বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
 

ঘুিড়র দৌড়
কালীপদ চক্রবর্তী

চাঁদিফাটা রোদে দিনভর লাটাই হাতে আকাশের দিকে চেয়ে থাকতেন। এমনই ছিল তাঁর ঘুড়ি-প্রেম। একদিন বিকেলবেলা ছাদ থেকে ঘুড়ি উড়িয়ে নেমে এসে সেই দৃষ্টিটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র দে। কতই বা বয়স তখন, তেরো কি চোদ্দ! রেটিনা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তাঁর। তাতে অবশ্য সঙ্গীতসাধক হয়ে ওঠা আটকায়নি। এই কৃষ্ণচন্দ্রেরই ভাইপো বিখ্যাত গায়ক মান্না দে। প্রতিবার বিশ্বকর্মা পুজো এলেই মনে পড়ে যায় এই ঘটনা। মনে পড়ে যায়, ইতিহাসের অন্ধগলিতে আটকে থাকা ঘুড়ির নানা আখ্যান।
ঘুড়ি জিনিসটাই নাকি চীনাদের দান। ২৮০০ বছরেরও বেশি আগে ওরাই আকাশে তুলে দিয়েছিল সুতো বাঁধা এই উড়ন্ত বস্তু। তবে তা কাগজের ছিল কি না, সেব্যাপারে বেশ সন্দেহ আছে। কারণ, ‘কাইট’ বইয়ের লেখক ক্লাইভ হার্ট এবং ঘুড়ি বিশেষজ্ঞ টল স্ট্রিটারের দাবি, ঘুড়ির আগমন তারও আগে। কিন্তু ইতিহাস বলছে, খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে প্রথম কাগজ আবিষ্কার করেছিল চীনারা। তার আগে কীভাবে আকাশে উড়ত ঘুড়ি? উত্তরটা সহজ, সেগুলি ছিল তুলো বা কাপড়ের।
চীনাদের পাশাপাশি আরও এক জাতির ইতিহাসে ঘুড়ির খোঁজ পাওয়া যায়। তারা গ্রিক। অনেকে এমনও বলেন যে, ঘুড়ি আবিষ্কৃত হয়েছিল গ্রিসে, খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে। সেই তর্কে না গেলেও একটা তথ্য দিয়ে রাখা দরকার। ৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিস দেশে প্রথম ঘুড়ি উড়িয়েছিলেন কিয়াটাস। সেখান থেকেই কাইট নামকরণ। কিন্তু চীনে এমনটা হয়ে গিয়েছিল অন্তত ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। এক যুদ্ধে প্রথম ঘুড়ি ব্যবহার করেছিলেন সেনাপতি হান সিন। সেই ঘুড়িটা অবশ্য ছিল কাঠের। চীনা ভাষায় যার নাম ‘মু ইউয়ান’। গোলন্দাজরা লক্ষ্যভেদের অনুশীলন করতেন তা উড়িয়ে। পরে সেটির জায়গা নেয়, ‘ঝি ইউয়ান’। অর্থাৎ, কাগজের ঘুড়ি। মাত্র ৫০০ বছর আগে চীনাদের থেকে তা ওড়ানোর কায়দা শিখে নেয় ইংরেজ, পর্তুগিজ এবং ওলন্দাজরা। আর তাদের হাত ধরে কলকাতা থেকে কন্যাকুমারী। যদিও ইতিহাসে মুঘল আমলে পর্যন্ত দিল্লির আকাশে ঘুড়ির শাসনের কথা জানা যায়। কিন্তু কীভাবে তা মুঘল হস্তে পড়ল, সেই খোঁজ মেলে না। অনেক ইতিহাসবেত্তা অবশ্য বলে থাকেন, হিউয়েন সাংয়ের মতো পর্যটকদের হাত ধরে মুঘল আমলেরও আগে থেকে ভারতীয়দের সঙ্গে ঘুড়ির দোস্তি।
ঘুড়ি নিয়ে সবচেয়ে রোমহর্ষক কাহিনিটি অবশ্য আমরা পড়েছি স্কুলের বইতে। পরে ঘটনাটি কল্পনা করেও শিউরে উঠতাম মাঝেমধ্যে। সেটা মার্কিন বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের বিখ্যাত ‘কাইট এক্সপেরিমেন্ট’। ঘুড়িটা সাধারণ ছিল না। মাঞ্জাটাও না। তবে তাঁর এক্সপেরিমেন্টটা ছিল আরও মারাত্মক—বিদ্যুৎকে পাকড়াও করা। পরীক্ষার জন্য এক বজ্রবাদলের দিন বেছে নিয়েছিলেন তিনি।
১৫ জুন, ১৭৫২। প্রবল হাওয়া দিচ্ছে। সঙ্গে বৃষ্টি আর বজ্রপাত। তার মধ্যেই আকাশে রেশমি কাপড়ের এক ঘুড়ি উড়িয়ে দেন বিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্কলিন। আর তা ওড়ানোর সুতোর বদলে লাগানো ছিল তামার তার। তার শেষ মাথায় বাঁধা ছিল একটি লেইডেন জার, আর তাতে একগোছা চাবি। ভেজা রেশমি কাপড় আর তামার তার, দুই-ই বিদ্যুতের সুপরিবাহী। আকাশে বিদ্যুৎ চমকানো মাত্র, তা নেমে এল তামার তার বেয়ে। লেইডেন জারে চাবির গোছায় বয়ে গেল প্রবল বিদ্যুতের ঝলক। বিজ্ঞানের ইতিহাসেও নিজের জায়গা পাকা করে নিল ঘুড়ি। ভোওও কাট্টা!

17th     September,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা