বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়

আগুন নিয়ে খেলা

হতে পারে ২২ বছর আগের ঘটনা। তিনি তখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। ২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদির রাজ্যে সেই ভয়াবহ দাঙ্গার ঘটনায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। সেদিন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগই ছিল, তিনি দাঙ্গা ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ করেননি, বা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছেন। লজ্জার বিষয় হল, এই অভিযোগের ভিত্তিতে ২০০৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মোদির ভিসা বাতিল করে দেয়। তারপরের ন’বছর মোদিকে সে দেশ ভিসা দেয়নি। অবশেষে ২০১৪ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মার্কিন সরকার তাঁর ভিসা মঞ্জুর করে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নিজের জীবনের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারতেন তিনি। কিন্তু হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনার অন্যতম কারিগর যে সে পথে হাঁটেননি, গত দশ বছরে এ দেশের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের খতিয়ান তা জানান দিচ্ছে। কোনও বিরোধী দল নয়, পরিসংখ্যান দিয়ে মোদি জমানার কঙ্কালসার চেহারাটা তুলে ধরেছে সেন্টার ফর স্টাডি অব সোসাইটি ও সেকুলারিজম-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট। এদের তথ্যেই পরিষ্কার, দেশে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা প্রতিবছর বেড়েই চলেছে। যেমন, ২০২৩ সালে দেশে নথিভুক্ত সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ৩২টি। ২০২৪-এ তা বেড়ে হয়েছে ৫৯। অর্থাৎ এক বছরে ৮৪ শতাংশ বৃদ্ধি! এর মধ্যে ৪৯টি সংঘর্ষ হয়েছে বিজেপি শাসিত ডাবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্যে। সংঘর্ষের এক এবং অদ্বিতীয় লক্ষ্য সেই সংখ্যালঘুরাই। রিপোর্টে এও দাবি করা হয়েছে, ৫৯টি ঘটনার মধ্যে ২৬টি ঘটেছে কোনও ধর্মীয় উৎসব বা ধর্মীয় মিছিলকে কেন্দ্র করে। যেমন, ২০২৪-এর জানুয়ারিতে অযোধ্যায় রামমন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ‘হিন্দুত্বের পোস্টার বয়’ যোগী রাজ্যে চারটি ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই যে, এটাই দেশের প্রকৃত সংঘর্ষের সংখ্যা নয়। সত্যিটা হল, খাতায়-কলমে যা দেখা যাচ্ছে তার কয়েকগুণ বেশি হয়তো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যা পুলিসের কাছে লিখিত অভিযোগের আকারে পৌঁছায়নি। সম্প্রতি এই সংঘর্ষের আগুনে ঘি ঢালতে শুরু করেছে মন্দির-মসজিদ বিতর্ক। বিভিন্ন রাজ্যে শতাব্দীপ্রাচীন মসজিদের নীচে মন্দিরের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়ে সমীক্ষার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল পরিস্থিতি। এমন এক সংঘর্ষের ঘটনায় একজনের মৃত্যুও হয়। 
বস্তুত নরেন্দ্র মোদির জমানায় ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ, বিভেদ-বৈষম্য, ঘৃণাভাষণ থামার কোনও লক্ষণই নেই। দেশে সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের এই ন্যক্কারজনক ছবি ধরা পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা সংস্থার রিপোর্টে। ‘ইন্ডিয়া হেডল্যাপ’ নামে ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ২০২৩ সালে এই প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে সংখ্যালঘুদের প্রতি নথিভুক্ত ঘৃণাভাষণের সংখ্যা ছিল ৬৬৮টি। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ লিপিবদ্ধ হয়েছে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে। এই তিনটি রাজ্য থেকেই ঘৃণাভাষণের ৪৩ শতাংশ অভিযোগ উঠে এসেছে। সব মিলিয়ে ৭৫ শতাংশ অভিযোগই উঠেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে। এই বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে মার্কিন সংস্থাটি জানিয়েছে, ইজরায়েলের সঙ্গে হামাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জেরেই এ দেশে ঘৃণাভাষণ বেড়ে গিয়েছে। প্রায় একই ছবি এখন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশকে নিয়ে। পড়শি রাষ্ট্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এই কারণে এ দেশের সংখ্যালঘুদের টার্গেট করছে হিন্দুত্ববাদীদের একাংশ। দেশের গেরুয়া শাসক অবশ্য এসব রিপোর্টে আমল দিতে নারাজ। 
দেশজুড়ে এমন বিভাজন-বিদ্বেষের রাজনীতি মাথাচাড়া দিলেও জনসমক্ষে উল্টো সুর গেয়ে চলেছেন মোদি। মাত্র দু’দিন আগে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে সব ধর্ম-সম্প্রদায়ের ঐক্য নিয়ে তাঁকে লম্বা-চওড়া কথা বলতে শোনা গিয়েছে। একইরকম নির্বিকারভাবে লোকসভা নির্বাচনের আগেও তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘আমি হিন্দু-মুসলিম বিভাজন করি না। যেদিন করব, সেদিন রাজনীতি ছেড়ে দেব।’ যদিও এই মোদিকেই আবার দেখা গিয়েছে, গত লোকসভা ভোটের প্রচারে কংগ্রেসের ইস্তাহারকে ‘মুসলিম লিগের দলিল’ বলে দেগে দিতে। কখনও তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ওরা (বিরোধীরা) ক্ষমতায় এলে মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্র কেড়ে নিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের (সংখ্যালঘু) হাতে তুলে দেবে। ওবিসি, এসসি-এসটিদের সংরক্ষণ কোটা কেড়ে নিয়ে তা মুসলিমদের দিয়ে দেবে। আসলে এভাবে বিভাজনই আরএসএস-বিজেপির মূল মন্ত্র। সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি মুছে দেওয়ার চেষ্টাও হচ্ছে। এ দেশের যারা নাগরিক তারা সকলেই যেন হিন্দু—সুকৌশলে এমন প্রচারই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, ঘৃণাভাষণ, বিভাজন-বিদ্বেষকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা চলতে থাকলে এই আগুন নেভার নয়।
4d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পদার্থ ও রসায়নিক বিদ্যার অনুশীলনে বিশেষ উন্নতি।প্রায় সম্পূর্ণ কাজে বাধা আসতে পারে। বিকেল থেকে মানসিক...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৭৮ টাকা৮৭.৫২ টাকা
পাউন্ড১০৫.৯৮ টাকা১০৯.৭২ টাকা
ইউরো৮৮.৭৪ টাকা৯২.১১ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা