তাপস কাঁড়ার: অশান্ত কাশ্মীর। দলে দলে শরণার্থী মাথায় সংসারের বোঝা চাপিয়ে চলেছেন কোনও অচেনা ঠিকানার খোঁজে। চোখে মুখে ফেলে যাওয়া জন্মভূমির বিষণ্ণতা। উপত্যকা ছেড়ে যাওয়ার নীরবতা। নিরাপত্তা বাহিনীর তীক্ষ্ণ নজর এড়িয়ে বিস্ফোরণ, গুলিগালার আওয়াজ উপত্যকা জুড়ে। দেশের মানুষের কাছে কাশ্মীর মানেই হিংসার অগ্নিকুণ্ড। সত্যি কি তাই? কাশ্মীরের অন্তরের ভালোবাসার এক অনন্য ছবি উঠে এসেছে নাট্যকার মৃনাল মাথুরের লেখা রঙ্গকর্মীর নতুন নাটক ‘পশমিনা’য়।
আধো অন্ধকার আধো আলোয় দল বেঁধে চলা শরণার্থী। মঞ্চে আলো ও শব্দে ভয়, উদ্বেগের আবহ। প্রথম দৃশ্যেই কাশ্মীরের সেসময়ের পটভূমিকে চমৎকার উপস্থাপনা করে দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। পরের দৃশ্যে দিল্লিবাসী সাক্সেনা পরিবার। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের অমর ও বিভা নাটকের সূত্রধর। এই পরিবারের কাশ্মীর ভ্রমণ ও পশমিনা শাল কেনার আবর্তে নাটকের কাহিনি এগিয়েছে।
কাশ্মীরি নাচ ও গান ছাড়া যেমন ভূস্বর্গকে অনুভব করা যায় না, তেমনই বরফ ছাড়া কাশ্মীরও ভাবা কঠিন। দীপেশ রজক কারিগরির মুন্সিয়ানায় মঞ্চে তাও তুলে ধরেছেন। মঞ্চ জুড়ে গুঁড়ো বরফ উড়ছে আর তার সঙ্গে কাশ্মীরি লোকগানের সুরে নাচ। নাটকের পরিমন্ডলকে পরিপূর্ণ করতে কাশ্মীরের বরফের বিষয়টা পরিচালকের যে দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি সেটা দেখে ভালো লাগে। সায়ন সূর্য ভট্টাচার্য, রঞ্জিনী ঘোষ, অনিরুদ্ধ সরকার, কল্পনা কুমারীর অভিনয় ভালো লাগে। পশমিনার সূত্র ধরে সাক্সেনা দম্পতি ও দোকানদারের সম্পর্ক সুন্দর ভাবে বুনেছেন পরিচালক, যা মুহূর্তে নাটকের মঞ্চ ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় দর্শকাসনে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে। অদ্ভুত মানবিকতার মুখোমুখি দোকানদার আর সাক্সেনা দম্পতি। দোকানদার ও তাঁর মেয়ে র পারিবারিক মুহূর্তও অসাধারণ।
সাদিজা সাজির পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় নাটকটি কিছুটা ভিন্ন। বাদল দাসের আলোর কারিগরি ও মনসিজ বিশ্বাসের যন্ত্রানুসঙ্গত ছাড়া এই প্রযোজনা পরিপূর্ণতা পেত না। পোশাক পরিকল্পনায় অঙ্কিত শর্মার কাজও চমৎকার।