প্রচ্ছদ নিবন্ধ

সুকুমার শ্রেষ্ঠ

আজ সুকুমার রায়ের মৃত্যু শতবর্ষ। তাঁর মৃত্যুর আটদিন পর প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল আবোল তাবোল। বিশ্ব সাহিত্যের এক অনন্য সৃষ্টি। পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো যার পরতে পরতে ভিন্ন অর্থ, দর্শন, আর নিখাদ আনন্দধারা। শতবর্ষ উপলক্ষ্যে কল্পনার ভাঁড়ার হাতড়ে এই অনন্য সৃষ্টি পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করলেন শান্তনু দত্তগুপ্ত

দুঃখ পাওয়াটা আরও বেড়েছে সদানন্দর। লালবাহাদুর সিং-লালচাঁদ পাঁড়ের সঙ্গে আর দেখা হবে না। লালবাহাদুরকে মনে নেই? বন্ধু লালচাঁদের উপর কাগজ-হামলার প্রতিশোধ নিতে যে সেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গোমড়ামুখো ডাক্তারটার গায়ে... ঢুকে পড়েছিল আস্তিনের ফাঁক দিয়ে... তারপর কটাং করে কামড়। আর হাসপাতালে থাকা হয়নি সদানন্দর। বাবাকে ডেকে পত্রপাঠ বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল রাগী ডাক্তারটা। খুব রেগে রেগে বলেছিল, ‘আমাকে পিঁপড়ে কামড়াচ্ছে, আর আপনার ছেলে কি না খিলখিল করে হাসছে! ওর কিচ্ছু হয়নি। বাড়ি নিয়ে যান।’ তখন থেকে সদানন্দ বাড়িতে। ঘরের বাইরেই যাওয়া ওর মানা। বিছানায় শুয়ে থাকে, কিংবা জানালার ধারে বসে সময় কাটায়। ইস্কুলে যেতে হচ্ছে না বলে কিন্তু ওর দুঃখ নেই। এখন একটা চড়াই পাখির সঙ্গে ভাব হয়ে গিয়েছে। রোজ সকালে মা দুধের সঙ্গে যে বিস্কুট খেতে দেয়, তার থেকে একটু বাঁচিয়ে গুঁড়ো করে জানালার স্ল্যাবের উপর ফেলে রাখে সদানন্দ। রোজ একটা বাঁধা সময়ে চড়াইটা আসে। বিস্কুটের গুঁড়ো খায়, তারপর কিচিরমিচির করে ওর দিকে তাকিয়ে কিছু বলে। সদানন্দ ওর নাম দিয়েছে কিচিরাম মিচি। আগেরবার যখন সদানন্দর জ্বর হয়েছিল, তখন জানালায় একটা কাক এসে বসত। প্রথম প্রথম কিচিরামকে ও সেই কাকটার কথা, তারপর লালবাহাদুর-লালচাঁদের কথা বলত। সেও নিজের ভাষায় উত্তর দিত বটে, কিন্তু সদানন্দ সবটা বুঝতে পারত না। গত দু’দিন অবশ্য সদানন্দ খুব একটা কিচিরামের সঙ্গে কথা বলার সময় পাচ্ছে না। বড়মামা ওকে একটা বই এনে দিয়েছে। এমনিতে বই পড়তে সদানন্দর একদম ভালো লাগে না। কিন্তু এই বইটায় অন্যগুলোর মতো মাথা ঝিমঝিম করে না। উল্টে ভারি মজা। সদানন্দ জানত না, বইতেও এত মজা আছে। এটার নাম আবোল তাবোল। সুকুমার রায় বলে একজন লিখেছেন। সদানন্দকে বড়মামা বলেছে, অনেক বছর আগে ইনি মারা গিয়েছেন। সেই ১০০ বছর আগে। সুকুমার রায় মারা যাওয়ার পরই আবোল তাবোল বইটা ছেপে বেরিয়েছিল। এত কথা ও মোটেই শুনত না। কিন্তু যখনই শুনল, সুকুমার রায় আসলে মানিকজেঠুর বাবা... তখন ওর মুখটা এত্তবড় হাঁ হয়ে গেল। মানিকজেঠুকে সদানন্দ খুব চেনে। ওর মতো একটা আপনভোলো ছেলেকে নিয়ে যে গল্প লেখা যায়, সেটা উনি ছাড়া আর কি কেউ ভেবেছিল? 
সকাল বিকেল এখন আবোল তাবোল পড়ছে সদানন্দ। বারবার পড়ছে। লোকজন, জন্তুগুলো যেন ওর খুব চেনা। আজ ভোরবেলা উঠেছিল সদানন্দ। জানালা দিয়ে দেখল, সূর্য উঠছে। একটু একটু করে আলোর পাওয়ার বেড়ে সূয্যিমামা টুক করে আকাশে বেরিয়ে আসে... দেখতে দারুণ লাগে ওর। তারপর একটু ষষ্ঠীচরণ আর কিম্ভূত পড়ল, আবার ঘুমিয়েও গেল। মা এসে দুধ বিস্কুট দিয়ে গেছে। ধমক খেয়ে উঠেছিল। কিন্তু মা যেতেই আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। 
‘ভোলা... ও ভোলা... অ্যাই ভোলা।’
ধীরে ধীরে চোখটা খুলল। কে যেন ডাকছে। স্কুলের পণ্ডিত মশাইয়ের মতো রাশভারী ডাক নয়। কেমন একটা কিচমিচ করে ডাকছে। কিন্তু ভোলা কে? ও মা! এ দেখি তার কিচিরাম মিচি! ঘাড় কাত করে সদানন্দর দিকে তাকিয়ে আছে, আর ভোলা ভোলা করে ডাকছে।
—কাকে ডাকছ?
—তোমাকে।
—কিন্তু আমার নাম তো ভোলা নয়... শ্রীসদানন্দ চক্রবর্তী। মা ডাকে সদু বলে।
—উঁহু, তোমার নাম ভোলা! আমাদের খাতায় তাই আছে।
—কিন্তু... থেমে গেল সদানন্দ। ‘আরে, আমি যে তোমার সব কথা বুঝতে পারছি!’
—হুমম। পারবেই তো। পরীক্ষায় পাশ করেছ।
—কেমন পরীক্ষা?
—তুমি আমাদের মতো কি না দেখতে হবে তো!
স্কুলের পরীক্ষা দিতে সদানন্দর ভালো লাগে না। এটা কিন্তু বেশ ভালো। যাক এবার কিচিরামের সঙ্গে অনেক কথা বলা যাবে। কিন্তু একটা খটকা লাগছে সদানন্দর। জানালার শিকগুলো কোথায় গেল?
—ওগুলো ভ্যানিশ করে দিয়েছি। না হলে আসা-যাওয়ায় অসুবিধা হয়।
হাঁ হয়ে গেল সদানন্দ—‘তুমি আমার মনের কথা শুনতে পেলে নাকি?’
—আমি সবার মনের কথা শুনতে পাই। ভালো ছেলেমেয়ে হলে কথা বলি। না হলে চুপ করে থাকি। আর তোমাকে তো আমাদের খুবই ভালো লেগেছে।
—আমাদের মানে?
—মানে বন্ধুদের। একজন এখন দেখাও করতে এসেছে তোমার সঙ্গে।
—আমার সঙ্গে? কিন্তু আমার সঙ্গে তো মা, বাবা, বড়মামা ছাড়া কেউ দেখা করতে আসে না! মাঝে মাঝে একজন ডাক্তার আসে। আর তেতো ওষুধ দিয়ে চলে যায়।
—আমার এই বন্ধু ডাক্তার নয়। তবে তুমি একে চেনো।
এই যাঃ। এই তো মুশকিলের ধাঁধা। সদানন্দ বেশি লোককে চেনে না। চিনতে চায়ও না। তাহলে এটা আবার কে? ও মা, এটা কী? কেমন বিদঘুটে দেখতে! ভেবেই হঠাৎ চমকে উঠল সদানন্দ। সত্যি তো, চেনা চেনা ঠেকছে! আরে এটা যে হাঁসজারু! কিন্তু ওর গলায় ওটা কী ঝুলছে? মাদল নাকি?
—ঠিক ধরেছ। এটা মাদল। আমার সাইজ মতো কাস্টমাইজ করে নিয়েছি। না হলে বাজাব কীভাবে... ‘আয়রে পাগল আবোল তাবোল/মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।’
ঠিক তো! ভাবল সদানন্দ। অসম্ভবের ছন্দে এলোমেলো হতে গেলে ধামসা মাদল লাগবেই। মন দিয়ে দেখছে ও হাঁসজারুকে। এমনটাই তো পড়েছে ও বইতে। মুখটা হাঁসের মতো, পিছনটা সজারুর কাঁটা।
—আচ্ছা, তোমার সাঁতার কাটতে ইচ্ছে হলে কী করো?
—এটাই তো মুশকিল! 
একটু বিষণ্ণ লাগল হাঁসজারুকে। ‘কতদিন যে আধপেটা খেয়ে থাকতে হয়, জানো না। জলের পোকা বা ছোট মাছ খেয়ে বাঁচতুম। সজারুর সঙ্গে জুড়ে যাওয়ার পর ওর অখাদ্যগুলো খেতে হয়।’
বুঝল সদানন্দ। এটা বেশ মুশকিল কাণ্ড বটে। 
—ওহে এ সমস্যা যে আমারও। 
সদানন্দ বুঝতে পারেনি, নিঃশব্দে আরও একজনের আগমন ঘটেছে। এর নামটা সুকুমার রায় লেখেননি। মাথাটা হরিণের। আর শরীর সিংহের। সদানন্দ স্কুলে পড়েছে, সিংহ খায় হরিণকে। আর হরিণ ঘাসপাতা খেয়ে বাঁচে। মাংস চিবোনোর দাঁত তো হরিণের নেই। সত্যিই দুশ্চিন্তার বিষয়। 
—আমাদের আরও দুই বন্ধুর তোমার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে ছিল।
ভাবনার ঘোর কাটল সদানন্দর। কিচিরাম কিছু একটা বলছে। 
—কার কথা বলছ?
—হাতিমির আর ফড়িংয়ের ঢং ধরা জিরাফের। ওরা এখানে আসতে পারবে না। 
—ইস্‌। ঩কী ভালো হতো ওদের দেখা পেলে। 
খেঁকিয়ে উঠল কিচিরাম, ‘হাতিমির জন্য তোমার জানালা পর্যন্ত নদী কেটে আনতে হতো। সেটা সম্ভব নাকি?’
সেও বটে। ভাবল সদানন্দ। নাকি ও এখন নিজেকে ভোলা ভাববে! কিন্তু কী যেন একটা শব্দ শুনতে পাচ্ছে ও... ঠাস্‌ ঠাস্‌ দ্রুম্‌ দ্রাম্‌। 
—বুঝতে পারছ না?
আবার চমকে গেল সদানন্দ। তারপরই মনে পড়ল, কিচিরাম তো ওর মনের কথাও শুনতে পায়—‘নাঃ, পারছি না।’
—আরে ফুল ফুটছে যে! এটা তারই শব্দ। 
—এতদিন তাহলে শুনতে পাইনি কেন?
—তুমি তো এতদিন আমার কথাও বুঝতে পারোনি।
সেও ঠিক। ভাবল সদানন্দ।
—আর কোনও শব্দ পাচ্ছ না? শাঁই শাঁই পন্‌ পন্‌...।
—পাচ্ছি তো। এটা বোধহয় ফুলের গন্ধ ছুটে যাচ্ছে?
—এই তো, ঠিক ধরেছ। রাতের বেলাও শুনতে পাবে, চাঁদ ডুবে যাওয়ার শব্দ... গব্‌ গব্‌ গবা—স্‌। 
—কিন্তু তোমার পাশে ওই শিশিটা কীসের?
—ওটা তোমার কাজের না। ওতে ছায়া ধরা আছে। 
—কেমন ছায়া?
—কত রকমের ছায়া জানো তুমি? 
—অ-নে-ক। গ্রীষ্মের ভাজা রোদে শুকনো ছায়া, হাল্কা মেঘের পানসে ছায়া, চাঁদের ছায়া, চিলের ছায়া, কাগের ছায়া, বগের ছায়া...।
—ওরে থাম রে। বুঝেছি, বুঝেছি। 
—তোমার কাছে কীসের ছায়া?
—এটা কাঠবুড়োর কাঠের। শান্ত একটা কাঠ পুষেছিল সে। ওতে যে ফুটো ছিল, তার থেকে গন্ধও বেরত। ওটাই ধরা হয়েছিল অনেক কষ্টে। কাঠবুড়োর নজর এড়িয়ে। দেখতে পেলেই মাথায় কাঠের বাড়ি মেরে দিত।
—কত দাম? চোদ্দ আনা?
—এঃ, এখন আনা কোথায় পাওয়া যায়? ২ হাজার টাকা দাম। তাও ভাঙা নোট দিতে হবে। ২ হাজারের নোট চলবে না। 
—অত দাম দিয়ে কেউ কিনবে? 
—আলবাৎ কিনবে। এই তো হেড্‌ আফিসের বড়বাবু বরাত দিয়ে রেখেছে। তোমার জানালা থেকে ফেরার পথে দিয়ে যাব। তবে একটু সাবধানে যেতে হবে। কামড়ে না দেয়। 
—কেন?
—আরে এখনও বড্ড হাউমাউ করে। সেই যে গোঁফ চুরি যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল, সেটা এখনও ভুলতে পারেনি। অফিসে কোনও কাজকম্ম নেই। শুধুই ভাবে, নোংরা ছাঁটা, খ্যাংরা ঝাঁটা শ্যামবাবুদের গয়লার গোঁফটা কেউ নাকি ওর নাকের নীচে লাগিয়ে দিয়ে গেছে। তবে হ্যাঁ বলতেই হবে, দুটো জিনিস বড়বাবুর থেকে তোমরা মোক্ষম শিখেছ। এক, গোঁফ দিয়ে যায় চেনা। আর দুই, কাউকে বেশি লাই দিতে নেই, সবাই চড়ে মাথায়। 
—লাই কী গো?
—লাই জানো না? তোমাকে যেটা দিয়ে আমরা বিগড়ে দিয়েছি। তুমি ইস্কুলে যাও না, পড়াশোনা করো না, মাস্টারমশাইদের কথাও শোনো না। 
—ও সব আমার ভালো লাগে না।
—ভালো না লাগলেও অনেক কিছু করতে হয়। না হলে গঙ্গারামের মতো অবস্থা হবে।
হি হি করে হেসে ফেলল সদানন্দ। গঙ্গারামকে কিন্তু ওর বেশ লাগে। রং কালো, দেখতে প্যাঁচার মতন, আর ওর মতোই জ্বরে ভোগে...। কিন্তু উনিশবার ম্যাট্রিক দিয়েছে! ভাবা যায়! উ-নি-শ বার! সদানন্দর অবশ্য এখনও ম্যাট্রিক দেওয়ার বয়স হয়নি। তবে সৎপাত্রের লোকটাকে ওর ভারি দুষ্টু মনে হয়। কেমন বেঁকাভাবে গঙ্গারাম আর ওর বাড়ির লোকেদের নিন্দা করে! ‘আমার মোটেই গঙ্গারামের মতন অবস্থা হবে না।’
—পড়াশোনা না করলে তাই হবে। 
—কিন্তু আমার যে ইস্কুলের পড়া পড়তে ভালো লাগে না।
—আর একবার এমনটা বলতে শুনি, কাতুকুতু বুড়োকে পাঠিয়ে দেব। 
—ওরে বাবা, তুমি ওকেও চেনো নাকি?
—আলবাৎ চিনি। সারাদিন বিদঘুটে গল্প শোনাবে। আর তাতে না হাসলে লম্বা পালক দিয়ে কাতুকুতু দেবে। 
—ইস্‌! মা এমন বুড়োকে বাড়িতে ঢুকতেই দেবে না!
—সে ঠিক কায়দা করে ঢুকে যাবে। গতকাল সাপের খেলা দেখনি?
—দেখেছি তো। এসেছিল বাড়িতে। বাবা ডেকে নিয়ে গেল... বলল, চল সাপুড়ে এসেছে।
—নাম কি ছিল সাপুড়ের?
—এঃ, নাম জিজ্ঞেস করে কেউ সাপের খেলা দেখে নাকি?
—ভাবো... ভাবো...।
মাথায় চাপ দিতে মোটেও ভালো লাগে না সদানন্দর। খালি মনে পড়ছে সাপদুটোর কথা। সাপুড়েটা বারবার বলছিল, এই সাপের শিং নেই, নোখ্‌ ঩নেই। একটার তো চোখও নেই বলল। শুধু নাকি দুধ-ভাত খায়। অনেকক্ষণ ছিল। তারপর বেরিয়ে গেল। তখন কি কিছু বলল? 
—ভেবে দেখো, বেরনোর সময় কী বলল?
—মনে পড়ছে না। ও হ্যাঁ... দাঁড়াও। বলল, বাবু আমি সব জায়গায় সাপের খেলা দেখিয়ে বেড়াই। যারা আমাকে ভালোবাসে, তারা মনে করলেই তাদের কাছে চলে যাই। আর... আর... হ্যাঁ, নামটা বলল বটে। ঠিক তো! ওর নাম ছিল বাবুরাম।
পাখিরা কি হাসে? সদানন্দর মনে হল, কিচিরাম হাসছে। আরে তাই তো! বাবুরাম সাপুড়ে... ওই তাহলে এসেছিল?
—আমরা তোমার আশেপাশেই আছি। তুমিই বুঝতে পারো না। তুমি হয়তো লালচাঁদকে দেখছ, কিংবা ওই কালো পিঁপড়েটা... যাকে তুমি ব্লটিং পেপার দিয়ে বাঁচিয়েছিলে। ওদের তুমি ভালোবেসেছ বলেই না দেখতে পেয়েছ! আর একটু এদিক ওদিক তাকাও, দেখবে আমরা সবাই তোমার খুব চেনা। অনেক বন্ধু তোমার। 
সত্যিই তো, এমনটা কখনও ভাবেনি সদানন্দ। বাবুরাম সাপুড়ে বাড়ি ঘুরে চলে গেল, ও বুঝতেও পারল না! তবে সদানন্দর সাপের খেলাটা মোটেই খুব ভালো লাগেনি। সাপদের ধরে রাখা বুঝি ভালো? পারবে বিষাক্ত সাপেদের আটকে ওদের দিয়ে খেলা দেখাতে? বড়রাই তখন যাবে দুদ্দাড় করে পালিয়ে। এদের এমন সাপ চাই, যারা ঢুঁসো মারবে না, কামড়াবে না, গুটিসুঁটি মেরে থাকবে... ওদের উপর হম্বিতম্বি করেই এদের আনন্দ। ফোঁস করলেই হল। সঙ্গে সঙ্গে গুটিয়ে যাবে।
—আচ্ছা, তুমি বলছ তোমরা সবাই আমার আশেপাশেই আছ। বাবুরামকে তো চিনলাম। আর কে আছে?
—কেন? রাতের বেলা ঠিক ন’টার সময় চ্যাঁ চ্যাঁ ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ শুনতে পাও না?
—পাই তো। প্রথম প্রথম খুব ভয় পেয়ে যেতাম। তারপর মা বলল ওটা নাকি প্যাঁচার ডাক।
—প্যাঁচা নয়, ডাকে প্যাঁচানি। তবে প্যাঁচাও থাকে। সে শুধু প্যাঁচানির ডাক শোনে।
—আরিব্বাস! মাজা গলা চাঁচা সুর?
—হুমম, আহ্লাদে ভরপুর।
—ঠিক তো। আর... আর...?
—কেন? জগমোহন, শ্যাম বাগচি, আদ্যানাথ... সবাইকেই তো তুমি চেনো।
—ও মা, ওরা তো সব দাদুর বন্ধু ছিল। আদ্যানাথ জেঠু অবশ্য একটু ছোট। ঠিকানা জিজ্ঞেস করলেই ভীষণ রেগে যেত। ডেঁপো ছেলেরা রাস্তায় দেখলেই জিজ্ঞেস করত... ও দাদু, বিপিনদের বাড়িটা কোথায় বলতে পারো? কিংবা আমড়াতলাটা কোথায় জানো? আর সেই শুনেই আদ্যানাথ জেঠু লম্বা ছাতাখানা নিয়ে তাড়া করত।
—এই তো মনে পড়ছে। আরও ভাবো। মনে পড়বে। কেন, সীতানাথকে মনে নেই?
—না তো!
—আমি কিন্তু তোমাদের রান্নাঘরের ঘুলঘুলি থেকে দেখেছি সীতানাথকে তোমাদের বাড়ি আসতে। তোমার দাদু খুব কথা বলত তাঁর সঙ্গে।
—দাদুর তো অনেক বন্ধু ছিল। আমার ওদের সবার নাম জানা নেই। একজনের কথা মনে পড়ছে। দাদুর থেকে অনেক বেশি থুত্থুড়ে। মারা যাওয়ার দিনও এসেছিল। খালি খালি আকাশপানে চেয়ে নাক টানে। যেন গন্ধ শুঁকছে। 
—ওরে পাগল, উনিই তো সীতানাথ বন্দ্যো। বৃষ্টি না হলেই আকাশের গায়ে টক টক গন্ধ আছে কি না শোঁকে। 
—ইস্‌! আবোল তাবোলটা তখন পড়া থাকলে ঠিক চিনে নিতাম। অনেকদিন দেখতে পাইনি।
—সে তো তুমি ষষ্ঠীচরণকেও অনেকদিন দেখোনি। 
—যাঃ, ষষ্ঠীচরণকে তো আমি চিনিই না।
—ওকেও চেনো। মনে নেই একবার পুজোর আগে অনেকগুলো শিউলিফুল তুলে এনেছিলে। সেগুলো দাওয়ায় রাখা বড় চৌকির তলায় ঢুকে গিয়েছিল। 
—মনে থাকবে না? ওটা তো পাশের বাড়ির মিমি দুষ্টুমি করে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। ওর নীচ গলে যাওয়াই যায় না। খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। 
—সেই দুঃখ কীভাবে কাটল? 
—অবিনাশকাকার এক বন্ধু এসেছিল বাড়িতে। সে তখন....
—তখন কী? এক হাতেই বড় কাঠের চৌকিটা তুলে তোমার শিউলিগুলো বের করে দিয়েছিল তো?
সদানন্দ আর কথা বলতে পারছে না। সত্যি তো! এও কীভাবে সম্ভব? অবিনাশকাকার বন্ধু ষষ্ঠীচরণ? হাতি লোফেন যখন তখন! কিন্তু অবিনাশকাকা তো বলেছিল, একদিন কলকাতার পথেঘাটে আলাপ হয়েছিল ষষ্ঠীচরণের সঙ্গে।
—কোথায়?
—অ্যাঁ?
—কলকাতার কোথায় দেখা হয়েছিল?
—ধুস্‌, আমার এত মনে নেই। 
—বেনিয়াটোলায়। 
—হুম, অবিনাশকাকা এমনই কোনও নাম বলেছিল। আর বলেছিল, ও নাকি মস্ত পালোয়ান।
—এবার পালোয়ানের শেষ লাইনটা মনে করো... দেখবে যদি আপন চোখে যাওনা কেন...?
‘বেনিয়াটোলা!’ চিৎকার করে উঠল সদানন্দ। আরিব্বাস। সুকুমার রায় এভাবে তার আশেপাশে আছেন! ভাবতেও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে ওর। সুকুমার রায়ের লেখায় ডানপিটে ছেলের কথা পড়েই ওর মনে আসে হোঁৎকা আর কোঁৎকার কথা। দু’ক্লাস উঁচুতে পড়ে। আসল নাম সদানন্দ জানে না। কিন্তু ইস্কুলের মাস্টাররা ওদের জ্বালায় অস্থির। এই বেঞ্চির উপর থেকে লাফিয়ে নামছে, তো আবার এর ওর শ্লেট কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলছে। আর আছে নন্দগোপাল। ওরই ক্লাসে পড়ে। এতদিন সদানন্দ বুঝতেই পারত না, সবাই ওকে কুমড়োপটাশ বলে কেন ডাকে। এখন আবোল তাবোল পড়ে বোধটা হয়েছে। আর সঙ্গে আমোদও। সত্যিই নিয়মহারা হিসাবহীন এ লেখা। মা বলে, ছোটবেলায় পড়েছে। দাদুও বলত পড়েছিল। আর খুব আনন্দ পেয়েছিল। মামাও বলে একই কথা। আর মামা আবোল তাবোলের কথা বললেই পেটের ভিতর থেকে সোডার ভুরভুরির মতো হাসি বেরিয়ে আসে সদানন্দর। তখন খালি মনে পড়ে, ‘গুড় গুড় গুড় গুড়িয়ে হামা খাপ্‌ ঩পেতেছেন গোষ্ঠ মামা।’ সদানন্দ ভাবে, এই বইয়ের আগে কেউ কি জানত, বদ্যিরা আলুভাতে খায় না! নিমগাছে শিম হয়। সদানন্দর খুব জানতে ইচ্ছে হয়, ফুটোস্কোপটা কী জানতে। বোম্বাগড়টাই বা কোথায়? বোম্বাইয়ের কাছাকাছি কোথাও? সেখানকার রাজা নাকি ছবির ফ্রেমে আমসত্ব ভাজা ঝুলিয়ে রাখে, আর জোছনা রাতে সবাই চোখে আলতা মাখে! এ কেমন দেশ? পান্থভূতের জ্যান্ত ছানাও কি ওই দেশে মেলে? জানে না সদানন্দ। কিন্তু জানতে বড় ইচ্ছে হয়। 
—অ্যাই ভোলা, ঘুমিয়ে গেলে? নাকি আবার দুঃখ পেয়েছে?
কিচিরামের কথায় মাথা নাড়ল সদানন্দ। ও ভাবছে। সেটা বুঝেছে কিচিরামও। 
—এত ভেবো না। কুল পাবে না। আর তোমার বয়সও নয় এতকিছু ভাবার। সুকুমার রায় অবশ্য অনেক কম বয়সেই ভেবেছিলেন। ছোট্টবেলায় ভবন্দোলার মতো জন্তু মনে মনে তৈরি করেছিলেন তিনি। সে কেমন দেখতে, তা আমি জানি না। কিন্তু ভেবেছিলেন যখন, কোনও না কোনও দুনিয়ায় সত্যিই সেটা ছিল। ঠিক যেমন রামগরুড়ের ছানা বা হুঁকোমুখো হ্যাংলা। ভীষ্মলোচন শর্মার গানের কথা পড়ে এত আনন্দ পাও... কিন্তু এ গান সে গান যে নাও হতে পারে, সেটা ভেবেছ কি?
—অন্য আবার কেমন ভাবব?
—গান তো GUN-ও হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে দিল্লি থেকে বার্মা তো শুধু বন্দুকের আওয়াজই শোনা গিয়েছিল। তাহলে সেটা মানুষ মারার গান একেবারেই নয় বলছ?
—বিশ্বযুদ্ধ ইতিহাস বইতে পড়েছি একটু একটু। কিন্তু সেটা মজার কবিতায় এভাবে কেন থাকবে? তুমি ঠিক বলছ তো?
—জানি না। কিন্তু হতেও তো পারে! কখনও ভেবেছ, নন্দ খুড়োর কথা? ওকে নিয়ে কবিতা পড়ে কতই না আনন্দ পেয়েছ। সব সময় হাসত। কিন্তু হাত দেখিয়ে যেই ফিরে এল, তাঁর সব হাসি উধাও। ভেবে দেখো তো... ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা কি হাত দেখে বলে দেওয়া যায়? আমি কি বলতে পারি, কবে মরব? কী হবে ওসব ভেবে? সুকুমার রায় তো ওটাই বুঝিয়েছেন। 
এতশত সদানন্দ ভাবতে পারে না। বুঝতেও পারে না। কিন্তু কিচিরামের কথা শুনে মাথা ঝিমঝিম করছে। 
—সাদাকে কেন লাল বলেছ, এটাও নাকি ঝগড়ার কারণ? সে নিয়েও তোমরা যুদ্ধু করো! নাক ডাকা নিয়ে ঝামেলা তোমাদের, আবার পোষা বেড়ালগুলো কেন বেজায় হুলো, সে নিয়েও মারামারি করো! উনি বুঝিয়েছেন, ক্লু দিয়েছেন, মজাচ্ছলে। ভাবটা এমন, যে পারো বুঝে নাও।
আর পারছে না সদানন্দ। এবার রেগে রেগে যাচ্ছে। পিঁপড়ের বাসা ভেঙে দেওয়ার জন্য ঠিক যেভাবে ছিকুকে মেরেছিল, সেভাবেই মারতে ইচ্ছে করছে দুষ্টু লোকগুলোকে। মনে হচ্ছে হাতের কাছে যা আছে, ভেঙে ফেলবে এবার। কিচিরাম কিন্তু বলেই যাচ্ছে... ‘চণ্ডীদাসের খুড়োর কলটা কী জানো? টোপ। খুব দরকারি জিনিসের টোপ সামনে ঝুলিয়ে দৌড় করানো। তুমি ছুটে যাবে তার পিছনে। কিন্তু পাবে না। আর ওই টোপ ঝুলিয়ে তোমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেবে দুষ্টু লোকেরা। আর ওরাই তো মাথার উপর বসে থাকে। ওরাই রাজা। ওরা চাইলে আমাদের দেশে একুশে আইন চলে। ভুল করে পড়ে গেলেও পেয়াদা ধরে, জরিমানা হয়। পদ্য লিখলে বন্দি করে রাখে। ওদের মতো তুমি নও ভোলা। কখনও হয়োও না।’
—না না, আমি মোটেও অমন হতে পারব না। তাহলে যে তোমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারব না! তোমাদের শুনতে পাব না। তোমাদের দেখতেও পাব না। 
—ঠিক বলেছ। তাহলে এবার আমি যাই? বড়বাবুকে ছায়ার শিশিটা পৌঁছে দিতে হবে। 
—এখনই চলে যাবে?
—যেতে তো হবেই ভোলা।
—আবার কবে আসবে?
—আসব... যখনই আমার কথা মনে হবে, জোরে জোরে বলবে দেড়ে দেড়ে দ্রুম, আমি ঠিক চলে আসব।
স্বস্তি পেল ভোলা। কাল থেকেই বোধহয় ইস্কুলে যেতে হবে। মনটা খারাপ খারাপ লাগছে। আবার মনে হচ্ছে, ওখানে গিয়ে দেওয়ালের ফাটলে থাকা পিঁপড়েগুলোর সঙ্গে দেখা হবে। পুরনো বন্ধু... সেও ভালো। খিদে পাচ্ছে সদানন্দর। দূর থেকে মনে হচ্ছে কেউ যেন ডাকছে... সদু, সদু, সদু।
ধড়মড় করে উঠে বসল সদানন্দ। মা সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ধাঁ করে চোখ দুটো জানালার দিকে চলে গেল। জানালার শিকগুলো ফিরে এসেছে। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল ও? জানে না। অনেকক্ষণ কি ঘুমিয়েছে? কিচিরাম কখন গেল? অনেক প্রশ্ন ঘুরছে মাথার মধ্যে।
—আজ তোর জন্য অন্যরকম খাবার এনেছি। দ্যাখ্‌, খেতে ভালো লাগে কি না?
সদানন্দ দেখল, মা ওর জন্য পাউরুটি আর ঝোলাগুড় নিয়ে এসেছে। মনটা আনচান করে উঠল... সবার চাইতে ভালো...। 
—জানিস, এক দাদু এসেছে। অনেক বয়স। আমরা তো চিনিই না। উনি বললেন, ময়মনসিংহে থাকতেন তোর ঠাকুর্দার বাবার পাশের বাড়িতে। নাম বললেন চণ্ডীদাস। আমার তো দেখেই কেমন লাগল। তোর ঠাকুর্দার কাছেও কখনও নাম শুনেছি বলে মনে হয় না। এত্ত বয়স, এখনও...। তাও যখন এসেছে, মুখের ওপর তো আর দরজা বন্ধ করে দেওয়া যায় না। খুব আস্তে আস্তে হাঁটে। কথা কিন্তু দিব্যি বলতে পারে। শুধু অনেকগুলো দাঁত নেই। বলছেন, চক্কোত্তির ছোট নাতিকে দেখতে এসেছি। তোকে খুব দেখতে চাইছেন। দাওয়ায় বসে মিমির সঙ্গে গল্প করছেন। এটুকু সময়েই ও মেয়ে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলেছে। হ্যাঁ রে, যেতে পারবি বাইরে?
খেতে খেতে মাথা হেলাল সদানন্দ। পাউরুটি-ঝোলাগুড়ের স্বাদটা আজ অমৃতের মতো লাগছে। এবার যাবে ও। চণ্ডীদাসদাদুকে দেখতে। জিজ্ঞেস করবে খুড়োর কথা। সেই কলের কথা।
—এসো ভায়া... বসো।
মাদুর বিছিয়ে দাওয়ায় বসে আছেন দাদু। পাশে বসে মিমি। মিহি গলায় সে পড়ছে, ‘মনটা আমার বড্ড নরম, হাড়ে আমার রাগটি নেই/তোমায় আমি চিবিয়ে খাব, এমন আমার সাধ্যি নেই।’
আজ মিমির পড়া শুনতে ভারি ভালো লাগছে সদানন্দর। 
চণ্ডীদাসদাদু বলছেন, ‘জ্বর কমে গেছে তো দাদুভাই? এবার একদম সুস্থ হয়ে ওঠো। এত বছরে একজনের খবর পেলাম যে আমাদের কথা, ছোট বড় সবাইকে নিয়ে ভাবতে পারে। তাই তাকে না দেখে পারলাম না।’
—আচ্ছা, তুমি কি সত্যি?
ফোকলা দাঁতে হেসে ফেললেন চণ্ডীদাস—‘তিন সত্যি।’
—আর হাঁসজারু? ষষ্ঠীচরণ? শিবঠাকুরের দেশ?
—মনের কাছের যদি হয়, তাহলে সেও সত্যি। তবে হ্যাঁ, তার জন্য মনটা যে ভালো হতে হবে। 
—তুমি কার কাছে খবর পেলে?
—আমি তো খবর পেলাম খেয়াল স্রোতে। আর ক’টা দিনই বা বাঁচব। আজকে আমার মনের মাঝে/ধাঁই ধপাধপ তবলা বাজে। সুকুমার রায়ও বুঝেছিলেন, আর বেশি সময় নেই। তাই তিনি আবোল তাবোলের শেষে অমন কয়েকটা লাইন লিখে যেতে পেরেছিলেন। সেই একশো বছর আগের কথা। বই ছেপে বেরল, সেটাও দেখে যেতে পারেননি তিনি। আর ক’টা বছর লোকটা বাঁচলে তোমাদের সোনায় মুড়ে দিতেন দাদুভাই। ওই বয়সেই যা করে গিয়েছেন, আর একজন সুকুমার লাগবে সবটা উদ্ধার করতে।
মনটা আবার খারাপ খারাপ লাগছে সদানন্দর। 
—জানি দাদুভাই, তোমার আনন্দ তোমার মতন। কেউ বুঝবে না। কিন্তু ওই হাওয়া বাতাস বুঝবে, স্বপনদোলা বুঝবে, পিঁপড়ে, কাক, চড়াই বুঝবে। এমনটাই থেকো। আমার যে গানের পালা এবার সাঙ্গ হতে চলল। আজ আসি? মা এতক্ষণ মন দিয়ে দু’জনের কথা শুনছিল। নাকি বোঝার চেষ্টা করছিল? এবার হাঁ হাঁ করে উঠল। ‘ওমা যাবেন কী? দুপুরবেলা একমুঠো অন্ন না নিলে গৃহস্থের অকল্যাণ হবে যে!’
—আমার থেকে তোমাদের অকল্যাণ হবে না মা। আশীর্বাদ করে গেলাম।
ধীরে ধীরে বৃদ্ধ শরীরটা বেরিয়ে যাচ্ছে। সদানন্দর কানে আসছে মিমির মিহি কণ্ঠ... ও দুলে দুলে পড়ছে... আদিম কালের চাঁদিম হিম/তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম।
10Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা