বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়

মামুলি সিবিআই

কেটে গিয়েছে প্রায় সাড়ে চার মাস। অসংখ্য মানুষ প্রত্যাশায় ছিলেন অভয়া কাণ্ডে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক চরম শাস্তিই দেবে আদালত। গত ৯ আগস্ট রাতে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ভিতরে ধর্ষণ ও খুন হন সেখানকারই এক তরুণী ডাক্তার। এই ভয়াবহ ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীর শাস্তির দাবিতে তৎক্ষণাৎই উত্তাল হয়ে উঠেছিল কলকাতা শহর। সেই ঢেউ আছড়ে পড়েছিল দেশের সমস্ত প্রান্তে। পৃথিবীর নানা প্রান্তও হয়েছিল আন্দোলিত। সবারই প্রার্থনা ছিল, প্রকৃত দোষীকে খুঁজে বের করে দ্রুত তাকে শাস্তি প্রদান। কলকাতা পুলিস অবশ্য কারও দাবি উত্থাপন বা উপর মহলের নির্দেশের জন্য সময় নষ্ট করেনি। নিজেদের পেশাগত দায়বদ্ধতা থেকেই তারা এই মর্মান্তিক ঘটনার তদন্তে নামে। দোষীকে দ্রুত খুঁজে বের করে তাকে আদালতে পেশ করাই ছিল তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। তাতে পূর্ণ সমর্থন ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর পুলিসের উপর পূর্ণ আস্থা থেকে মৃতার পরিবারসহ সকলকেই তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন যে, এই ঘটনায় দ্রুত সুবিচারের ব্যবস্থাই হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর আস্থারই মর্যাদা রেখেছিল কলকাতা পুলিস। ঘটনা ঘটে যাওয়ার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করেছিল তারা। সংগৃহীত আনুষঙ্গিক প্রমাণ এবং ধৃতকে জেরার ভিত্তিতে পুলিস মোটামুটি নিশ্চিত ছিল যে সঞ্জয়ই প্রকৃত দোষী। ফলে আদালতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করাসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা কেবল সময়ের অপেক্ষা। 
কিন্তু রাজনৈতিক বিরোধীদের একটি মহল অমনি বেসুরো গাইতে লাগল। তারা প্রচার করল যে, এই ঘটনা নিছক একজনকে খুন এবং ধর্ষণের নয়, এর নেপথ্যে রয়েছে বিরাট দুর্নীতি এবং চক্র। ওই চক্রের পান্ডারা নাকি শাসক দলের ঘনিষ্ঠ কিছু লোক। তাদের মধ্যে কিছু ডাক্তার এবং অন্য শ্রেণির লোকজনও রয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশাসন নাকি তাদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। তারা এই দাবিও করল যে, প্রভাবশালী সন্দেহভাজনদের বাঁচাতেই বস্তুত বলির পাঁঠা করা হচ্ছে সঞ্জয় রায়কে। ‘নাগরিক সমাজের’ বকলমে, অতএব এই বিরোধী মহল দাবি তুলে দিল—তদন্তে মমতার পুলিস, এমনকী স্বাস্থ্য বিভাগকেও যুক্ত রাখা চলবে না। তদন্তের পুরো দায়িত্বটাই তুলে দিতে হবে ‘অতিশয় দক্ষ’ ও ‘নিরপেক্ষ’ সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে। দাবিটা উত্থাপন করানো হল মৃতার পরিবারকে দিয়েই। তিক্ততা বাড়াতে কিংবা সংকীর্ণ রাজনীতি করতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী। এমন দাবি ওঠামাত্রই, স্পর্শকাতর বিষয়টির তদন্তে তিনি সিবিআই’কেই স্বাগত জানান। তদন্তের দায়িত্ব সিবিআই নেয় ১৩ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে। আদালতের নজরদারিতেই তারা টানা তদন্ত করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে, এই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে লাগাতার পূর্ণ সহযোগিতা করেছে কলকাতা পুলিস এবং রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর। কলকাতা পুলিসের তাৎক্ষণিক তদন্তের ফলাফলকে সিবিআইয়ের চার মাসের তদন্তের আউটকামের পাশে রেখেই হতাশ মানুষ। কেননা, কলকাতা পুলিসের পর বস্তুত এক-পা’ও এগতে পারেনি সিবিআই। অন্য একাধিক অভিযোগে কিছু লোককে ডেকে তারা হেনস্তা করেছে বটে, কিন্তু তরুণী ডাক্তারকে ধর্ষণ-খুনে দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তিকে চিহ্নিতই করতে পারেনি তারা। রা঩জ্যের উপর অনাস্থা প্রকাশ করেছিলেন যাঁরা—এই হতাশার সূচনা এবং চার মাস ব্যাপী তার বৃদ্ধিই সার হয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে। সিবিআই’কে সামনে রেখে যাঁরা বিচারের আকাশ কুসুম ফুটিয়েছিলেন, ওই কেন্দ্রীয় এজেন্সির গত এক দশকের ‘ধারাবাহিক ব্যর্থতার রেকর্ড’ নিশ্চয় মনে রাখেননি তাঁরা। 
১৮ জানুয়ারি শিয়ালদহ আদালত অভয়া কাণ্ডে সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে। তখনও মৃতার পরিবারসহ সকলেই ধরে নিয়েছিলেন যে সঞ্জয়ের চরমতম সাজাই হতে চলেছে। সোমবার বিচারক অনির্বাণ দাসের এজলাসে প্রবেশের সময় অভয়ার মা-বাবাকে সিবিআইয়ের আইনজীবীরা আশ্বস্ত করেন যে, ‘নিশ্চিন্তে থাকুন, ফাঁসি হবেই।’ অতএব ‘জাস্টিস’-এর প্রত্যাশায় বিচারকের মুখ থেকে শুধু ‘মৃত্যুদণ্ড’ শব্দটিই শুনতে চেয়েছিলেন সকলে। কিন্তু শেষমেশ ঘোষিত হল রায়, ‘দোষী সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হল!’ অমনি অপার বিষণ্ণতা নেমে এল অভয়ার বাবা-মা থেকে শুরু করে টিভি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখা সকলের চোখে-মুখে। কিন্তু কেন এইভাবে হতাশ করল ন্যায়ালয়? ‘বচ্চন সিং বনাম স্টেট অব পাঞ্জাব’ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অনুসরণে বিচারক পরিষ্কার করে দিলেন, ‘সাক্ষ্য-প্রমাণের প্রেক্ষিতে এই  অপরাধ বিরলের মধ্যে বিরলতম পর্যায়ে পড়ে না!’ দোষীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তার সমস্ত দোষ প্রমাণের দায়িত্ব যার, সেই সিবিআই’কেই এই চরম ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। সিবিআই মানেই বাঘ, সিংহ—কিছু মানুষের এমন ভ্রান্ত ধারণা আগামী দিনে এই হতাশাই দূর করে দেবে হয়তো।
8d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পদার্থ ও রসায়নিক বিদ্যার অনুশীলনে বিশেষ উন্নতি।প্রায় সম্পূর্ণ কাজে বাধা আসতে পারে। বিকেল থেকে মানসিক...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৭৮ টাকা৮৭.৫২ টাকা
পাউন্ড১০৫.৯৮ টাকা১০৯.৭২ টাকা
ইউরো৮৮.৭৪ টাকা৯২.১১ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা