বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়

চক্রব্যূহে ঘুরপাক

একদিকে ডলারের নিরিখে টাকার অবিশ্বাস্য পতন, অন্যদিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া—এই দুই সাঁড়াশি চাপে গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছে ভারতের অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (আইএমএফ) জানিয়েছে, মোদির ভারতে শিল্পের উৎপাদন অস্বাভাবিক হারে কমে গিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে জিডিপি বৃদ্ধির হারে। এই কারণে ২০২৪ থেকে আগামী দু’বছর জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশ থাকার সম্ভাবনা। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক আউটলুকে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ভারতে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৮.২ শতাংশ। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের ত্রৈমাসিকে তা ৫.৪ শতাংশে নেমে আসে। এর থেকে অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও ২০২৬ সাল পর্যন্ত জিডিপি বৃদ্ধির হার সাড়ে ৬ শতাংশ অতিক্রম করার সম্ভাবনা কম। এই অবস্থায় শুক্রবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, জিডিপি বৃদ্ধির হারকে ঠেলে তুলতে হলে দেশের বাজারে চাহিদা ও লগ্নি বাড়াতেই হবে। না হলে বাঁচার কোনও পথ নেই। কেন্দ্র এই পরামর্শ শুনবে, এমন কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
আর্থিক বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার মতো টাকার পতনের ক্ষেত্রেও মোদি সরকার রেকর্ড করে ফেলেছে। চলতি সপ্তাহের শেষে ডলারের নিরিখে টাকার দাম দাঁড়িয়েছে ৮৬.৭০ টাকা। গত ১৮ মাসের মধ্যে চলতি সপ্তাহেই টাকার মূল্য সবচেয়ে বেশি পড়েছে। গত তিন মাস ধরে টাকার দাম নাগাড়ে পড়েই চলেছে। পরিসংখ্যান বলছে, মোদির জমানায় ২০১৫-সাল থেকে গত দশ বছরে ডলারের সাপেক্ষে টাকার মূল্য কমেছে ৪১.৩০ শতাংশ। ২০১৫-র জানুয়ারিতে ছিল ৬১.৪০ টাকা, ২০২৫ এর জানুয়ারিতে হয়েছে ৮৬.৭০ টাকা। ভারতীয় মুদ্রার এই অস্বাভাবিক পতন সত্ত্বেও সরকারি ব্যর্থতাকে আড়াল করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা যুক্তি হিসেবে বলার চেষ্টা করছেন, সব দেশের মুদ্রার মূল্যই ডলারের নিরিখে কমেছে। কিন্তু এই তথ্য জল মেশানো। দেখা যাচ্ছে, ২০২৪-এর জানুয়ারি থেকে ২০২৫-এর জানুয়ারির মধ্যে চীনের মুদ্রার মূল্য ৭.১০ ইউয়ান থেকে কমে হয়েছে ৭.৩৩ ইউয়ান। অথচ এই সময়ে ভারতীয় মুদ্রা টাকার দাম ৮২.২০ টাকা থেকে ৮৬.৭০ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ এক বছরে চীনের মুদ্রার দাম পড়েছে ৩.২৪ শতাংশ। ভারতের সেখানে ৪.৭১ শতাংশ। টাকার দামের এই ধারাবাহিক পতনের কারণে ভারতের শেয়ার বাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা লগ্নি তুলে নিচ্ছেন। তথ্য বলছে, গত এক মাসে এদেশের শেয়ার বাজার থেকে ৬০০ কোটি ডলার লগ্নি তুলে নিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। টাকার অবমূল্যায়ন সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা ঘটিয়েছে আমদানি ক্ষেত্রে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাগাতার টাকার দাম কমায় দেশের আমদানি খরচ দ্রুত বাড়তে চলেছে। এর মধ্যে রয়েছে অশোধিত তেল, ভোজ্য তেল, সোনা, হীরে, বৈদ্যুতিন যন্ত্রাংশ, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, প্লাস্টিক, রাসায়নিক সামগ্রী ইত্যাদি। অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম বলে, আমদানি খরচ বাড়লে দেশে উৎপাদিত পণ্যের দামও বাড়ে। ফলে সেই পণ্যের চাহিদা কমার সম্ভাবনাও থাকে। আবার আমদানি খরচ বাড়লে জ্বালানির সঙ্গে কাঁচামালের দামও বাড়ে। তাতে উৎপাদন খরচ বাড়ায় বর্ধিত দামের পণ্যটি প্রতিযোগিতার বাজারে পিছিয়ে পড়ে। অর্থনীতি বৃদ্ধির পথে এ এক মস্তবড় অন্তরায়।
অর্থনীতিবিদদের ব্যাখ্যা, মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়ায় ডলার যত শক্তিশালী হচ্ছে, ভারতের অর্থনীতি বৃদ্ধির শ্লথ গতি এবং কাজের বাজার না তৈরি হওয়ার কারণে টাকার মূল্যে নেতিবাচক চাপ তৈরি হচ্ছে। স্বঘোষিত ‘বিশ্বগুরু’ (এখন ‘বিশ্ববন্ধু’তে রূপান্তরিত) অবশ্য এসব নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করেন না। তিনি স্বপ্ন দেখান। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির। যদিও সকলেই জানে, এদেশে আমদানি খরচ বেড়ে গেলে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি বাড়বে। এই ঘাটতি যত বাড়বে, বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়ে তত টান পড়বে। পাশাপাশি, আমদানিতে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদিত পণ্যের বর্ধিত দাম মূল্যবৃদ্ধিকে উস্কে দেবে। এবং এই কারণেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমাতে পারছে না। এই চক্রব্যূহ থেকে বেরনোর পথ বাতলেছে সর্বোচ্চ ব্যাঙ্ক। কিন্তু সেই পথ অনুসরণে কোনও আগ্রহ দেখাচ্ছে না মোদি সরকার। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি আরও একটা বাজেট পেশ করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সেখানে কোনও আশার আলো দেখা যাবে, সেই সম্ভাবনা কম। সব মিলিয়ে একটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে যখন টাকার বিনিময় মূল্য ছিল ৫৮ টাকা, তখন নির্বাচনী প্রচারে মোদির প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এলে তাঁরা ডলারের মূল্য ৪০ টাকায় নামিয়ে আনবেন। দশ বছর পর এখন সেই মোদিবাহিনী হয়তো মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজছেন।
11d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পদার্থ ও রসায়নিক বিদ্যার অনুশীলনে বিশেষ উন্নতি।প্রায় সম্পূর্ণ কাজে বাধা আসতে পারে। বিকেল থেকে মানসিক...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৭৮ টাকা৮৭.৫২ টাকা
পাউন্ড১০৫.৯৮ টাকা১০৯.৭২ টাকা
ইউরো৮৮.৭৪ টাকা৯২.১১ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা