বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়

যোগ্য জবাব

সরকার চালাতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দলবল বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন দেশি-বিদেশি বহুজাতিক সংস্থাগুলির সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক অনেকটা ‘সুখী দম্পতি’র মতো। কয়েকমাস আগে ‘নির্বাচনী বন্ড’-কেলেঙ্কারির তথ্য সামনে আসতেই দেখা গিয়েছে, সরকারি সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে কীভাবে নিজেদের দলীয় তহবিল ভরিয়ে তুলেছিল শাসক দল। আদালতের নির্দেশে সরাসরি ‘কামানো’র সেই পথ আপাতত বন্ধ হতেই এখন ঘুরপথে বহুজাতিকের সেবায় মন দিয়েছে মোদি সরকার। কীরকম? কেন্দ্রীয় ভারী শিল্পমন্ত্রক ঠিক করেছে, প্রথম ধাপে কলকাতা সহ দেশের ন’টি বড় শহরে দূষণহীন আধুনিক বাস রাস্তায় নামাবে। দেড় কোটি টাকা মূল্যের এই ই-বাসগুলি কিনবে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা। কেন্দ্র বাসপিছু ভর্তুকি দেবে ২৫ লক্ষ টাকা। ড্রাইভার দেবে রাজ্য সরকার, কন্ডাকটর থাকবে বেসরকারি সংস্থার। কিন্তু এই বাসগুলি প্রতি কিলোমিটারে ৫৫ টাকা আয় করবে—এই ‘গ্যারান্টি’ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকে। কিন্তু ধরা যাক ৫৫ টাকার বদলে আয় হল  ৩০ টাকা। সেক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে বাকি ২৫ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। কোনও রাজ্য সরকার সেই টাকা দিতে আপত্তি করলে তাদের প্রাপ্য থেকে সেই অর্থ কেটে নেবে কেন্দ্র। এ এক অদ্ভুত ব্যাপার। বহুজাতিক সংস্থার এমন ‘নিশ্চিত’ আয়ের দরজা খুলে দিতে মোদি সরকার যে প্রস্তাব পাঠিয়েছে নবান্নে, পত্রপাঠ তা খারিজ করে দিয়েছে মমতা সরকার। নবান্নের এক কর্তার কথায়, এ যেন মামাবাড়ির আবদার! বাস চালিয়ে মুনাফা করবে বেসরকারি সংস্থা, তার ‘গ্যারান্টার’ হবে রাজ্য! দেখা গিয়েছে, কেন্দ্রের এই শর্ত মানলে ‘গ্যারান্টি’ বাবদ বছরে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা খরচ হবে রাজ্য সরকারের। ভর্তুকির কথা ঘোষণা করে তা না দেওয়ার মোদি-কৌশল অবশ্য নতুন নয়। ১০০ দিনের কাজ, আবাস-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্প আছে, যেখানে ‘শর্ত’ লঙ্ঘনের ‘অজুহাতে’ কেন্দ্র প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করেছে এ রাজ্যের সরকারকে। এই নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য দুই সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে কয়েকবছর ধরে। সুতরাং বাসে ভর্তুকি দেওয়ার নামে কেন্দ্র যে আরও একটা বঞ্চনার ফাঁদ পাততে চাইছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কেন্দ্রের এই নতুন ‘প্যাঁচ’-এ জল ঢেলে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা প্রকল্প সামনে এনেছেন। সেখানে বাস রাজ্যই কিনে দেবে, বাস চালানোর দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে আগ্রহী যুবক-যুবতীদের হাতে। তাদের উৎসাহ ভাতা দেবে সরকার। থাকবে না কোনও শর্ত। অর্থাৎ রাজ্যের এই বিকল্প ব্যবস্থায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। 
বহুজাতিকের জন্য শুধু মুনাফার ‘গ্যারান্টি’ বা সরকারি কাজের বরাত পাইয়ে দেওয়াই নয়, মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সরকারি সংস্থা বেচে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এর ভিত্তিও আছে। চার বছর আগে ২০২১ সালে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের নীতি ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, ব্যবসা করা আদৌ সরকারের কাজ নয়। সেবার সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে দেশের ১০০টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ ও তাদের অব্যবহৃত জমি বিক্রি করে প্রায় আড়াই লক্ষ কোটি টাকা তোলার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সময় ছিল চার বছর। এই ১০০টি সংস্থার মধ্যে রয়েছে বন্দর, বিমান বন্দর, বিমা, ব্যাঙ্ক, ক্রুজ টার্মিনাল, টেলিকম, তেল ও গ্যাসের পাইপলাইন, ট্রান্সমিশন টাওয়ার, রেলওয়ে স্টেশন, স্টেডিয়ামের মতো ক্ষেত্র। যুক্তি ছিল, সরকার সরে দাঁড়ালে বেসরকারি সংস্থা সেই অভাব পূরণ করবে। এতে নতুন লগ্নি আসবে। আরও উন্নত হবে দেশের অর্থনীতি। মোদির মত ছিল, পরিস্থিতি এখন অনেক বদলেছে, করদাতাদের টাকায় এইসব সংস্থা চালিয়ে যাওয়া অর্থহীন। বরং বিক্রির টাকা গরিবদের হাতে যেতে পারে। 
ভাগ্যের পরিহাস এমনই যে, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে শরিক দলের হাত ধরে ক্ষমতায় আসায় কৌশল বদলে সেই মোদি সরকারকেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে চাঙ্গা করার কথা বলতে হয়েছে। ২০০টির বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে লাভজনক করে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগতে চাইছে তারা—বলেছিল সরকার। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অব্যবহৃত জমি বেচে যে টাকা আসবে তা সংশ্লিষ্ট সংস্থার উন্নতিতেই বিনিয়োগ করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। চাপে পড়ে এভাবে পিছু হটার এই ‘চাল’ অবশ্য বিশ্বাস করছে না বিরোধীরা। কারণ ইতিমধ্যে রেলের প্ল্যাটফর্ম-সহ কিছু কিছু ক্ষেত্র ও এয়ার ইন্ডিয়া সহ একাধিক সরকারি সংস্থা বেচে দেওয়া হয়েছে। উপযুক্ত সুযোগ পেলে মোদি সরকার যে আবারও দাঁত-নখ বের করবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। তাই বিরোধী দলসহ একাধিক গণসংগঠন এই বহুজাতিক-করণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অনড় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসলে শহরের রাস্তায় ‘কর্পোরেট কালচার’-এ বাস চালানোর প্রস্তাবটি কেন্দ্রের আর্থিক দায় এড়ানোর চেষ্টা মাত্র। একে মোদি সরকারের কর্পোরেট তোষণ নীতির বহিঃপ্রকাশ বলেই মনে করা হচ্ছে।
9d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পদার্থ ও রসায়নিক বিদ্যার অনুশীলনে বিশেষ উন্নতি।প্রায় সম্পূর্ণ কাজে বাধা আসতে পারে। বিকেল থেকে মানসিক...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৭৮ টাকা৮৭.৫২ টাকা
পাউন্ড১০৫.৯৮ টাকা১০৯.৭২ টাকা
ইউরো৮৮.৭৪ টাকা৯২.১১ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা