প্রচ্ছদ নিবন্ধ

বিসমিল্লার বেনারস

আগামী কাল ‘ভারতরত্ন’ বিসমিল্লা খাঁর প্রয়াণবার্ষিকী। বেনারসের অনেক অলিগলি ঘুরে পৌঁছতে হয় সানাই সম্রাটের বাড়িতে। আজও তা হেরিটেজ তকমা পায়নি। সেই বাড়ি ঘুরে দেখার ফাঁকে নাতি নাসির আব্বাস বিসমিল্লা খাঁর সঙ্গে আলাপচারিতায় অনিরুদ্ধ সরকার।
 
সানাই সম্রাটের বাড়ির সন্ধানে
বেনারসের গলির খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। গলির গোলকধাঁধায় ঘুরে ঘুরে হাজির হয়েছিলাম বেনিয়াবাগে। এখানে সরাই-হারহর এলাকার ভিখা শাহ গলির শেষপ্রান্তে সাদামাঠা দোতলা বাড়িতেই থাকতেন ‘সানাই সম্রাট’ বিসমিল্লা খাঁ। ফোনে কথা হয়েছিল বিসমিল্লা খাঁর নাতি, নাসির আব্বাস বিসমিল্লা খাঁর সঙ্গে। বাড়ির দরজায় অপেক্ষা করছিলেন। এককালে সেই দরজার রং ছিল আকাশি। পরে বেগুনি হয়ে এখন খয়েরি। ‘দাদাজি’র প্রতি সম্মান জানাতে  নিজের নামের শেষে ‘বিসমিল্লা খাঁ’ ব্যবহার করেন তিনি। তাঁকে অনুসরণ করে পৌঁছলাম চিলেকোঠার একটি ছোট্ট ঘরে। এই ঘরেই এক সময় থাকতেন তাঁর দাদাজি, বিসমিল্লা খান। সুরের যাদুকর। 
ছোট ঘরের দেওয়ালময় খান সাহেবের  বিভিন্ন সময়ের ছবি। রয়েছে বিশিষ্ট ফটোগ্রাফার রঘু রাইয়ের তোলা ছবিও। একদিকে একটি খাটিয়া। খাটিয়ার উপরে রাখা একটি সানাই এবং ছ’টি বাঁশি। ঘরে রয়েছে খান সাহেবের দৈনন্দিন জীবনযাপনের কিছু সামগ্রী, বইপত্র ও অজস্র স্মারক। ছোট্ট ঘরের নীরবতা ভেঙে কথা শুরু করলেন নাসির, ‘দাদাজি রেওয়াজের জন্য একটি সানাই সব সময় নিজের কাছে রাখতেন। এমনকী ঘুমানোর সময়েও মাথার কাছে সানাই থাকত। দাদি মারা যাওয়ার পর তাঁর প্রতি আবেগ-ভালোবাসায় সানাইয়ের একটি নামও দিয়েছিলেন—‘বেগম’। দাদাজি মারা যাওয়ার পর দাফনের সময় সানাইটিও কবরে দেওয়া হয়। প্রাণের টান ছিল যে।’

স্মৃতি-পথ ধরে
নাসির আব্বাস নিজেও একজন বিখ্যাত সানাই শিল্পী। তালিম নিয়েছিলেন দাদাজির কাছেই। তাঁর সঙ্গেই ঘুরেছেন দেশ-বিদেশের হরেক জায়গায়। নামজাদা নানান অনুষ্ঠানে। দাদাজিকে নিয়ে তাঁর অজস্র স্মৃতি। চিলেকোঠার ঘরে বসেই মেলে ধরলেন একটি অ্যালবাম। আঙুল বুলোতে লাগলেন একের পর এক ছবিতে। প্রতিটি ছবির সঙ্গে জুড়ে কতশত স্মৃতি। একটু থেমে শুরু করলেন পুরনো দিনের কথা। যেন স্মৃতি-পুকুরে ডুব দিয়ে তুলে আনছেন একের পর এক মণি-মুক্তো। বললেন, দিলীপ কুমারকে দাদাজি কী বলতেন জানেন? ‘ইউসুফ’। লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে ছিল আন্তরিক হৃদ্যতা। এমনকী, সত্যজিৎ রায়ের ‘জলসাঘর’ সিনেমায় সানাইও বাজিয়েছেন দাদাজি। স্মৃতিচারণের ফাঁকেই শোনালেন গান গেয়ে, দাদাজির সুরে।

বিসমিল্লার বেনারস
বারাণসী ছিল খাঁ সাহেবের প্রাণাধিক প্রিয়। কখনও হেঁটে, কখনও সাইকেলে বা রিক্সায় চড়ে চষে বেড়াতেন গোটা শহর। যাঁর সঙ্গেই দেখা হতো, একগাল হেসে মেতে উঠতেন আলাপচারিতায়। মৃদুভাষী, মিশুকে এই মানুষটি সমগ্র বেনারসবাসীর কাছে ছিলেন তাঁদের প্রিয় ‘ওস্তাদজী’। আসলে, বেনারস ছিল দাদাজির হৃদয়ে—বলছিলেন নাসির। সর্বধর্মের মানুষের কাছ থেকে ‘সবকা সাথ, সবকা বিশ্বাস’ আদায় করেছিলেন তিনি। বিদেশের হাজারো প্রলোভনকে মুখের উপরে ‘না’ বলে আজীবন থেকে গিয়েছিলেন বেনারসেই। প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, প্রাণাধিক প্রিয় শহর-দেশকে তিনি কতটা ভালোবাসেন। দাদাজিকে নিয়ে যেতে একবার প্রস্তাব এসেছিল আমেরিকা থেকে। তারা বলেছিল, মার্কিন মুলুকেই থাকবেন খানসাহেব। নিয়মিত কোথাও না কোথাও বাজাবেন। পাশাপাশি, ওখানকার বিভিন্ন স্কুলে মিউজিক শেখাবেন। প্রস্তাব শুনে বিসমিল্লার সাহেব পাল্টা জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমায় বেনারসের গঙ্গা এনে দিতে পারবেন? তাহলে আমি যাব।’
নাতি নাসির আব্বাসের কথা শুনতে শুনতে মনে পড়ল পণ্ডিত রবিশঙ্করের বেনারসের স্মৃতি রোমন্থনের প্রসঙ্গ। এক জায়গায় তিনি লিখছেন—‘এক শীতের সকালে বেনারসের গঙ্গায় নৌকাবিহার করছি। সে সময় আমার সঙ্গে ছিলেন কাশীর বিখ্যাত দিকপাল সব পণ্ডিত এবং আচার্যরা। আমি নিজের বাল্যস্মৃতির কথা বলছিলাম। সবাই একের পর এক ঘাট দেখিয়ে বিভিন্ন জনের নাম করছিলেন। কেউ বা বলছিলেন শিবের শহর, কেউ আবার বলছিলেন রাজা হরিশচন্দ্রের শহর। একজন ব্যাসকাশী দেখিয়ে বললেন, সেখানে থাকতেন স্বয়ং বাৎসায়নদেব। আমি তখন দশাশ্বমেধ ঘাটের সিঁড়িগুলির দিকে চেয়ে বলেছিলাম, ‘এই সব মন্দিরের গায়ে থাকেন বিসমিল্লা খাঁ।’

রঘুপতি রাঘব রাজা রাম
ক’দিন আগেই পেরিয়ে এলাম আরও একটি স্বাধীনতা দিবস। ভারতের প্রথম স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গেও জড়িয়ে বিসমিল্লা খাঁর স্মৃতি। প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস এলেই দাদাজির কথা ভীষণ মনে পড়ে নাসিরের। কেন? জবাবে এক ঐতিহাসিক কাহিনি শোনালেন তিনি—‘১৫ আগস্ট, ১৯৪৭। স্বাধীনতা পেল ভারত। সেই উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানান খান সাহেব ও তাঁর ভাইকে। শুনেই সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেন তিনি। স্পষ্ট কথায় বলেন, আমি মহরমের দিন ছাড়া দাঁড়িয়ে সানাই বাজাই না। ফের তাঁকে অনুরোধ করেন জওহরলাল নেহেরু। বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় বোঝাতে সক্ষম হন দিনটির গুরুত্বের কথা। শেষ পর্যন্ত তাঁর কথায় রাজি হন দাদাজি। তাঁর অনুপ্রেরণা ছিলেন গান্ধীজি। সেদিন রাগ ভৈরবীতে বেজে ওঠে, ‘রঘুপতি রাঘব রাজা রাম...।’ লর্ড মাউন্টব্যাটেন পর্যন্ত সম্মানের সঙ্গে স্বাধীনতা দিবসের এই ঘটনাটি লিপিবদ্ধ করেছেন।’
কিছুক্ষণের বিরতি। ফের কথা শুরু করলেন নাসির আব্বাস—‘১৯৫০ সালে ভারতের প্রথম সাধারণতন্ত্র দিবসেও সানাই বাজিয়েছিলেন দাদাজি। কী বাজাবেন, তা ভেবে সেদিন প্রথমে অত্যন্ত চিন্তিত ছিলেন তিনি। একরাশ চিন্তা নিয়ে একদিন বেনারসের ঘাটে বসেছিলেন তিনি। হঠাৎ তাঁর কানে ভেসে আসে, মাঝিদের গলায় মন মাতাল করে দেওয়া সুর। ঠিক করেন, এই সুরই বাজাবেন। বাজিয়েওছিলেন সেই দরদি সুর—‘‌গঙ্গা দুয়ারে বধাইয়া বাজে...।’ 

কামরুদ্দিন থেকে ‘বিসমিল্লা’
বিসমিল্লা খাঁর নামের পিছনেও কাহিনিও বড় অদ্ভুত। পয়গম্বর খান ও মিঠানের দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন বিসমিল্লা। ১৯১৩ সালের ২১ মার্চ বিহারের দুমরাঁওয়ে জন্ম হয় তাঁর। দাদা সামসুদ্দিনের সঙ্গে নাম মিলিয়ে নবজাতকের নাম রাখা হয় কামরুদ্দিন। কিন্তু ফের নাতি হওয়ার খবর শুনে রসুলবকশ অস্ফুটে বলে ওঠেন ‘বিসমিল্লা’! সেই শব্দটিই যে নাম হয়ে যাবে এবং সেই নামেই তিনি সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধ হবেন, তা বোধহয় কেউই জানতেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়ও তাই। পিতামহ রসুলের দেওয়া ‘বিসমিল্লা’ নামটিই থেকে যায়।  আজীবনের মতো হারিয়ে যায় কামরুদ্দিন নামটি। তানসেনের পূর্বনাম রামতনুর মতোই।
সানাই সম্রাটের পূর্বপুরুষরা ছিলেন দুমরাঁওয়ের রাজ ঘরানার বিখ্যাত সানাইবাদক। তাঁর তিন মামা বিশ্বনাথ মন্দিরে সানাই বাজাতেন। মাত্র সাত বছর বয়সে লেখাপড়ার জন্য বিহার ছেড়ে মামাবাড়ি বেনারসে চলে আসেন বিসমিল্লা। নাতির কথায়, ‘দাদাজির দিন শুরু হতো প্রতিদিন ভোরে গঙ্গাস্নানের মধ্যে দিয়ে। স্নান সেরে যেতেন মসজিদে, নমাজ পড়তেন। তারপর সারা দিন বালাজি মন্দিরে সানাই বাজাতেন। এটাই ছিল ওঁনার জীবনে পূর্বপুরুষদের প্রভাব।’

‘দাতা’ বিসমিল্লা
আর্থিকভাবে বেশ অনটনের মধ্যে দিন কাটছে সানাই সম্রাটের বংশধরদের। কথায় কথায় নাতি নাসির আব্বাস জানালেন সেই দুরাবস্থার কথা। তাঁর কথায়, খানসাহেবের রেকর্ডের রয়্যালটির টাকাও ঠিকমতো মেলে না। বিসমিল্লা খাঁ একেবারে হিসেবি মানুষ ছিলেন না। তবে খুব বড় মনের অধিকারী ছিলেন তিনি। বিসমিল্লা সাহেবের একটা বিরাট পরিবার ছিল। বেনারসে যে সমস্ত দুঃস্থ শিল্পীদের কাজ থাকত না, দু’বেলা তাঁদের নিত্য পাত পড়ত এই বাড়িতে। সারেঙ্গি বাদকদের  সুখ-দুঃখের সঙ্গী ছিলেন তিনি। দানধ্যান করতেন, কিন্তু নিঃশব্দে, নীরবে। সর্বদা মনে করতেন, ঢাক-ঢোল বাজিয়ে দান হয় না। তা আদতে প্রচার। মানুষের দুঃখের সময়ে পাশে থাকাটা কর্তব্য বলে মনে করতেন তিনি। কোনও কোনও সময় নিজের সঙ্গে এই দুঃস্থ শিল্পীদের নিয়ে মজা করে বলতেন, ‘‌বিসমিল্লা খাঁ অ্যান্ড হিজ পার্টি।’‌

সুরসাধক থেকে সু-রসিক
‘ভারতরত্ন’ বিসমিল্লা খাঁর ছায়াসঙ্গী ছিলেন নাতি নাসির আব্বাস। দাদাজির সঙ্গে ঘুরেছেন দেশ-বিদেশে। সানাইয়ে সঙ্গত করেছেন। সফরের নানান স্মৃতি হাতড়ে বললেন, ‘ব্যক্তিজীবনে খানসাহেব ছিলেন বেশ রসিক মানুষ। বেনারসকে হিন্দুস্তানি উচ্চারণে ‘বানারস’ বলা হয়। দাদাজি মজা করে বলতেন, ‘বনা রস!’ অর্থাৎ ‘যাঁহা রস বনতা হ্যায়, ওহি হ্যায় বেনারস।’ ‘রস’ মানে ‘সুরের রস’। জানেন তো, বেনারসের ডালমন্ড গলি খুবই বিখ্যাত। দাদাজি প্রায়শই বলতেন, ওই পাড়ার সুর শুনে আমার কান পবিত্র হয়ে যায়। আমি এখনও ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করলে দাদাজির কথা মনে পড়ে।’ আরও একটা কথা প্রায়শই বলতেন তিনি—‘সুরের অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। যা উপলব্ধিতে পেতে হয়।’ একবার বলেছিলেন, ‘আমার হাতে রাজ্যপাট থাকলে আমি আইন করতাম— প্রত্যেক মানুষকে সুরশিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সুরের মানুষ হতে হবে। কারণ, সুর মানুষকে ভাল করে দেয়।’
রাজনীতি থেকে শত হস্ত দূরে থাকা মানুষটি এক সাক্ষাৎকারে মজা করে বলেছিলেন, ‘যাঁরা আমাদের দেশের মাথায় আছেন, তাঁদের কোনও পরীক্ষা নেওয়া হয় না। মানুষ শুধু তাঁদের ভোট দিয়ে জেতান। কিন্তু একটা এগজামিনেশন বোর্ড থাকা দরকার। রাষ্ট্রপতি হোন বা প্রধানমন্ত্রী—পরীক্ষা সকলকে দিতেই হবে।’ কেমন হবে সেই পরীক্ষা? তা নিয়েও নিজের স্পষ্ট ধারণার কথা বলেছিলেন তিনি—‘একটা বোর্ড বা প্যানেল তৈরি হবে। সেখানে সত্যিকারের প্রতিষ্ঠিত বা শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব অর্জনকারী শিল্পীরা থাকবেন। যেমন, আলি আকবর খাঁ, রবিশঙ্কর, ভীমসেন যোশি, বিলায়েত খাঁ। আমিও থাকতে পারি। আর সেখানে কিছু শর্ত থাকবে। যেমন রাষ্ট্রপতি পদের জন্য যারা আবেদন করবেন, তাঁদের ন্যূনতম পাঁচটা রাগ ও দশটা তাল জানতে হবে। প্রধানমন্ত্রীপদের জন্য হলে তিনটে রাগ ও ছয়টা তাল জানতে হবে। আর বাকি মন্ত্রী ও আমলাদেরও কম করে একটা রাগ ও দুটো তাল জানতে হবে। এটা হবে আবেদন করার সর্বনিম্ন যোগ্যতা। এর পরে সুর‌জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব অনুসারে আসল সুরেলা মানুষটির উপর দেশশাসনের ভার নিযুক্ত করা হবে।’—এমনটাই মজাদার মানুষ ছিলেন আমার দাদাজি বিসমিল্লা খান।

সুরের কোনও ধর্ম হয় না
চিলেকোঠার সেই ঘর থেকে বের হতেই এল পরিচালক গৌতম ঘোষের ডকুমেন্টারি ‘সঙ্গে-মিল-সে-মুলাকাত’-এর প্রসঙ্গ। নাসির আব্বাসকে বললাম, ‘জানেন তো, গৌতম ঘোষের ড্রইং রুমে আজও বিসমিল্লা খাঁর একটা ছবি রয়েছে। গত মাসে দেখে এলাম। ওঁর জীবনে খান সাহেবের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে।’ একথা শুনে মৃদু হেসে বললেন—‘আমি তখন ছোটো। মনে আছে গৌতম ঘোষ একদম ঘড়ি ধরে শুটিংয়ে আসতেন, মানে পাংচুয়াল। আর ওই যে ছাদের জায়গাটা দেখছেন ওখানে শ্যুটিং হতো। দাদাজি ওঁকে খুব পছন্দ করতেন। আমার মনে আছে, একদিন দু’জনের খুব আলোচনা হচ্ছে। দাদাজি বলছিলেন, সুরের কোনও ধর্ম হয় না, তেমন শিল্পীরও কোনও ধর্ম হয় না। পারলে একটা দিন সকাল থেকে রাত অবধি একটাও মিথ্যে কথা না বলে থেকো। দেখো সেদিন আসল সুর খুঁজে পাবে। সুর হল সত্য। আর সত্যই ঈশ্বর। ভজন হোক কিম্বা নামাজ, সবই সাত সুরে বাঁধা।’
দাদাজি সব অনুষ্ঠানেই ‘রঘুপতি রাঘব’ বাজাতেন। ছিলেন গান্ধীজির পরম ভক্ত। তখন দেশজুড়ে রামমন্দির আন্দোলন চলছে। তেমনই একসময় এক সাক্ষাৎকারে দাদাজি বলেছিলেন, ‘আদবানিজির সঙ্গে দেখা হলে বলব, আপনি এখন প্রায়শই রামনাম করছেন। আর আমার প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানের শেষে অনুরোধ আসে ‘রঘুপতি রাঘব রাজা রাম’ বাজানোর। আমি তা নিষ্ঠাভরে বাজাই। অতএব আমার থেকে বেশি রামনাম বোধহয় আপনি করেননি!‌ আমি জীবনে যতবার প্রোগ্রাম করেছি, ততবার রামনাম করেছি।’ আসলে দাদাজি একজন ধর্মপ্রাণ ও নিষ্ঠাবান মুসলমান হয়েও হিন্দুদের মন্দিরে মন্দিরে সানাই বাজিয়েছেন। এক সময় বিশ্বনাথ মন্দিরে প্রাত্যহিক কাজকর্ম শুরু হতো, ‘বিসমিল্লার সানাই’ দিয়ে। জনশ্রুতি আছে জানেন, খান সাহেব ছোট্টবেলায় শিবের বেশে এক সাধুর দর্শন পেয়েছিলেন! তারপর থেকে কাশী বিশ্বনাথের প্রতি এক অদ্ভুত টান তিনি অনুভব করতেন। শুধু তাই নয়, শুনতেন রাধাকৃষ্ণের লীলাও। সানাইয়ে রাধাকৃষ্ণের লীলা পরিবেশন করতে করতে প্রায়শ বলতেন, ‘বাজাতে বাজাতে মনটা আমার বৃন্দাবনে চলে যায়।’

গঙ্গা অন্ত প্রাণ 
আমরা সিঁড়ি দিয়ে নামছি। বাড়িতে মহরমের প্রস্তুতি চলছে। সিঁড়ির শেষধাপে থামলেন নাসির আব্বাস বিসমিল্লা। একটু থেমে বললেন, ‘২০০৬’এর আগস্ট মাস। দাদাজির বয়স তখন একানব্বই। হঠাৎই একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এই সিঁড়ি দিয়েই নামিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম এখানকার হেরিটেজ হাসপাতালে। ভর্তির চারদিন পর, ২১ আগস্ট রাত আড়াইটে নাগাদ চলে গেলেন দাদাজি।’ নাসির আব্বাসের চোখে জল। চোখ মুছে বললেন, ‘গঙ্গা অন্ত প্রাণ দাদুর ইচ্ছে ছিল তাঁর দেহ যেন বেনারসের পুণ্যভূমিতেই কবরস্থ করা হয়। সেইমতো ওল্ড বেনারসের এক কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দাদুর দেহ। এক নিমগাছের ছায়াতলে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। সঙ্গে যায় ওঁর সেই সানাই, ‘বেগম’। সেটার কথা তো শুরুতেই বলেছি।’ বলতে বলতে গলা ধরে এল নাসির আব্বাসের। 

বিসমিল্লার বাড়ি মিউজিয়াম হবে?
আজও বেনারসের অনেক গলিপথ খুঁজে পৌঁছতে হয় সানাই সম্রাট ‘ভারতরত্ন’ বিসমিল্লা খাঁর বাড়িতে। এ খুবই দুঃখের। প্রোমোটারদের দাপট ও শরীকী দ্বন্দ্বে কয়েকবছর আগে ভাঙা পড়তে চলেছিল বাড়িটি। তখন অবশ্য কোনও ‘বুলডোজার বাবা’ আসেননি! একমাত্র সংবাদমাধ্যমের  হস্তক্ষেপে তাতে সাময়িক স্থগিতাদেশ পড়ে। নাসির আব্বাস বলেন, ‘বেনারসের এই বাড়িতেই জীবনের শেষদিন অবধি কাটিয়েছেন দাদাজি। এ বাড়ি ঐতিহাসিক। আমি একা কতদিন আর আগলে রাখব বলুন! একে ভেঙে ফেলার চক্রান্ত চলছে প্রতিনিয়ত। খোঁজ নিয়ে মাঝেমধ্যে দু’-একজন মানুষ আসেন। সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ছবি তোলেন। গল্প করেন। জিনিসপত্র দেখেন। তারপর চলে যান। সবাই প্রতিশ্রুতি দেন। কেউ কিছু করেন না।’ বলতে বলতে চুপ করে যান আব্বাস। চোখ ছলছল করে ওঠে। কাতর কণ্ঠে আমার হাত দুটো ধরে করুণ সুরে বলে ওঠেন, ‘স্যর, একটু দেখবেন। মোদী-যোগী অনেককেই একাধিকবার জানিয়েছি। কিছু হয়নি। আপনারা সবাই মিলে একটু চেষ্টা করুন না! বিসমিল্লা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটাকে যেন মিউজিয়াম করা যায়।” 
পড়ন্ত বিকেল। এবার ফেরার পালা। বেনারসের সেই গলিপথে হাঁটতে হাঁটতে ভারাক্রান্ত মনে একটাই কথা মনে এল—যতদিন থাকবে বেনারস, থাকবে কাশীবিশ্বনাথ, ততদিনই বেঁচে থাকবে বিসমিল্লা আর ‘বিসমিল্লার সানাই’।
11Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা