সম্পাদকীয়

শব্দের ‘উৎসব’!

দীপাবলি কিংবা বাঙালির কালীপুজো কি শুধুই আলোর উৎসব? ৩১ অক্টোবর মাস শেষের সন্ধ্যা-রাতে বৃহত্তর মহানগরীর অলি-গলি থেকে রাজপথে যে নিরবচ্ছিন্ন নিষিদ্ধ বাজির শব্দদূষণের আস্ফালন দেখা গেল, তাতে উৎসবের সংজ্ঞাটাই বদলে গিয়েছে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। অথচ দীপাবলির দিনটিতে শুধুমাত্র ‘সবুজ বাজি’ কতক্ষণ (রাত ৮ থেকে ১০টা, দু’ঘণ্টা) ফাটানো যাবে, শব্দ ও দূষণের মাত্রা কত হওয়া উচিত—তা নিয়ে আদালত, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পুলিসের একগুচ্ছ নির্দেশ ও নিয়মকানুন রয়েছে। কিন্তু তিলোত্তমা কলকাতার বহু মানুষ সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কার্যত ‘তাণ্ডব’ চালিয়ে যেন বার্তা দিল, কোনও নিয়মেই তাকে বেঁধে রাখা যাবে না! শব্দ ও দূষণের এমন যুগলবন্দি দেখে মানতেই হবে কালীপুজোর রাতে ‘বাজি’মাত করল মহানগরী। এসব দেখে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক, কোথায় ছিল ‘স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড’-এর সঙ্গে তুলনীয় কলকাতা পুলিস? কোথায় গেল লালবাজার? কালীপুজোর ঢাকে কাঠি পড়লেই দেখা যায় পুলিস নিয়মমাফিক কিছু ধরপাকড় করছে, নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত করছে। এই রুটিন কাজে এবারও গত ২১ থেকে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে কলকাতায় ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় প্রায় ৪ হাজার কেজি নিষিদ্ধ বাজি। একইভাবে নিষিদ্ধ বাজি পোড়ানোর অভিযোগে কালীপুজোর দিন রাত ১২টা পর্যন্ত ১১৭ জনকে এবং অভব্য আচরণের জন্য ১৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। বাজেয়াপ্ত করা হয় ৫১৯ কেজি নিষিদ্ধ বাজি। এই সংখ্যা আরও কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু উৎসবের রাতে শহরের প্রায় প্রতিটি পাড়া ও মহল্লায় যে ‘শব্দ সন্ত্রাস’ দেখা গিয়েছে, যেভাবে বিষাক্ত ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ—তার বিচারে পুলিসের এই পদক্ষেপকে ছেলেভোলানো তথ্য ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। বরং এমন একটা সমীক্ষা তো হতেই পারে, উৎসবের রাতে শহরের কোন কোন পাড়ায় নিষিদ্ধ বাজি ফাটেনি!
অথচ কয়েকদিন আগেই ময়দানে বাজিবাজার পরিদর্শনে গিয়ে কলকাতার পুলিস কমিশনার মনোজ ভার্মা কালীপুজো ও দীপাবলিতে নিষিদ্ধ বাজির ‘তাণ্ডব’ বন্ধ করতে দৃঢ় পুলিসি পদক্ষেপের কথা শুনিয়ে মহানগরবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন। শহরের বিভিন্ন বহুতল আবাসনের দিকেও তীক্ষ্ণ নজরদারির কথা শুনিয়েছিলেন তিনি। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, কেউ বিধি ভাঙলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এও জানিয়েছিলেন, নিষিদ্ধ বাজি রুখতে শহর জুড়ে অভিযান চলছে। কিন্তু ঘটনা হল, ম্যাচ শুরুর আগে প্লেয়ারদের গা-ঘামিয়ে নেওয়ার মতো সন্ধ্যার দিকে কিছুটা কম হলেও পুজোর রাত যত বেড়েছে, শব্দবাজির তাণ্ডব তত লাগাম ছাড়িয়েছে। এবারেও এই শব্দবাজি ফাটানোর শীর্ষে উঠে এসেছে বহুতল আবাসনগুলির কথা। এই নির্মম তাণ্ডবের হাত থেকে রেহাই মেলেনি হাসপাতাল চত্বরও। এমনটা যে হতে পারে তার আভাস মিলছিল গত দু-তিন দিন ধরেই। সে সব দেখেও পুলিস কেন ব্যবস্থা নেয়নি সেই সঙ্গত প্রশ্নও উঠেছে। শব্দদূষণের করাল গ্রাসে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েন হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় আক্রান্তরা। ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করেও তাঁদের রেহাই মেলেনি। শিশুদের কেউ কেউ ভয়ে কেঁপে উঠেছে, পথকুকুরদের উদভ্রান্ত হয়ে ছোটাছুটি করতেও দেখা গিয়েছে। নাগরিকদের একাংশের বাজি নিয়ে তাণ্ডবের এমন অমানবিক আচরণে পরিবেশের বিপদ বেড়েছে। এরা যেন জেনেও জানে না, বুঝেও বোঝে না। আসলে বোধবুদ্ধির অভাব! কলকাতার নাগরিকরা আর কবে সচেতন হবে, পুলিস কবে কঠোর হবে—তা বোঝা দায়।
বাজি কোথায় তৈরি হয় তা প্রায় সকলেই জানে। শহর ও শহরতলি এলাকায় আইনসিদ্ধ বাজির আড়ালে নিষিদ্ধ বাজি তৈরির ব্যবসার আঁতুড়ঘর কোথায় রয়েছে—তা পুলিস ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলির অজানা নয়। কিন্তু সেই উৎসমুখগুলিকে বাগে আনতে বছরভর তৎপরতা ও নজরদারি ঠিকমতো হয় না বলেই অভিযোগ প্রায় সর্বত্র। শুধু তাই নয়, নিষিদ্ধ বাজি বিক্রিতে রাশ টানতে হলে বৈধ কারবারিদের পাশাপাশি পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা অস্থায়ী দোকানগুলিতেও সমান নজরদারি প্রয়োজন। এমন ছবি একেবারেই বিরল নয় যেখানে দেখা যায় পান-সিগারেটের দোকান, মুদির দোকান, সব্জি বিক্রেতা, এমনকী ইমিটেশন গয়না বিক্রির দোকানের আড়ালেও তাৎক্ষণিক লাভের আশায় দেদার বিক্রি হয়েছে শব্দবাজি। এসব এবারই প্রথম হয়েছে তা নয়, পুলিসের নাকের ডগায় দীর্ঘদিন ধরে এসব চলছে। সুতরাং দীপাবলির কয়েকদিন আগে অথবা পুজোর দিন কিছু গ্রেপ্তার বা বাজেয়াপ্ত করে এই ব্যাধিকে নির্মূল করা তো দূরের কথা, কমানোও যাবে কি না সন্দেহ। বরং পুলিসের এমন গয়ংগচ্ছ মনোভাব দেখে যারা নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি করে এবং যারা তা কিনে ফাটায় তারা আড়ালে তাচ্ছিল্যের সুরে বলতে পারে আসছে বছর আবার হবে। 
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মসূত্রে বিদেশ যাত্রার প্রচেষ্টায় সফল হবেন। আয় খারাপ হবে না। বিদ্যা ও দাম্পত্য ক্ষেত্র শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.৮৮ টাকা৮৫.৬২ টাকা
পাউন্ড১০৫.৩৯ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৭.২৫ টাকা৯০.৬০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     December,   2024
দিন পঞ্জিকা