বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ

ব্যর্থ নবরত্নসভা এবং দিল্লির নারী মুখ্যমন্ত্রী 
সমৃদ্ধ দত্ত

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এই তৃতীয় সপ্তাহটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। আর কিছুদিন পর ৮ মার্চ আসছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী দিবসকে কেন্দ্র করে নারী স্বাধীনতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং দমনপীড়ন ও বঞ্চনা সংক্রান্ত নানাবিধ অনুষ্ঠান, সেমিনার, শপথগ্রহণ কিংবা সভা সমাবেশ হবে। কিন্তু এবার কাকতালীয়ভাবে ওই ৮ মার্চ আসার আগেই ফেব্রুয়ারি মাসে দুটি ঘটনা ঘটেছে। একটি নতুন সিনেমা রিলিজ হয়েছে। সিনেমার  নাম ‘মিসেস’। হিন্দি সিনেমা। যদিও একটি মালয়ালি চলচ্চিত্র ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন’ অবলম্বনে রিমেক। বিষয়বস্তু হল নারীর স্বাধীনতা, ইচ্ছে অনিচ্ছের মূল্য, আপাত সুখী সংসারের আড়ালে এক আলোকপ্রাপ্তা গৃহবধূর শৃঙ্খলিত তথা অসম্মানের জীবন থেকে শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহ ও মুক্তি। 
আমাদের দেশে নারীর বঞ্চনা, শোষণ, দমনপীড়ন, হিংসার ঘটনা বিশেষ করে নিম্নবিত্ত, অনগ্রসর, খেটে খাওয়া শ্রেণি অথবা প্রান্তিক কৃষক মজুরদের সমাজে নিত্যদিনের এক চেনা চিত্র। কিন্তু সেসব সংবাদ ও সন্ধান নাগরিক মধ্যবিত্ত খুব বেশি জানে না। তাই সমাজ আলোড়িত হয় না। এখন নতুন সমাজ যে কোনও বিষয়ে তখনই আলোড়িত হয়, যখন সেটি মোবাইল বাহিত কোনও মাধ্যম থেকে জানা যায়, তাই স্বাভাবিকভাবে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ওই সিনেমা দেখার পর মধ্যবিত্ত সমাজ মেতে উঠেছে আলোচনায়। কেউ বলছে সিনেমায় অতি বাড়াবাড়ি দেখানো হয়েছে এবং গোটা চিত্রনাট্য একমাত্রিক। অর্থাৎ মেয়েটি ভালো।  বাকিরা সকলেই ঩যেন ভিলেন। আবার কেউ বলছেন, এরকম ঘটনা ঘটেই থাকে। অতি সরলীকরণ এবং ক্ষণস্থায়ী প্রতিক্রিয়া হলেও ভালো হোক অথবা মন্দ, অন্তত নারীর অসম্মান ও ক্ষমতায়ন নিয়ে একটি আলোচনা হচ্ছে। কয়েকদিন পর মিলিয়েও যাবে। 
আর দ্বিতীয় যে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাটি ঘটল সেটির অভিঘাত রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবেও 
যথেষ্ট চমকপ্রদ। এগারো বছরের শাসনকালে বহু রাজ্য জয় করেছেন নরেন্দ্র মোদি। আজ পর্যন্ত কোনও রাজ্যে কোনও নারীকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসাননি। এই প্রথম দেখা গেল দিল্লিতে এক নারীকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে। 
দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী পদে নারী এই প্রথম নয়। বরং নয়ের দশক থেকে এ পর্যন্ত বারংবার নারী মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। সুষমা স্বরাজ, শীলা দীক্ষিত এবং আতিশী মারলেনা। কিন্তু মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি শাসনকালে এখনও পর্যন্ত এগারো বছরে কোনও মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হননি। এই প্রথম এমন সিদ্ধান্ত। যা মোদি এবং বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করছেন যে, নারী ক্ষমতায়ন ও নারীকে নেতৃত্বপ্রদানের ক্ষেত্রে এটা হল তাঁদের দৃপ্ত মনোভাবের প্রমাণ। দিল্লিতে নারী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় অবশ্যই নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ। কারণ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে তিনি নারী ক্ষমতায়নের একটি চমৎকার বার্তা দিলেন।
প্রশ্ন হল, এই সিদ্ধান্তগ্রহণ নিছক প্রতীকী এক উদাহরণ হিসেবেই কি রয়ে যাবে? আদৌ কি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা স্বাধীনতা পাবেন? তিনি কি এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে দিল্লি শাসন করতে পারবেন? নাকি আদতে  তিনিও হবেন মোদির হাতের পুতুল? বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর একক ক্ষমতা নেই। সবটাই পরিচালিত হয় দিল্লি থেকে। সেখানে দিল্লিতে বসে দিল্লি শাসনে মোদি হস্তক্ষেপ করবেন না এটা অসম্ভব বলেই মনে করা যায়। এখানেই মোদির চ্যালেঞ্জ শুরু হচ্ছে এবার। এই প্রথম ভারতের কোনও রাজ্যে বিজেপি একজন নারী মুখ্যমন্ত্রীকে গদিতে বসিয়েছে। এবার তাই বিজেপির কাছে সুযোগ এসেছে প্রমাণ দেওয়ার যে, তারা সত্যিই নারী ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। 
রেখা গুপ্তা দিল্লি শহর ও শহরের সমস্যাকে মোদির তুলনায় বেশি জানেন। কারণ তিনি দিল্লির নাগরিক। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের দৌলতরাম কলেজ থেকে তিনি পাশ করেছেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের তিনি ছিলেন সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি দুইই। ছিলেন একাধিকবার কাউন্সিলার। অতএব তাঁর দিল্লির অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান অনেক বেশি। এই অভিজ্ঞতাকে স্বীকার করে তাঁকে কতটা স্বাধীনতা দেওয়া হবে? তাঁকে কি সফল এক মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আগামী দিনে গড়ে ওঠার সম্পূর্ণ সুযোগ দেওয়া হবে? নাকি প্রতিনিয়ত তাঁকে রিমোট কন্ট্রোলে চালানো হবে? তারপর ব্যর্থতার দায় তাঁর উপর, সাফল্যের কৃতিত্ব শীর্ষ নেতৃত্ব আদায় করবে? 
এই প্রশ্ন উঠছে কেন? কারণ তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে একজনও নেতা নেত্রী ও সুপ্রশাসকের আবির্ভাব ঘটেনি বিজেপিতে। এগারো বছরের গ্রাফ সেটাই দেখায়। কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চরম সফল হয়নি। বরং দেখা যায় একটি টার্মের পর অথবা আগেই সেইসব মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একজনও তুমুল জনপ্রিয় নেতানেত্রীর আর বিজেপিতে উদ্ভব ঘটেনি। অর্থাৎ যাঁর নামে ভিড় হবে। যাঁকে দেখতে ছুটে আসবে মানুষ।  ক্রমেই বিজেপি এবং মোদি সমার্থক হয়ে উঠেছে। ক্রমেই বিজেপি শাসিত রাজ্য আদতে কেন্দ্রচালিত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী কিংবা সংগঠনের নেতৃত্ব সর্বদাই মোদিনির্ভর একটি রাজনীতি করতে বাধ্য থাকছেন। এবার দেখা যাক কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের পারফরম্যান্স কেমন? ভারত সরকারের একটি নবরত্নসভা আছে। 
১) অর্থমন্ত্রী। করোনাকাল কেটে গেল। অর্থনীতির কোনও সেক্টর ঘুরে দাঁড়াতে পারল না। জিডিপি বৃদ্ধিহার ৬ শতাংশের নীচে নেমে গিয়েছে।  টাকার  সর্বকালীন রেকর্ড পতন। ১ ডলার ১০০ টাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে দ্রুত। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব কমছে না। 
২) বাণিজ্যমন্ত্রী। ঩বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি চরমে। রপ্তানিহার দেড় বছর ধরে কমে চলেছে। আমদানি বিপুল বাড়ছে। সুতরাং বিদেশি মুদ্রায় টান। 
৩) শ্রমমন্ত্রী। শেষ ত্রৈমাসিকেও বেকারত্বের হার প্রায় ৭ শতাংশ।  কমছে না। নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র নির্মাণ করার স্লোগান দেওয়া হলেও পরিস্থিতির বদল ঘটেনি। তাহলে কী হয়েছে? শ্রমমন্ত্রী বদলে দেওয়া হয়েছে। 
৪) স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এতবড় একটি করোনার মহামারীর পর অন্তত সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা, ওষুধের দাম হ্রাস এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর আমূল বদল দেখা যাবে আশা করা গিয়েছিল। বিন্দুমাত্র বদল হয়নি। সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা বাড়ছে না, বাড়ছে শুধু মেডিক্লেমের প্রিমিয়াম। ওষুধ সস্তা হচ্ছে না। সস্তা হচ্ছে মানুষের প্রাণ। 
৫) রেলমন্ত্রী। দেশের রাজধানী স্টেশনে কুম্ভযাত্রীদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়ার যে চরম বিপর্যয় দেখা গেল সেটা কোনও ব্যতিক্রম নয়। বিগত কয়েক বছরে সবথেকে ব্যর্থ মন্ত্রকের নাম রেল। 
৬) খাদ্য এবং বিপণনমন্ত্রী। ভারত সরকার 
অথবা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, প্রত্যেকের একটিই উদ্বেগ। মূল্যবৃদ্ধির হার না কমার একমাত্র কারণ খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের দাম কমছে না। ঩ডিমান্ড সাপ্লাইয়ের ভারসাম্যহীনতা, কালোবাজারি প্রতিরোধ এবং পণ্য জোগানের পথ প্রশস্ত করা, একটিও দায়িত্ব এই মন্ত্রক করতে পারছে না। 
৭) বিদেশমন্ত্রী। প্রতিবেশী কোনও দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো নয়। আমেরিকার সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক। একমাত্র কূটনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্য রাষ্ট্র থেকে অস্ত্র, তেল, পণ্য কেনা। ভারত ক্রেতা। অন্য দেশ ভারতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আত্মনির্ভরতার স্লোগান হাস্যকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
৮) শিক্ষামন্ত্রী। ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি 
চালু করে, রাজ্যগুলিকে চাপ দিয়ে চালুর জন্য বাধ্য করা হয়েছে। অথচ এখনও সেই নীতির সার্বিক কাঠামো মসৃণভাবে প্রযুক্তই হতে পারছে না। 
অবিরত বদল ঘটছে। নিত্যনতুন নিয়ম ও বিধি বদল। এবার শোনা যাচ্ছে, উচ্চশিক্ষার প্রবেশিকা পরীক্ষার আবার বদল ঘটবে। অবিরত শুধু এক্সপেরিমেন্ট করা হচ্ছে এই মন্ত্রকে। 
৯) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।  কী এমন দেশের ভাগ্যবদল ঘটেছে সিএএ চালু করে? এই ঢাকঢোল পেটানো আইনের স্ট্যাটাস কী? প্রভাব কী? এবং সর্ববৃহৎ ব্যর্থতা ১৮৭১ সাল থেকে লাগাতার হয়ে আসা সেন্সাস ২০২১ সালে করা গেল না। এখনও চালু করা হল না। একটি রাষ্ট্রের সেন্সাস না থাকলে সেই রাষ্ট্রের কাছে কোনও তথ্যই নেই দেশ সম্পর্কে। কোনও নীতি প্রয়োগ করা যায় না। কীসের ভিত্তিতে চলছে রাষ্ট্র? একটা সেন্সাস করা যাচ্ছে না? 
সুতরাং এই ব্যর্থ নবরত্নসভাকে নিয়ে ভারত সরকার চলছে।  কোনও রদবদল হচ্ছে না। কোনও দায় স্বীকার করা হচ্ছে না। এই মন্ত্রীরা যে ব্যর্থ, সেকথা জনগণ জানে। শাসক মানে না। 
অতএব নরেন্দ্র মোদির আমলে মনোনীত বিজেপি’র প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রেখা গুপ্তাকে কি দৃষ্টান্তমূলক এক সফল শাসক হয়ে ওঠার সুযোগ আদৌ তাঁর দল দেবে? এটা কিন্তু এক বড়সড় সুযোগ বিজেপির কাছে। প্রমাণ করা যে, তারা নারী ক্ষমতায়নের একটি জোরদার উদাহরণ স্থাপন করে যাচ্ছেন।  নাকি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আর একজন পুতুল হবেন?
15h 15m ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

শাস্ত্র অধ্যয়নে গতি বৃদ্ধি ও পরীক্ষায় শুভ ফল লাভের সম্ভাবনা। নতুন কর্মপ্রাপ্তি হতে পারে। দাম্পত্যে...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার ৮৫.৮৩ টাকা ৮৭.৫৭ টাকা
পাউন্ড ১০৭.৩৭ টাকা ১১১.১৪ টাকা
ইউরো ৮৮.৭৮ টাকা ৯২.১৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা