বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়

উঠোন বাঁকা তত্ত্ব

এবার ভারতের যে আর্থিক বৃদ্ধি ঘটতে চলেছে তা ব্যাপক। জিডিপি বৃদ্ধির অনুমিত হার ৭ শতাংশ। একইসঙ্গে নিম্নমুখী হবে মুদ্রাস্ফীতি এবং দারিদ্রের হার। চলতি অর্থবর্ষের জন্য এটাই ছিল বিশ্ব ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস। গত সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে, বিশ্ব ব্যাঙ্কের তরফে ভারতে নিযুক্ত ডিরেক্টর অগাস্টি টানো কৌয়ামে এই আশার কথা শুনিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ভারতের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন আশা প্রথম ব্যক্ত করেছিল আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ)। বস্তুত, বিশ্ব ব্যাঙ্ক তার আগের মূল্যায়ন (অনুমিত বৃদ্ধির হার ৬.৬ শতাংশ) সংশোধন করে আইএমএফ-এর বক্তব্যেই সিলমোহর দিয়েছিল। আন্তর্জাতি মহলের ঢক্কানিনাদেই উদ্বাহু হয়ে ওঠে নীতি আয়োগ। তার প্রেক্ষিতে মোদি সরকারের তরফে একসময় দাবি করা হয়েছিল যে, জিডিপি বৃদ্ধির হার সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে! এখন সুর নরম হয়ে এসেছে সেই নীতি আয়োগেরই, ‘চলতি অর্থবর্ষ শেষে বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশেরও নীচে নেমে যেতে পারে।’ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকার—পূর্বাভাসে বৃদ্ধির হার কমিয়েছে দেশের সকলেই।
কিন্তু আকাশ কুসুম ফোটাবার ভরসা করা হয়েছিল কীসের ভিত্তিতে? কেন মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে সেই ফানুস? জিডিপি বৃদ্ধির গতি ধীর হয়ে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির দিকেই আঙুল তুললেন নীতি আয়োগ কর্তা। তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার আশানুরূপ হবে না।  শনিবার মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নীতি আয়োগের সদস্য অরবিন্দ ভিরমানি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা দেশে জিডিপি বৃদ্ধির হার কমাবে। এর অন্যতম কারণ আমেরিকা ও চীন।’ জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৬ শতাংশ হতে পারে বলে আশায় ছিল আরবিআই। কিন্তু কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বিভাগ জানাচ্ছে, আরও কম—৬.৪ শতাংশ। স্টেট ব্যাঙ্কের মতে, অতটাও নয়, হতে পারে মাত্র ৬.৩ শতাংশ! নীতি আয়োগ বলছে, এর দায় আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির। মার্কিন মুলুকের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এর আগে বিশ্বজুড়ে যে অস্থিরতার বাতাবরণ তৈরি করেছিল, নির্বাচনের পর সেই অস্থিরতা আরও বেড়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মাত্রা যে এতটা হবে, তা ভারত বুঝতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের প্রভাব সরাসরি পড়েছে ইউরোপ ও চীনে। তার প্রভাব ঘুরপথে হলেও পড়ছে ভারতীয় অর্থনীতির উপর। ভিরমানি আরও বলেন, ‘চীন বিপুল শিল্প পরিকাঠামো গড়েও তার সদ্ব্যবহার করতে পারছে না। তার ফল হাতেনাতেই পাচ্ছে তারা। চীনের আর্থিক মন্দার জন্য, সাময়িক হলেও, ভারতকে পরোক্ষে ভুগতে হবে। তাঁর দাবি, তবে বার্ষিক বৃদ্ধির ৬ শতাংশ হার ধরে রাখতে পারলে আগামী ২৫ বছরে ভারত ‘উচ্চ মধ্যবিত্ত’ স্তরে উন্নীত হতে পারবে।  
গোল করার ব্যর্থতা ঢাকতে গোলপোস্ট সরানোই মোদি সরকারের কৌশল। তারা এই নিখাদ সত্যটা স্বীকার করে না যে—‘সব কা বিকাশ’-এর পথ থেকে সরে এসে রকমারি বৈষম্য আর ঘৃণার চাষেরই পরিণাম এটা। মনমোহন সিংয়ের এক দশকে গড় জিডিপি বৃদ্ধির হার হয়েছিল ৬.৮ শতাংশ। ইউএনডিপির হিসেবে, ওই সময়কালে ২৭ কোটি মানুষ গরিবি রেখার উপরে উঠেছিল। দৃষ্টান্ত দুটি অভূতপূর্ব হলেও পূর্বসূরির সাফল্যের সূত্র অনুসৃত হয়নি। ভারতে নিযুক্ত বিশ্ব ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর প্রথমোক্ত আশার কথা শোনাবার সঙ্গে আরও যোগ করেছিলেন যে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্ভাবনার সুযোগও ভারতকে বিশেষভাবে নিতে হবে। তথ্য-প্রযুক্তি, বাণিজ্য পরিষেবা এবং ওষুধ শিল্প ক্ষেত্রে ভারতের অনবদ্য শক্তির কথা সবার জানা। কিন্তু শুধু আইটি-সহ ওই তিনটি সেক্টর আঁকড়ে থাকলেই চলবে না, ভারতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিকেন্দ্রীকরণ চাই আরও একাধিক ক্ষেত্রে। যেমন—বস্ত্রবয়ন, রেডিমেড পোশাক, চর্মশিল্প, ইলেকট্রনিক পণ্য, গ্রিন টেকনোলজি প্রোডাক্টস প্রভৃতি। বিশ্ব ব্যাঙ্ক আরও প্রত্যাশা করে যে, এই অবসরে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াবে ভারত। বেকারত্বের যে মস্ত সমস্যাটি রয়েছে, তার মোকাবিলাতেও বিশেষ যত্নবান হব আমরা। চাহিদা বা উপভোগের ক্ষেত্রে যে নেতিবাচক ছবিটা প্রকট হয়েছে, কাটিয়ে উঠতে হবে সেটাও। তা না-হলে আর্থিক বৃদ্ধির আলোচ্যমান সম্ভাবনার বাস্তবায়ন কিন্তু কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়বে। আমাদের অপারগতা, অবহেলা, ব্যর্থতার সৌজন্যে, আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস নয়, তাদের আশঙ্কাই বোধহয় ফলে যাচ্ছে। তার দায় নরেন্দ্র মোদি, নির্মলা সীতারামনরা নিতে প্রস্তুত নন। উল্টে, মোদি সরকার তর্জনী তুলেছে বিরূপ আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির দিকে! ‘নাচতে জানে না উঠোন বাঁকা’ প্রবাদের এমন লাগসই দৃষ্টান্ত কমই হয়।
21d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কাজকর্মে সাফল্য ও খ্যাতি লাভের যোগ। ব্যবসা ভালো হবে। হস্তশিল্পীদের উপার্জন বৃদ্ধি পাবে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৬.৬৩ টাকা৮৮.৩৭ টাকা
পাউন্ড১০৬.৯২ টাকা১১০.৬৭ টাকা
ইউরো৮৯.১৭ টাকা৯২.৫৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
9th     February,   2025
দিন পঞ্জিকা