়ে মল্লরাজাদের রাজধানী মন্দিরের দেশ বিষ্ণপুরও ঘুরে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিষ্ণুপুর থেকে আরামবাগ হয়ে ফিরলে কম সময় লাগবে। কলকাতা থেকে বিষ্ণুপুরের দূরত্ব ১৪৮ কিলোমিটার ।