বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়

আপনি আচরি ধর্ম

‘কাক-এ নিয়ে গেল কান, কাকের পিছে ধাবমান’—গত আগস্ট মাসে আর জি কর হাসপাতালে এক তরুণী-চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা এবং এই জানুয়ারিতে মেদিনীপুর হাসপাতালে এক প্রসূতির মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে যে গেল গেল রব উঠেছে, তাতে ওই প্রবাদ বাক্যটি মনে আসতে পারে অনেকের। কোনও ঘটনা বা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তথ্য ও উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণকেই আইনি ভাষায় ‘সত্য’ বলে বিবেচনা করা হয়। আদালত তাতেই সিলমোহর দেয়। কোনও রাগ, উষ্মা, বিদ্বেষ, ধারণা, বিশ্বাস বিচারের ক্ষেত্রে একেবারেই গুরুত্বহীন। আর জি কর কাণ্ডে তরুণী চিকিৎসকের মর্মান্তিক পরিণতির ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি যুক্ত বলে দাবি তুলে গত ছ’মাস উত্তাল হয়েছে এই রাজ্য। অথচ কয়েকমাস ধরে নিরবচ্ছিন্ন তদন্ত চালিয়ে সিবিআই মাত্র একজনকেই অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে, তার ভিত্তিতে অভিযুক্তের সাজাও ঘোষণা করতে চলেছে নিম্ন আদালত। গত ৮ জানুয়ারি মেদিনীপুর সরকারি হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনার ক্ষেত্রেও সেই ধারা অব্যাহত! একটি বেসরকারি সংস্থার সরবরাহ করা স্যালাইনের জেরে প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে গত কয়েকদিন লাগাতার প্রচারে স্বাস্থ্যদপ্তরকে ‘অপরাধী’ করে দেগে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এই অভিযোগ নিয়ে মামলাও হয়েছে। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে। সরকার কী রিপোর্ট দেয়, বিচারে কী উঠে আসে—তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এর মধ্যেই রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের কমিটি এবং সিআইডি পৃথকভাবে তদন্ত চালিয়ে যে দুটি রিপোর্ট সরকারের কাছে পেশ করেছে—তাতে সিনিয়র-জুনিয়র মিলিয়ে ১২ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ‘গাফিলতির’ স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। যার মোদ্দা কথা হল, সেই রাতে মৃত প্রসূতিসহ আরও কয়েকজনকে অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়া ও সিজার করেছেন শিক্ষানবিশ পড়ুয়া চিকিৎসকরা, যা করার অভিজ্ঞতা ও এক্তিয়ার তাঁদের নেই। সেই সময়ে ডিউটিতে থাকা সিনিয়র চিকিৎসকেরা নাকি অপারেশন থিয়েটারে পা মাড়াননি। এই ১২ জনকেই ‘সাসপেন্ড’ করেছে সরকার। তথ্য ও উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সরকার এমন পদক্ষেপ করলেও এর বিরুদ্ধে মেদিনীপুর হাসপাতালে প্রতিবাদে সরব ডাক্তাররা! প্রশ্নটা নৈতিকতার।
কে না জানে, কোনও সরকারকে হেনস্তা করার মোক্ষম জায়গা হল স্বাস্থ্যক্ষেত্র। এ রাজ্যে যেহেতু মুখ্যমন্ত্রীই স্বাস্থ্যমন্ত্রী, তাই কান টেনে নিয়ে যাওয়ার গুজবও আকাশছোঁয়া। কিন্তু সত্যিই কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের কোনও উন্নতি হয়নি? উত্তর লুকিয়ে আছে সরকারি পরিসংখ্যানে। যেমন, বাম জমানার শেষ স্বাস্থ্য বাজেটে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে এখন বেড়ে তা হয়েছে ২০ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছিল ১১টি। এখন ৩৭টি। এর মধ্যে সরকারি ২৪টি। রাজ্যে এমবিবিএস-এ আসন সংখ্যা ১৩৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৬৫০। এমডি আসনের সংখ্যা বেড়েছে ১৮৪৮টি। সরকারি হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭ হাজার। ডাক্তার নিয়োগ হয়েছে ১৪ হাজার। একইহারে বেড়েছে নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও তার আসন সংখ্যাও। এর বাইরে রয়েছে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প, যার সুবিধা পাচ্ছেন রাজ্যের ৯ কোটি মানুষ। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, সবস্তরের লোকবল বাড়ানোর দায়িত্ব অবশ্যই প্রশাসনের। ওবিসি নিয়ে আদালতে মামলা চলায় বহুদিন ধরেই ডাক্তার নিয়োগ করা যাচ্ছে না। তবু একথা ঠিক, সুষ্ঠভাবে হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়ন ও শূন্যপদ পূরণে আরও তৎপরতা দরকার। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসার বিষয়টি দেখার কাজ তো ডাক্তারদের। সব ডাক্তারই কি ঠিকঠাক মতো দায়িত্বপালন করেন? সে কাজ তো স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা স্বাস্থ্যসচিব করে দিতে পারবেন না। দুর্ভাগ্যের হলেও এক্ষেত্রেও তথ্য বলছে, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার ত্রুটি নিয়ে যত অভিযোগ ওঠে, তার সিংহভাগই চিকিৎসা সংক্রান্ত। এর দায় কার? ডাক্তারবাবুরা কি তা অস্বীকার করতে পারেন?
অন্যান্য রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে একজন চিকিৎসক কতক্ষণ ডিউটি করেন? হাসপাতাল ছাড়াও কেন্দ্র-রাজ্যে বিভিন্ন সরকারি অফিসে প্রতিদিন ডিউটির সময় কতক্ষণ? এসব প্রশ্নের উত্তর কম-বেশি সকলেরই জানা। এ রাজ্যেও একজন ডাক্তারের দৈনিক আট ঘণ্টা হাসপাতালে থাকার কথা। কিন্তু এই নিয়ম যে দিনের পর দিন লঙ্ঘিত করে চলেছেন বহু চিকিৎসক তা সরকার ও ভুক্তভোগী মাত্রই জানে। প্রসূতি মৃত্যুকাণ্ডে যাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে দু’জন ওইদিন বেসরকারি হাসপাতালে ‘সিজার’ করতে ব্যস্ত ছিলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। শুধু জেলা নয়, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় ‘মক্কা’ এসএসকেএম হাসপাতাল, মুখ্যমন্ত্রীসহ ভিভিআইপিদের চিকিৎসায় যাঁদের নিশ্চিত উপস্থিতি দেখা যায়, তাঁদের মধ্যেও কেউ কেউ সরকারি ডিউটির সময়ের মধ্যেই বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন, অপারেশনও করেন। সরকারি অব্যবস্থা নিয়ে যেসব ডাক্তারবাবু সরব, তাঁদের ‘আপনি আচরি ধর্ম’ শেখাবে কে? বৃহস্পতিবারও সরকারি ডাক্তারদের আট ঘণ্টা ডিউটির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে! এজন্য একটু লজ্জিত তো হওয়াই যায়।
12d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পদার্থ ও রসায়নিক বিদ্যার অনুশীলনে বিশেষ উন্নতি।প্রায় সম্পূর্ণ কাজে বাধা আসতে পারে। বিকেল থেকে মানসিক...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৭৮ টাকা৮৭.৫২ টাকা
পাউন্ড১০৫.৯৮ টাকা১০৯.৭২ টাকা
ইউরো৮৮.৭৪ টাকা৯২.১১ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা