প্রচ্ছদ নিবন্ধ

বাবু কলকাতার রঙের উৎসব
সন্দীপন বিশ্বাস

ঊনবিংশ শতকে বাবু সংস্কৃতির কলকাতায় রং লেগে থাকত সারা বছর। চুনোট ধুতি পরা বাবুদের মৌতাতের রংয়ে কী আর খামতি ছিল? ঘুড়ির লড়াই, বেড়ালের বিয়ে, বুলবুলির লড়াই থেকে পায়রা ওড়ানো, বাঈ নাচ, বাগানবাড়ি, এসব ঘিরেই বাবু জীবনে অষ্টপ্রহর লেগে থাকত মৌতাতের রং। আর দোল এলে তো কথাই নেই। আবির, গুলালের সঙ্গে চলকে উঠত শরাবের পানপাত্র। বেলোয়ারি ঝাড়েও যেন নেশা লেগে যেত। তার উজ্জ্বল আলোয়, বাঈজির ঘুঙুরের বোলে আর ঠুমরির সুরে ভেসে যেত নাচমহল থেকে রাধাকৃষ্ণের মন্দির। আবির ছড়ানো নাচমহলে বাঈজির পায়ের ছন্দে পদ্মফুলের আলপনা তৈরি হতো।  সেই সব দোলবিলাস আজও ইতিহাস হয়ে আছে। 
নাচে, গানে এই যে কলকাতার দোল সংস্কৃতি, এটা নতুন মাত্রা পেল মেটিয়াবুরুজের নবাবের হোলি উৎসবের পর থেকে। হোলি খেলতে ভালোবাসতেন নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ। তিনি প্রেমিক, তিনি কবি। লখনউতে থাকতেই খেলতেন হোলি। সেই সঙ্গে লিখতেন হোলির গানও—‘মারা কানহা জো আয়ে পলটকে / আবকে হোলি ম্যায় খেলুঙ্গি।’ 
নির্বাসিত রাজা কলকাতায় চলে এলেন। এখানেও চলল তাঁর হোলি খেলা। সেই হোলি খেলাকে ঘিরে বসত গানের আসর। কলকাতার বড় বড় শিল্পীরা ছিলেন সেই আসরের নিয়মিত অতিথি। সৌরীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে যদুভট্ট, কিংবা অঘোরনাথ চক্রবর্তীর মতো বিদগ্ধরাও ছুটে যেতেন সঙ্গীত সুধার টানে। হোলির আসর সুরে সুরে জমিয়ে দিতেন সাজ্জাদ মহম্মদ। নর্তকীর ঘুঙুরের সুরে বেজে উঠত বিরহী রাধার কাতরতা। ওয়াজেদ আলি ছিল কৃষ্ণপ্রেমে বিভোর। নিজেই লিখেছিলেন নাটক, ‘রাধা কানহাইয়া কা কিসসা’। 
বাবুদের বাড়িতে প্রথমদিকে দোলকে কেন্দ্র করে যে নাচগানের আসর বসত, সেখানে সিংহভাগেরই উদ্দেশ্য ছিল সাহেবদের খুশি করা। বাবুদের বাড়িতে থাকত রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ। সকালে সেই মন্দিরে পুজো হতো। আবির কুঙ্কুম রাগে সেজে উঠতেন রাধাকৃষ্ণ। সকালে কৃষ্ণপ্রেমে রঞ্জিত হয়ে যে দোল শুরু হতো, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ফাগুয়ার রঙে লাগত নেশা। তখন কলকাতার অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তির বাড়িতেই জমিয়ে দোল উৎসব পালন করা হতো। এঁদের মধ্যে ছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, সাবর্ণ চৌধুরী, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, দিগম্বর মিত্র, বলরাম বসু, পশুপতি বসু, পীতরাম দাস, বৈষ্ণবচরণ শেঠ, রাধাকান্ত দেব, আশুতোষ দেব, নবীনচন্দ্র বসু, ভুবন নিয়োগী প্রমুখ। বহু বাড়িতে সেই আসরে গান গাইতেন গওহরজান, মালকানজান। দোলের জন্য গান লিখতেন গিরিশ ঘোষ।  একদিন সেই রং খেলা হয়ে উঠল সর্বজনীন। সাধারণ মানুষের সেই রং খেলার ছবি এঁকেছেন কবি ঈশ্বর গুপ্ত। সেই হোলির বিবরণ দিতে গিয়ে কবি লিখেছিলেন, ‘ক্রমেতে হোলির খেলা, নবীনা নাগরী মেলা, ছুটে মুটে যায় এক ঠাঁই। ...যার ইচ্ছা হয় যারে, আবির কুমকুম মারে, পিচকারি কেহ দেয় কায়।’ 
ধীরে ধীরে বাবুদের ঠাকুরদালান, নাচমহল, বাগানবাড়ি থেকে রঙের উৎসব নেমে এল মধ্যবিত্তের আঙিনায়। আগেও খেলা হতো। কিন্তু মাতামাতি শুরু হল এই সময় থেকে। তখনও কলকাতায় বেপরোয়া রং খেলা নিয়ে নানা নিয়ন্ত্রণ জারি করেছিল পুলিস। ঢুলিদের নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঢেঁড়া পিটিয়ে সতর্ক করা হতো। শহরে ঘুরে ঘুরে আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে দোল খেলার কথা বলত পুলিস।  
দোল উৎসবে জমিদার বাড়িতে খানাপিনার ব্যবস্থা থাকত অঢেল। বিভিন্ন রঙের বাতাসা, মঠ, মুড়কি, কদমা, ফুটকড়াই  ছিল স্পেশাল। ঠাকুরকে সেসব নিবেদন করা হতো। পাশাপাশি বাড়িতে বসত ভিয়েন। খাজা, গজা, বোঁদে, ক্ষীরকদম, সীতাভোগ, লবঙ্গলতিকা সহ নানা ধরনের মিষ্টি তৈরি হতো। সেই সঙ্গে থাকত, লুচি, ছোলার ডাল, এঁচোড়ের দম, ছানার তরকারি, চাটনি, পায়েস। এককথায় ঢালাও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা।
অনেকেই এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ইংরেজদের মনোরঞ্জনের মাধ্যমে সামাজিক প্রভাব ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করতে চাইতেন। তাই হয়তো ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করার পরও জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে দোল উৎসব বন্ধ হয়নি। বরং ঠাকুরবাড়ির সকলে সমবেত হয়ে নাচ-গান এবং অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তা পালন করতেন। রবীন্দ্রনাথ পরবর্তীকালে দোলকে করে তুললেন বসন্ত উৎসব। শান্তিনিকেতনের সেই উৎসব হয়ে উঠেছিল আন্তর্জাতিক। ‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল...’ গানটি আজ যেন দোলের থিম সং। 
 ছবি : তাপস কঁাড়ার
17Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা