প্রচ্ছদ নিবন্ধ

কলিকাতার বড়দিন

‘খ্রীষ্টের জনম দিন, বড়দিন নাম। বহুসুখে পরিপূর্ণ, কলিকাতা ধাম। কেরানী দেওয়ান আদি বড় বড় মেট। সাহেবের ঘরে ঘরে পাঠাতেছে ভেট। ভেটকী কমলা আদি, মিছরি বাদাম। ভালো দেখে কিনে লয়, দিয়ে ভাল দাম।’
না, নিছক ব্যঙ্গ নয়। এ ২০০ বছর আগের বাস্তব। তখনও খ্রিস্টমাসের নাম থেকে সাহেবি গন্ধ মোছেনি। সেই মাহেন্দ্র তারিখকে বাঙালির নিজস্ব পরিচয়ে পরিচিত করালেন কবি ঈশ্বর গুপ্ত—বড়দিন। ততদিনে অবশ্য শহর কলকাতায় ক্রিসমাস পালনের বয়স দুশো ছুঁইছুঁই। ঠিক কবে থেকে এই উৎসব বাবুদের প্রাণের প্রিয় হয়ে উঠল, তার সাল-তারিখ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানা যায় না। তবে সেই ভাসা ভাসা ইতিহাসেও উজ্জ্বল একজনের নাম, জব চার্নক। তাঁর হাত ধরেই কল্লোলিনীতে প্রথমবার পালিত হল বড়দিন।
সময়টা ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দ। আজকের কলকাতা তখন তিনটি গ্রাম মাত্র। সেখানে পা পর্যন্ত পড়েনি সাহেবদের। ইউরোপীয়দের বাণিজ্যকেন্দ্র তখনও হুগলি। আর চার্নক সেখান থেকে অনেক দূরে পাটনায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হয়ে বাণিজ্যের দায়িত্বে। সবে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছ থেকে বিনা করে ব্যবসার ফরমান পেয়েছে সাহেবরা। কিন্তু আচমকা সব গণ্ডগোল হয়ে গেল। মোঘল সুবেদার শায়েস্তা খাঁর তাড়া খেয়ে হুগলি ছেড়ে পালালেন চার্নক। যাওয়ার কথা ছিল বালেশ্বরে। কিন্তু মাত্র সাতাশ মাইল পেরতে না পেরতেই তাঁর চোখে পড়ল বন জঙ্গলে ঢাকা জনমানবহীন এক হাট, নাম সুতানুটি। সেখানেই ঘাঁটি গাড়লেন চার্নক সাহেব। টানা প্রায় দু’মাস। সন্ত্রস্ত দিন যাচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ খেয়াল হল, আরে, প্রভু যিশুর জন্মদিন যে বড়দিন এল বলে! শোনা যায়, সুতানুটিতে আত্মগোপনকালেই বড়দিন পালন করেন চার্নক। তখনও এ শহরের কোনও অস্তিত্ব নেই। কিন্তু ইতিহাস অনুযায়ী, কলকাতায় সেই প্রথম পালিত হল বড়দিন। তবে পাকাপাকিভাবে উৎসবের সূচনা হতে লেগে যায় আরও এক শতাব্দী।
১৬৯০ খ্রিস্টাব্দের এক ঘোর বর্ষায় জাহাজে করে এসে পাকাপাকিভাবে সুতানুটিতে জমিয়ে বসলেন চার্নক। তারপর গোবিন্দপুর আর কলিকাতা গ্রাম মিলে ধীরে ধীরে তৈরি হল টাউন কলকাতা। ভিড় জমালেন বিলেত থেকে আসা সাহেব মেমসাহেবরা। আর ধীরে ধীরে দুর্গাপুজোর মত বড়দিনও কলকাতার বড় উৎসব হয়ে উঠল। ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রথম আর্চ বিশপ রেজিনাল্ড হেবার নিজের বিখ্যাত জার্নালে উল্লেখ করেছেন সেকথা। লিখেছেন, সেই সময় ডালহৌসি এবং চৌরঙ্গি অঞ্চলের প্রত্যেক সাহেব বাড়িই দেবদারু গাছের ডাল, ফুল লতাপাতা, রুপোলি ও নানা রঙের কাগজের চেন দিয়ে সাজানো হতো। আর একটা জিনিস দেখা যেত, ‘ডলি’। হিন্দি শব্দ ডালি থেকে আসা এই অপভ্রংশের অর্থ আদতে ভেট, কবি ঈশ্বর গুপ্তের কবিতায় যেকথা আগেই লেখা হয়েছে। এছাড়া ছিল ভোজের পালা। রাধাপ্রসাদ গুপ্তের একটি লেখা থেকে জানা যায়, খ্রিস্টমাস ডিনার বা ভোজসভায় প্রধান খাদ্য ছিল ‘বোরস্ হেড’ বা শুয়োরের মাথা। সেটি পরিবেশন করা হতো রোজমেরি, বে-লিফ (তেজপাতা), আপেল আর অন্যান্য উপকরণ দিয়ে সাজিয়েগুজিয়ে। সেই গল্প অবশ্য আরেক দিন।
19Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা