প্রচ্ছদ নিবন্ধ

মধ্যরাতে সূর্যোদয়!

১৯ নভেম্বরের আমেদাবাদও কি সাক্ষী থাকবে উপচে পড়া আবেগ আর বাঁধনভাঙা উচ্ছ্বাসের? কীর্তি আজাদের সঙ্গে কথা বললেন  সৌরাংশু দেবনাথ

লর্ডসে তিরাশির ২৫ জুন ছিল বিভ্রম। সত্যিই ঘটছে তো, নাকি পুরোটাই মায়া? আরব সাগরের পারে এগারোর ২ এপ্রিল আবার স্বপ্নপূরণের মায়াকাজল। মুম্বই সে রাতে ঘুমোয়নি। মেরিন লাইন্সে সারা রাত বেজেছিল গাড়ির হর্ন, চলেছিল নাচানাচি। যান্ত্রিকতার মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে উৎসবে মেতে উঠেছিল বাণিজ্যনগরী। 
১৯ নভেম্বরের আমেদাবাদও কি সাক্ষী থাকবে উপচে পড়া আবেগ আর বাঁধনভাঙা উচ্ছ্বাসের? আতসবাজির রোশনাইয়ে সবরমতীর এপার-ওপারে ফিরবে দেওয়ালির আমেজ? আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে তার প্রতীক্ষাতেই ক্রিকেটপ্রেমীরা। শুধু সমর্থকরাই বা কেন, কপিলের বিশ্বজয়ী তারকারাও তো আবেগের সেই ঝর্ণাধারায় স্নানের অপেক্ষায়। তেরঙা পতাকার ওড়াউড়ি মানেই তাঁদের মন-ক্যামেরায় সুইচ অন। অবধারিত শুরু ফ্ল্যাশব্যাক। সময়ের চাকা ঘুরিয়ে ফেরা মুছে যাওয়া সোনালি দিনে। 
কপিলের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য কীর্তি আজাদ যেমন। কাপযুদ্ধের কাউন্টডাউন যত কাছে আসছে, ততই টেপ রেকর্ডারের মতো রিওয়াইন্ড হচ্ছে মেমোরি। পর্দায় যেন পরপর চলছে সেই ইমেজারি। আমদানি করছে অদ্ভুত ভালোলাগা। স্মৃতিসুধায় ভরছে হৃদয়। কে বলবে কেটে গিয়েছে কুড়ি-কুড়ি, চল্লিশ বছর! অজস্র লেখালেখি, চ্যানেলে চ্যানেলে ইন্টারভিউ আর প্যানেল ডিসকাশনের পরেও ফিকে হয়নি ঔজ্জ্বল্য। বরং বছর দুয়েক আগের ‘৮৩’ সিনেমাতেও ফের জীবন্ত সেদিনের নায়করা। বহু ব্যবহারেও জীর্ণ হয়নি তা। অ্যালবামটায় ধুলোই যে পড়তে দেননি ক্রিকেট রসিকরা! 
মোবাইলে ভেসে আসা গলাতেও টইটম্বুর আবেগ। বললেন, ‘আমাদের বিশ্বজয় খোলা খাতার মতো। তাতে কোনও আনটোল্ড স্টোরি নেই। সবটাই সবার জানা। কোনও কিছুই লুকনো নেই। সেই দিনটার কথা প্রত্যেকে এতবার বলেছি। তবুও যেন সেই অনুভূতি তুলে ধরা যায়নি। সেই রাতে মনে হচ্ছিল, আগামী বলে কিছু নেই। থমকে গিয়েছে সময়।’ সত্যিই তো, ভাষার সাধ্য কী সেই আবেগকে কয়েকটা শব্দে বেঁধে ফেলে!
সেবার কাপযুদ্ধের আগে বিশেষজ্ঞরা গুরুত্ব দেননি ভারতীয় দলকে। সবাইকে ভুল প্রমাণিত করেছিলেন কপিলরা। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের কানাগলি থেকে সাফল্যের রাজপথ, আন্ডারডগ থেকে চ্যাম্পিয়ন বলেই তার আলাদা মাহাত্ম্য। কীর্তি শোনালেন, ‘জিম্বাবোয়ে ছাড়া বাকি সব দলকেই এগিয়ে রাখা হয়েছিল। এমনকী, শ্রীলঙ্কাও বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। আসলে তার আগের দুটো বিশ্বকাপে মিলিয়ে একটার বেশি জয় আসেনি। সেটাও কি না ইস্ট আফ্রিকার বিরুদ্ধে, যে দলটা গুজরাতিদের নিয়ে গড়া। কেউ ধর্তব্যের মধ্যে রাখবেই বা কেন? নিজেরাও তো সেমি-ফাইনালে উঠব বলে ভাবিনি!’
ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন অপ্রতিরোধ্য। টানা দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা শুধু জিততই না, বিপক্ষকে রোলারে পিষে ফেলে গুঁড়িয়ে দিত। যশপাল শর্মার ব্যাটে ভর দিয়ে আসরের প্রথম ম্যাচে সেই রিচার্ডস-মার্শালদের বিরুদ্ধেই আসে জয়। জন্ম নেয় অদম্য বিশ্বাস। সেটাই উঠে এল কথায়, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে জয়টাই চোখ খুলে দেয়। আমরাও জিততে পারি কাপ, সেই ক্ষমতা রয়েছে—এই উপলব্ধিটা আসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন মারাত্মক শক্তিশালী। বেস্ট এভার ওডিআই টিম বলা হতো। কিন্তু ফাইনালে ওদেরকেই ফের হারাই আমরা।’
অনেকের কাছেই এটা ছিল ফ্লুক। টার্গেট দুশোরও কম হওয়ায় আত্মতুষ্টি নাকি গ্রাস করেছিল ক্যারিবিয়ানদের। রিচার্ডস এমনভাবে তাড়াহুড়োয় ছিলেন যেন ফ্লাইট ধরার তাড়া রয়েছে। কপিলের অনবদ্য ক্যাচে তিনি ফিরতেই ভেঙে পড়েন লয়েডরা। আত্মতুষ্টির তত্ত্ব অবশ্য খারিজ করছেন কীর্তি। রয়েছে পাল্টা যুক্তিও, ‘যোগ্যতাতেই আমরা চ্যাম্পিয়ন। দলে গাভাসকর, অমরনাথ, কিরমানি, মদন লালের মতো সিনিয়ররা। যশপাল শর্মা, সন্দীপ পাটিল, বেঙ্গসরকারের মতো ব্যাটসম্যানও ছিল। অলরাউন্ডার বোঝাই ছিল দলে। কপিল ছাড়াও রজার বিন্নি, রবি শাস্ত্রী, অমরনাথ, মদন লাল। আমিও হাত ঘোরাতাম। নিজেদের ক্ষমতায় ভরপুর বিশ্বাস ছিল। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাই কাজে আসে ফাইনালে দমবন্ধকর পরিস্থিতিতে।’
অমরনাথের বলে মাইকেল হোল্ডিং এলবিডব্লু হতেই মাঠে নেমে পড়েন সমর্থকরা। ড্রেসিং-রুমে ফিরতে প্রাণপণ দৌড়েছিলেন ক্রিকেটাররা। সঙ্গে সঙ্গে ঢাকে কাঠি পড়ে উৎসবের। ৬৪ বছর বয়সি যেন চাক্ষুষ দেখছেন সেই মুহূর্ত, ‘অসাধারণ অনুভূতি। আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ি আমরা। হোটেলে পৌঁছেছিলাম উচ্ছ্বাসে ভেসে। বড় বড় ঢোল-নাকাড়া বাজছিল। মনেই হচ্ছিল না লন্ডনে রয়েছি। যেন এটা দিল্লি বা কলকাতা!’ সেই সময় ক্রিকেটে এখনকার মতো কোটি কোটি টাকা ছিল না। ফলে উৎসবের মুহূর্তেও খরচা নিয়ে ছিল খচখচানি। বললেন, ‘খুব একটা টাকা পেতাম না। সেলিব্রেট করব কী! পকেটে টান পড়ছিল। কিন্তু অবাক হয়ে দেখি যে, একের পর এক শ্যাম্পেন এসেই যাচ্ছে। বিল কে মেটাবে, ধরা যাচ্ছিল না। আনন্দের মধ্যেও তাই অস্বস্তি হচ্ছিল, পেমেন্ট আমাদেরই করতে হবে না তো! তারপর ভাবলাম, মুহূর্তটা তো উপভোগ করি। পরে যদি কাপ-ডিশ ধুতে হয়, না হয় ধুয়েই দেব!’
১৯৮৩ সালের সেই তারিখ দু’ভাগে ভাগ করছে এদেশের ক্রিকেটকে। একটা বিশ্বকাপ জয়ের আগে, অন্যটা বিশ্বকাপ জেতা থেকে। আর একটা কাপ জিততে অবশ্য পেরতে হয়েছে ২৮ বছরের খরা। অবশেষে ২০১১ সালে ঘটে শাপমোচন। ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন হয় মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। এবারও দেশেই বিশ্বকাপ। হোম অ্যাডভান্টেজ পরিণত হবে না তো আকাশছোঁয়া প্রত্যাশার চাপে? কীর্তির উত্তর, ‘এটা দু’দিক ধার দেওয়া তরোয়ালের মতো। দেশে খেলার সুবিধা হল ভালো খেললে প্রশংসার ঢেউ ভাসাবে। খারাপ খেললে আবার সুনামি ধেয়ে আসবে। জয়-পরাজয়কে আমরা ব্যক্তিগতভাবে নিই। যদিও এটা মহান অনিশ্চয়তার খেলা। কিছু ম্যাচে জয় আসবে, কিছুতে পরাজয়। দুর্ভাগ্যের হল, এদেশে উইনিং স্পিরিট রয়েছে, স্পোর্টসম্যান স্পিরিট নেই!’
কপিলের টিম। ধোনির দল। এবং এবারের রোহিত ব্রিগেড। কল্পনার বাইশ গজে কারা বাজিমাত করার শক্তি ধরে? এড়িয়েই যেতে চাইলেন, ‘আলাদা সময়ের মধ্যে তুলনা হয় কি?’ একটু থেমে বললেন, ‘২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জেতে শচীনরা। ভারত চ্যাম্পিয়ন হবে, এমনই প্রত্যাশা ছিল। ১৯৮৩ সালে আমরা কিন্তু বিদেশে খেলি। কেউ হিসেবের মধ্যেই ধরেনি। পিচ আঢাকা থাকত। ম্যাচ হতো ৬০ ওভারের। এখন তা কমে ৫০ ওভারে দাঁড়িয়েছে। শুধু পিচ নয়, কভারে মোড়া থাকে মাঠও। তখনকার নিয়মকানুন ছিল আলাদা, ব্যাট-প্যাডও ছিল অন্যরকম। বদলেছে অনেক কিছুই।’
পরিবর্তন তো ভারতীয় ক্রিকেটও। কপিলের হাতে ধরা ট্রফি ঘটিয়েছে বিপ্লব। পাল্টে দিয়েছে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকার ক্রিকেট মানচিত্র। বিশ্ব ক্রিকেটে হালফিলের তিন ফরম্যাটেই শীর্ষস্থানে তা প্রতিফলিত। বিরাট কোহলি, যশপ্রীত বুমরাহদের ঘিরে প্রত্যাশার পারদ সেজন্যই চড়ছে। তিনি আশাবাদী, ‘দলটা দারুণ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই মশলা। যথেষ্ট ভারসাম্য রয়েওছে। শুভমান গিল ভবিষ্যতের সুপারস্টার। শ্রেয়স আয়ার ছন্দে। সূর্যকুমার যাদবও মানিয়ে নিয়েছে। হার্দিক, জাদেজার মতো অলরাউন্ডারও আছে। ভালো কিছুই হবে নিশ্চয়।’
কীর্তি জানেন, বিশ্বজয় এমনই অনন্য অনুভূতি যার জৌলুস কখনও ফুরোয় না। সমকাল ছাপিয়ে তা হয়ে ওঠে চিরন্তন। ৮৩’র জয় যেমন হীনমন্যতার বন্দিত্ব থেকে ‘আজাদ’ করেছিল। গড়েছিল ‘কীর্তি’র শিখরে পৌঁছনোর সরণি। প্রত্যাশার অনন্ত চাপেও সেই শৃঙ্গ ছোঁয়া, পরম্পরা বজায় রাখাই রোহিতদের অ্যাসিড টেস্ট!
10Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা