প্রচ্ছদ নিবন্ধ

কলমনামা
অম্লানকুসুম চক্রবর্তী

সত্যি মিথ্যে জানা নেই। তবে এক বন্ধুর মুখে শুনেছিলাম যে, ওদের সেক্টর ফাইভের ঝাঁ চকচকে অফিসের এক বড় সাহেব হঠাৎ হল্লা করে উঠেছিলেন। ইংরেজি বর্ণমালায় হকিস্টিকের মতো যে ছোট হাতের ‘টি’ অক্ষরটা আছে, তার তলাটা ডান দিকে বাঁকানো না বাঁ দিকে, কিছুতেই মনে করে উঠতে পারছিলেন না। বন্ধুর কথায়, আবোল তাবোলের গোঁফচুরি কবিতার ছবির মতো একদম এক পোজ, বুঝলি! স্যুট পরা ভদ্রলোক পেন নিয়ে খাবি খাচ্ছেন। কিবোর্ডে টাইপ করলে সাদা স্ক্রিনে অক্ষর ফুটে ওঠে ঝটপট। হাতে পেন নেওয়ার পরেই যাবতীয় ঝকমারি। বড় সাহেব নাকি বলছিলেন, ‘টি’ আর ‘জে’ অক্ষর দুটো ভীষণ কনফিউজিং। পেনটা নেড়েচেড়ে, চোখের সামনে মেলে ধরে, অবাক চোখে দেখছিলেন। আর বিড়বিড় করে ক্রমাগত বলছিলেন, কত দিন পর!
মার্টিন লুথার কিং সেই কোন কালে বলেছিলেন, ‘যদি দুনিয়া বদলাতে চাও, একটা পেন তুলে নাও আর লেখো।’ সে দিন গিয়াছে চলিয়া। আজকের টেক স্যাভিরা এমন উক্তি শুনে ভ্রু কুঁচকে বলেন, লুথার কিং সাহেব কি স্টাইলাসের মর্ম বুঝতেন? একবার সে জিনিস হাতে পেলে সাবেকি পেন ছুড়ে ফেলে দিয়ে সাহেব হয়তো বলে উঠতেন, যাক যা গিয়েছে তা যাক।
হাল আমলের বেশ কয়েকটি সমীক্ষা জানান দিচ্ছে, পেনের ব্যবহার ক্রমশ নিম্নমুখী। রিপোর্ট বলছে, আমাদের অভ্যেসের এমন ধারা যদি বজায় থাকে, আর কয়েক দশকের মধ্যেই পেনের স্থান হবে জাদুঘরে। জামার পকেটে পেনের ‘ম্যাচিং’ ক্লিপ হয়তো সাজের একটা উপকরণ ছাড়া অন্য কোনও মানে বহন করবে না। কয়েক হাজার লোকের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, তাঁরা কলম ব্যবহার করছেন কদাচিৎ। শেষ কবে কাগজে লিখেছেন মনে করতে ভাবতে হচ্ছে বেশ। আর দুর্ঘটনাবশত যদি কিছু লিখেও থাকেন, তা একটা ওয়েস্ট পেপারে হিজিবিজি ছাড়া অন্য কিছু নয়। রাইটিং প্যাডের পাতারা ভেবেছে, বৃথা এ আয়োজন।
ছোটবেলায় গুরুজনদের থেকে একটা কথা খুব শুনেছি। একবার লেখা নাকি দশবার পড়ার সমান। শুধু পড়ার মধ্যে যে দোষত্রুটিগুলো থাকে, লিখতে গেলেই মেন্ডেলের সূত্রের মতো সেই ভুলভ্রান্তিগুলো প্রকট হয়ে আসে। স্কুলের জীবন বিজ্ঞানের স্যারের কথা মনে পড়ে। ৯৫ নম্বরের প্রশ্ন করতেন। শুধু সুন্দর হাতের লেখা আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খাতার জন্য বরাদ্দ রাখতেন পাঁচ-পাঁচটি নম্বর। প্রশ্নপত্রের শুরুতেই এক নম্বরের প্রশ্নের পাশে বন্ধনীর মধ্যে ছাপা থাকত, পূর্ণবাক্যে উত্তর লিখিবে। বছর পঁচিশ পরে সেই স্যারের সঙ্গে ঘটনাচক্রে দেখা হল সম্প্রতি। স্মৃতি হাতড়িয়ে পূর্ণবাক্যে উত্তরের কথা জিজ্ঞেস করলাম ফের। বিনিময়ে স্যারের থেকে যে উত্তর এসেছিল, তা আসলে ছিল দীর্ঘশ্বাসের কোলাজ। আমার প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ থম মেরে রইলেন। তারপরে বললেন, ‘এখন উত্তরপত্রগুলো অবিকল একটা টিপের পাতার মতো দেখতে লাগে। মাল্টিপল চয়েস প্রশ্নের সঠিক উত্তরের উপরে গোল চিহ্ন। আধুনিক ছাত্রদের উত্তর-আধুনিক বাবা-মায়েদের আপত্তি ছিল। হুমকি পেয়েছিলাম—পয়েন্টে আসুন। ছাত্রদের দিয়ে অতিরিক্ত লেখান কেন অপ্রয়োজনীয়? সময়ের দাম নেই? এর পর থেকে সবার মতো আমারও টিপ।’ শূন্যচোখে তাকিয়ে বলছিলেন, ‘ক’দিন পর থেকে এরা সবাই লিখতে ভুলে যাবে, মিলিয়ে নিও।’ খবরের কাগজের পাতাগুলোতে স্যারের সেদিনের কথার অনুরণন শুনতে পাই। মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় গার্ড দেওয়া শিক্ষকেরা আফশোসের সঙ্গে ক্ষোভ মিশিয়ে জানাচ্ছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যায়, খাতার পাতা ভরে না। উত্তরপত্র পাওয়ার পরে বড় কষ্ট করে নিজের নামটা লেখে পড়ুয়ারা। ইংরেজিতে নাম লেখার সময় বড় হাতের আর ছোট হাতের অক্ষরগুলো বিধি মানে না কোনও। ছেলেমেয়েরা কি সবাই লিখতে ভুলে গেল? বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে বুঝতে পারি, উত্তরগুলো পেটে এলেও কলমের ডগায় এসে পৌঁছচ্ছে না আর। এ কি সব দিনের পর দিন অনলাইন ক্লাসের প্রভাব? তাঁদের আশঙ্কা, কলমের সঙ্গে যে আড়ি হয়ে গেল সদ্য কৈশোরেই, তা সহজে ঘুচবার নয়। না-লেখার স্বভাব হয়তো অভাব হয়েই রয়ে যাবে জীবনভর।
গ্রাহাম গ্রিন লিখেছিলেন, ‘টাইপরাইটারের উপরে আমার হাতের দুটো আঙুলের সঙ্গে আমার মস্তিষ্কের কখনও যোগসূত্র থাকে না। কিন্তু হাতে ধরা কলমের সঙ্গে তা থাকে। ঝর্ণা কলম, অবশ্যই। বল পয়েন্ট পেনগুলো শুধুমাত্র উড়োজাহাজে বসে ফর্ম ভরার জন্য ভালো।’ নিজের হাতে লেখার সময় তা কতটা আমাদের অন্তরাত্মার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে, তা নিয়ে মনোবিদদের মধ্যে তর্কের শেষ নেই। একদল বলেন, সাদা কাগজের উপরে অক্ষরে অক্ষরে যেভাবে জন্ম দেওয়া যায় অক্ষৌহিণী সেনার, তার সিকিভাগও গড়ে তোলা যায় না কি-বোর্ডের মাধ্যমে। বহু মানুষকে বলতে শুনেছি, ফাঁকা ওয়ার্ড ফাইলে যাওয়া আসা করতে থাকা কার্সারটাকে কানামাছি ভোঁ ভোঁ-র মতো লাগে। সে যেন দুয়ো দিয়ে বলে, বেলা যে পড়ে এল, শব্দ কই?  পাতা ভরানোর তাড়নায় কি-বোর্ডে টকাটক করে শব্দের সামনে বসিয়ে দিতে হয় আরও একটা শব্দ। তবে এমন বাইনারি অক্ষরমালায় প্রাণ থাকে কি?
বইমেলায় এক কবির সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। দেখেই বললেন, ‘আপনি তো আমার ফেসবুক বন্ধু। দাঁড়ান একটি বই দিই। বিনিময়ে ১৯৯ টাকা মাত্র।’ কিনতেই হল। বইটির নাম ছিল ‘কবিতার রাজবাড়ি’। কবি বললেন, ‘স্বহস্তে সই না করে দিতে পারব না। আপনি আমার সঙ্গে আসুন।’ তিন-চারশো মিটার হন্টনের পরে লিটল ম্যাগাজিনের এক টেবিলে পৌঁছনো গেল। ভদ্রলোক তাঁর ঝোলা থেকে ‘কবিতার রাজবাড়ি’র সঙ্গে যা বের করলেন তা হল এক রাজ কলমদানি। স্টিলের চকচকে বাক্স থেকে বেরিয়ে পড়ল একটি ময়ূরপঙ্খী কলম। প্রায় পাঁচ ইঞ্চি লম্বা ময়ূরের এক পাখনা। পেখমের ভগ্নাংশ। মুখটা কেটেকুটে কালিপেনের নিবের মতো করা। বাক্সের মধ্যে ছিল কালি রাখার ছোট্ট দোয়াত। ভদ্রলোক কলমের মুখটি কালিতে চুবিয়ে বইয়ের পাতায় লিখে দিয়েছিলেন, ‘অক্ষিগোলকের প্রেম পেলে ময়ূর কলম পাখনা মেলে..।’ খসখস করে সই করে কৃশকায় বইটা আমার হাতে দিয়ে দুশো টাকা পকেটে ঢুকিয়ে বলেছিলেন, ‘কবিতার জয় হউক।’ আমার অক্ষিগোলকে অবশ্য ওই কলমের প্রতি বিস্ময় ছিল। কলমটি চোখের সামনে নাচিয়ে কবিবন্ধু বলেছিলেন, ‘তোমারই মতন এত অপরূপ সুন্দর কাউকে তো দেখিনি যে আর। গুগলে সার্চ মারুন, পেন উইদ পিকক ফেদার। পেয়ে যাবেন! এই পেনই আমার কবিতার রাজবাড়ির একাকী রানি। এই কলমই হল প্রকৃত কলম।’ 
‘প্রকৃত’ কলম কথাটা অবশ্য ভুল বলেননি কবিতার রাজবাড়ির জনক। পেন কথাটার পূর্বসূরী হল লাতিন শব্দ পেন্না। লাতিন ভাষায় পেন্না বলতে পাখির পালককেই বোঝায়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, কলমের ইতিহাস প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরনো। ‘প্রথম কলম ব্যবহার করেছিলেন কে?’ বলে যদি প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয় তামাম দুনিয়ায়, তাহলে সবার প্রথমে হাত তুলবেন মিশরীয়রা। তবে কলম বলতে তখন ছিল বাঁশের কঞ্চি কিংবা নলখাগড়া জাতীয় পদার্থ। কালির পূর্বপুরুষ হল গাছের রস। এর সঙ্গে হয়তো মেশানো হতো আরও কিছু রংদার প্রাকৃতিক উপাদান। লেখা হতো পাতা কিংবা গাছের ছালের উপরে। শিকার করা পশুর চামড়াও শুকিয়ে নিয়ে তার উপরে লেখার প্রথা ছিল। সমাজবিদ্যার এক অধ্যাপক এ প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘মানুষ তো আদিকেই জড়িয়ে ধরে থাকতে ভালোবাসে, আজও। তাই তো বাহারি শপিং মল থেকে কেনা দামি বেডকভারেও লেপ্টে থাকে জঙ্গলছাপ। বিদ্যাদেবী আরাধনার পরের দিন সকালে উঠে আমরা যে খাগের কলম দইতে চুবিয়ে পুজোর শুকনো হয়ে যাওয়া পাতার উপরে ওঁ সরস্বত্যৈ নমঃ লিখি, তা আসলে রিসাইকেল বিন থেকে পুরনো অভ্যেসকে টেনে তোলা ছাড়া অন্য কিছু তো নয়। প্রাচীন অভ্যেসকে আমরা হয়তো বাঁচিয়ে রাখি এভাবেই।’ 
ইতিহাসবিদদের একাংশ মনে করেন, পঞ্চম শতকে বাঁশের কঞ্চি কিংবা নলখাগড়ার বদলে লেখার উপকরণ হিসেবে ক্রমশ পাখির পালক (কুইল) ব্যবহার শুরু হতে থাকে। ভুলে গেলে চলবে না স্টাইলাসের কথা। নামের বানানটা গুগলের সার্চবারে টাইপ করা মাত্র অপশন হিসেবে আজ নীচে ফুটে আসে স্টাইলাস পেন ফর অ্যান্ড্রয়েড। এটা দেখলে হয়তো বেজায় চটে যেতেন গ্রিক দেশের আদি নাগরিকরা। হাজার চারেক বছর আগে হাতির দাঁতের সঙ্গে ব্রোঞ্জের শলাকা লাগিয়ে কলম বানিয়ে ফেলেছিলেন আলেকজান্ডার-হোমার-সক্রেটিসের দেশের মানুষরা। এর নাম ছিল স্টাইলাস। আর স্টাইলাস কথাটা থেকে এসেছে স্টাইল। কালের নিয়মের সঙ্গে কলমেরও বিবর্তন হয়েছে। লেখার আয়োজন আরও ভালো কীভাবে করা যেতে পারে, তা নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কলম বিশারদরা। কলমের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করেন যাঁরা, তাঁদের একটা বড় অংশ মনে করেন, ৯৫৩ সালে ঝর্ণা কলম আবিষ্কারের মাধ্যমেই আধুনিক পেনের যাত্রা শুরু। আর ১৮৮৪ সালে ওয়াটারম্যান সাহেব যুগান্তকারী আবিষ্কার করে, পেটেন্ট করে, ভোল বদল করে দিলেন ঝর্ণা কলমের। ফাউন্টেন পেনের স্যুট বুট পরে যাত্রার সেই শুরু। কলমে কালি সঞ্চয় করে রাখা আর নিবের নানা রদবদল ঘটিয়ে এর পরে এসেছে ফেল্ট টিপ পেন ও বল পয়েন্ট পেন। কলম বিশারদরা বলেন, ১৯৩৮ সালে বল পয়েন্ট পেনের আবিষ্কার কলমের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মাইলফলক। পরিসংখ্যান বলে, আজকের পেন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৮৩ শতাংশই আপন করে নিয়েছেন বল পয়েন্ট পেনকে। এসব শুনে নাক সিঁটকোন ঝর্ণা কলমপ্রেমীরা। কপাল কুঁচকে তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, ‘বল পয়েন্ট পেন আবার কোনও পেন হল নাকি? কলমের আভিজাত্য তো লুকিয়ে রয়েছে ফাউন্টেন পেনের মধ্যে।’ আর এমন তর্কে কথার পিঠে যখন কথা ওঠে, যুক্তির ডেসিবেল একে অপরকে দুয়ো দেয়, তখন নিজেদের দু’কানে তুলো গুঁজে দেয় আজকের জেন জেডরা। তুলো নয়, হেড ফোন। মগজে খেলা করে ডিজে বিট।
বিভিন্ন সমীক্ষা জানান দিচ্ছে, কলমের থেকে আধুনিক প্রজন্মের দাবি-দাওয়া-চাহিদার গ্রাফ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। পেনকে শুধুমাত্র লেখার উপকরণ হিসেবে মনে করার দিন হয়তো শেষ হয়ে যাবে আর কয়েক দশকের মধ্যেই। এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ইতিমধ্যেই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে, ‘ফোন, ঘড়ি, টিভি সব যদি স্মার্ট হয়, পেন হবে না কেন? আমার মতোই তাকে হয়ে উঠতে হবে মাল্টিটাস্কিং। পেন শুধু লিখবে, শুধু লেখারই কাজ করবে, এ আবার হয় নাকি?’ দেরি না করে তাই কলমকে হয়ে উঠতে হবে স্মার্ট পেন। এ যুগের দাবি, শুধু রোলার বল কিংবা নিবই কলমের সম্বল হলে চলবে না। পেন যেন চিনে নিতে পারে ওয়াই ফাই। পাশে থাকা প্রিন্টার কিংবা ল্যাপটপের উদ্দেশে যেন সেই পেন গুনগুন করে গায়—আমি তোমারই সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ, ব্লু-টুথ বাঁধনে। অর্থাৎ কলমকে হয়ে উঠতে হবে ব্লু-টুথ এনাবেল্ড। আঙুলের মৃদু ছোঁয়ায় তার থাকা চাই সাউন্ড রেকর্ড করার শক্তি। ক্লিপে লাগানো মুসুর ডালের মতো লেন্স দিয়ে সে যেন মেপে নিতে পারে বাহিরমহল। অর্থাৎ, রেজ্যুলুশন কম হলেও এমন কলমকে হয়ে উঠতে হবে ভিডিও রেকর্ডিং পারঙ্গম। যে কোনও কিছুর উপরে লিখতে পারা চাই। শুধু লিখলেই হবে না, সেই লেখার ইলেকট্রনিক সারমর্ম যেন রেকর্ড হয়ে যায় ব্লুটুথ এনাবেল্ড ডিভাইসে, তার ব্যবস্থা থাকা দরকার। 
কলমের উপরে দাবি দাওয়ার অবশ্য এতেই শেষ নয়। বরং, শুরু বলা চলে। স্মার্ট পেনের মেমোরি আরও বাড়ানোর জন্য গবেষণা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। এমন কলমেরও সন্ধান পেলাম, যা কাগজে লেখার সময় তার হুবহু ছবি তুলে নিয়ে পাঠিয়ে দেয় কোনও ক্লাউড স্টোরেজে। লেখার পরে কাগজটা ফেলে দিলেও কোনও ক্ষতি নেই। দুনিয়ার যে কোনও প্রান্ত থেকে খুলে নেওয়া যাবে সেই মেঘ-স্টোরেজ। কষ্ট করে কিছু লিখলে তা যেন ডিজিটাল রূপ পেয়ে যায় নিমেষে তা নিয়েও অ্যালগোরিদমের অঙ্ক কষা হচ্ছে বিস্তর। এর মানে হল, হাতে যা লিখলাম, তা পরিবর্তিত হয়ে গেল কোনও চেনা ফন্টে। যে কেউ, যখন খুশি পড়ে নিতে পারবেন সে লেখা। চাইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা অনুবাদ হয়ে যেতে পারে কুড়িটিরও বেশি ভাষায়। খুঁতখুঁতে পরিবেশপ্রেমীরা বলছেন, ‘লেখার জন্য ব্যবহৃত কাগজে তো মিশে থাকে গাছের ক্রন্দনধ্বনি।’ স্মার্টপেনবিশারদরা এই সমস্যারও সুরাহা বের করে ফেলেছেন। স্মার্টকলমের সুহৃদ হিসেবে বাজারে চলে এসেছে এমন কিছু কাগজ, যার উপরে লেখার পরে মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে মুছে দেওয়া যায় সানন্দে। পরের জমানার স্মার্টপেন নাকি আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। শোনা যাচ্ছে, পেনের সার্কিটবোর্ডে মেশানো থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের আদর। থাকবে ভয়েস রেকগনিশন। পেনের সামনে গিয়ে প্রেমভরে বলতে হবে, ‘ওয়েক আপ মাই ফ্রেন্ড। টেক এ নোট।’ প্রভুভক্ত সেই কলম নাকি মুহূর্তে জেগে উঠে নিজে নিজেই লিখতে শুরু করবে সাদা কাগজে। শুধু বলে যেতে হবে। বাকি সব দায়িত্ব স্মার্ট কলমের।  
বয়স্ক মানুষদের কাছে এমন কলমের গল্প করে দেখেছি, তাঁরা ওয়াক তোলেন। এ নিয়ে কলকল করে বলে যাওয়া আমার ঠোঁট সজোরে চেপে ধরেছিলেন এক সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ। সামনে রাখা পেনদানির অগুনতি কলমের মধ্যে থেকে একটা পেন তুলে নিয়ে কাঁপা গলায় বলেছিলেন, ‘কলমের সঙ্গে যে স্মৃতি জড়িয়ে থাকে তার মর্ম বোঝো? ওম্ মানে বোঝো, ওম্?’ বলেছিলেন, ‘এ সব কল্প-কথা আমায় শোনাতে এসো না।’ আমি জানি এর পরে উনি কী বলতেন। হাতের লেখায় ওই ওম্-টোম্ থাকে। লিখতে ভুলে গেলে জাতির মুকুট পদতলে যায় ইত্যাদি। মুশকিলটা হল, পাশের ফ্ল্যাটের দাদার ক্লাস টু-তে পড়া পুত্র দিনকয়েক আগে আমায় একটা ‘ওয়াও’মার্কা স্বপ্নের কথা জানাল। এই স্বপ্নটা নাকি ও প্রায়ই দেখে ইদানীং। জানলাম, শুধু ও না, ওর বন্ধুরাও দেখে। পেন্সিলবক্সের পেনগুলো নাকি সব স্টাইলাস হয়ে গিয়েছে।
26Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা