অমৃতকথা

শ্রীরামকৃষ্ণ-সন্ন্যাসী ও গৃহীর আদর্শ

প্রতাপের ভাই-এর কথা উঠল। তিনি ঠাকুরের কাছে থাকতে চাইলে ঠাকুর তাঁকে তিরস্কার ক’রে স্ত্রীপুত্রের দায়িত্ব পালন করতে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এ রকম প্রতাপ হাজরাকেও ঠাকুর ভর্ৎসনা করেছিলেন মা ও স্ত্রীপুত্রের প্রতি কর্তব্যের অবহেলার জন্য। এ-প্রসঙ্গে অনেকে ঠিক বুঝতে পারেন না—যে-ঠাকুর ‘ত্যাগের মূর্তিমান বিগ্রহ’, যিনি তাঁর সন্ন্যাসী সন্তানদের সংসারের হাওয়া থেকে দূরে থাকতে বারবার উপদেশ দিচ্ছেন, তিনিই আবার কি ক’রে কোনও কোনও সংসার-ত্যাগেচ্ছু ভক্তকে ভর্ৎসনা করছেন। এ-সম্বন্ধে কোনও কোনও ভক্তের প্রশ্নের উত্তরে ঠাকুর দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন—যারা সংসার ক’রে ফেলেছে, তাদের সংসারের কর্তব্যে অবহেলা করা উচিত নয়। তারা ত্যাগ করবে মনে। কিন্তু যাঁরা সন্ন্যাসী, তাঁরা ত্যাগ করবেন অন্তরে বাহিরে।
এখানে কেউ কেউ ভাবতে পারেন যে, এই মনে ত্যাগ করতে ব’লে ঠাকুর বোধ হয় তাঁর আদর্শকে ফিকে (dilute) ক’রে ফেললেন। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে তা মোটেই নয়। কারণ ঠাকুরের আসা কেবলমাত্র কয়েকজন মুষ্টিমেয় ত্যাগী সন্ন্যাসীর জন্য নয়। আচার্য তিনি, জগৎগুরু তিনি। তাঁর উপদেশ সকলের জন্য উপযোগী হওয়া দরকার। যে যে অবস্থায় আছে, তাকে সেই অবস্থা থেকেই চরম লক্ষ্যে যাবার সন্ধান দিতে হবে। তবেই না তিনি ঈশ্বরাবতার, জীবের কল্যাণের জন্য তবেই না তাঁর দেহধারণ। কি সন্ন্যাসী, কি গৃহস্থ—সকলেরই আদর্শ তিনি, তাঁর মধ্যে সকলেই দেখতে পান নিজের নিজের আদর্শের প্রতিফলন। কাজেই একদিকে যখন তিনি সংসার স্বীকার করছেন, মায়ের সেবা করেছেন, পত্নীকে সহধর্মিণীরূপে কাছে রেখেছেন, তখনও তিনি সন্ন্যাসী সন্তানদের কাছে ত্যাগের জ্বলন্ত মূর্তি। একাধারে এই যে গৃহস্থ ও ত্যাগীর আদর্শ, এটিই ঠাকুরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। 
উপনিষদ্‌ বলেছেন “ত্যাগেনৈকে অমৃতত্বমানশুঃ”—ত্যাগের দ্বারা কেউ কেউ অমৃতত্ব লাভ করতে পারে। স্বামীজী এতে সন্তুষ্ট না হয়ে বলছেন: “ত্যাগেনৈকেন অমৃতত্বমানশুঃ”—একমাত্র ত্যাগের দ্বারাই অমৃতত্ব লাভ করা যায়। অন্য উপায়ে নয়। তা হ’লে মনে হ’তে পারে তো—একমাত্র সন্ন্যাসীদেরই অমৃতত্বে অধিকার। ঠাকুর বলছেন “তা কেন?” দেখতে হবে আসল ‘ত্যাগ’ কোন্‌টা। আসল ত্যাগ হ’ল মনের ত্যাগ, অন্তরের ত্যাগ। সেটা যদি কেউ করতে পারে, তবেই প্রকৃত ত্যাগ হ’ল। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, সন্ন্যাসীদেরও তো তা হ’লে মনের ত্যাগ হলেই চলে; তা হলে তাদের আবার বাইরের ত্যাগ কেন? এখানে ভুললে চলবে না যে, সন্ন্যাসীর জীবন হচ্ছে আদর্শস্বরূপ—তাই তার অন্তরে ত্যাগ, বাইরে ত্যাগ। তবে গৃহস্থের জন্য এই বিধান দিচ্ছেন না কেন ঠাকুর? কারণ, সে যে-আশ্রমে আছে (যথা গৃহস্থাশ্রমে) সেই আশ্রমে ‘মনে ত্যাগ’ই আদর্শ; এটাই তার অনুসরণযোগ্য পথ। এ-কথা ভুলে গিয়ে যদি আমরা আশ্রম-নির্বিশেষে সকলে সন্ন্যাসের আদর্শকে নির্বিচারে গ্রহণ করতে চেষ্টা করি, তা হ’লে তার কি পরিণাম হ’তে পারে, বৌদ্ধধর্ম তা দেখিয়ে দিয়েছে।
স্বামী ভূতেশানন্দের ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত-প্রসঙ্গ’ থেকে
16h 16m ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

গৃহসুখ বৃদ্ধি ও সপরিবারে আনন্দ উপভোগ। অন্যের দোষের দায়বহন করতে হতে পারে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৭ টাকা৮৪.৮১ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৫ টাকা১১২.২০ টাকা
ইউরো৯১.৫৭ টাকা৯৪.৭৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা