পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
স্বয়ংক্রিয় বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ আজকের দিনে সমস্ত জায়গায় ব্যবহার হওয়া শুরু করেছে। এই নতুন প্রযুক্তিকে প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রই দ্রুত গ্রহণ করতে শুরু করেছে। হাল আমলে ভোট প্রচারে রাজনীতির ময়দানেও শুরু হয়েছে স্বয়ংক্রিয় বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার। টেলিভিশন কিংবা খবরের কাগজের কাজকর্মেও ব্যবহার হচ্ছে এই এআই প্রযুক্তি। এআই দ্বারা নির্মিত সঞ্চালকের ব্যবহার ইতিমধ্যেই দেশের সংবাদমাধ্যমে দেখা গিয়েছে। এআই প্রযুক্তির ব্যবহার ইদানীংকালে নিত্যদিনের জীবনেও প্রবেশ করছে। ব্যাঙ্কিং, ট্রেডিং, ই-কমার্স, সার্চ ইঞ্জিনের ক্ষেত্রেও এআই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক পার্থপ্রতীম বিশ্বাস বলছিলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শাখা অনেক। তার মধ্যে এক ধরনের ক্ষেত্রে পরিকাঠামো ও পরিষেবা, আর একটি হল শুধু পরিষেবা। ইনফরমেশন টেকনোলজি, কম্পিউটার সায়েন্স এই ধরনের একটা শাখা রয়েছে। কোর গ্রুপের মধ্যে সিভিল, ইলেকট্রিকাল, মেকানিকাল এই ধরনের শাখা রয়েছে। কিছু শাখা রয়েছে যা পরিষেবা কিংবা উত্পাদন সব ক্ষেত্রেই যেতে পারে। কোন শাখায় যাবে, সেটা এরকমভাবে পড়ুয়ারা ভাবতে পারে।’ বিষয় হিসেবে তো সবটাই ভালো। কিন্তু কোন বিষয়ে গেলে বাজারের চাহিদা মেটানো যাবে? পার্থপ্রতীম বিশ্বাস বলছিলেন, ‘পাওয়ার, কনস্ট্রাকশন এই বিষয়গুলিতে চাকরির সুযোগ সীমিত। মাঝারি ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে এই বিষয়গুলি নিয়ে পাশ করলে সুযোগ সীমিত হয়ে যায়।’ এর পাশাপাশি এই অধ্যাপকের পরামর্শ, ‘ভালো বিষয়ের থেকেও প্রতিষ্ঠান খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবার আগে দেখা দরকার, ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি অর্জন করা।’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চিন্ময় ঘড়াই বলছিলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোর বিভাগ নিয়ে তো পড়ুয়ারা সবসময়ই পড়তে চান। এই ক্ষেত্রে পড়াশোনা করে, চাকরি কিংবা গবেষণার সুযোগ মোটামুটি রয়েছে। এখন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সবথেকে জনপ্রিয় বিষয় হল কম্পিউটার সায়েন্স ও তার সমকক্ষ বিষয়গুলি। যেমন, এআই, মেশিন লার্নিং, ডেটা সায়েন্স প্রভৃতি।’ এই এআই নিয়ে পড়াশোনার চাহিদা বাড়লেও রাজ্যের বুকে কি সরকারি প্রতিষ্ঠানে এই বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে? পার্থপ্রতীমবাবু বলছিলেন, ‘এই মুহূর্তে রাজ্যস্তরে এআই মূল পাঠক্রমের মধ্যে বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়। কিন্তু শাখা হিসেবে আসেনি। উত্তরের জলপাইগুড়ি থেকে দক্ষিণের যাদবপুর পর্যন্ত বলছি। তবে আইআইটিতে কিছু জায়গায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। রোবোটিক্সের ক্ষেত্রেও একই কথা বলব।’ এই প্রসঙ্গে চিন্ময়বাবু বলছিলেন, ‘আসলে এআই বিষয়টি সেই কম্পিউটার সায়েন্সের মধ্যেই পড়ে। আমি যাদবপুরে পড়াই। প্রতি দু’বছর অন্তর এখানকার সিলেবাসে পরিবর্তন করা হয়। যে বিষয়গুলি নতুন করে আসছে, সেগুলিকে পাঠক্রমে যুক্ত করা হয়। ইদানীং একটা ধারা লক্ষ্য করছি। অনেকের মধ্যে ধারণা হচ্ছে, সবটা জানব না, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট বিষয়টি নিয়েই পড়াশোনা করব।’ দেখা যাচ্ছে, অনেক পড়ুয়ার মধ্যে এই মানসিকতা আসছে, যে কেউ হয়তো কনস্ট্রাকশন শিখতে চাইছেন। কিন্তু শুধুই বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন শিখছেন। রোড কিংবা ব্রিজ কনস্ট্রাকশন শিখছেন না। এই ধারা বেশ কয়েক বছর ধরে লক্ষ করছেন শিক্ষাবিদরা। অনেক প্রতিষ্ঠান পড়ুয়াদের সেই চাহিদা অনুযায়ী সিলেবাস তৈরির কথা ভাবতেও শুরু করেছে। চিন্ময়বাবু বলছিলেন, ‘কম্পিউটার সায়েন্সের ক্ষেত্রেও এরকম চাহিদা আসছে। তাদের জন্য সেরকম মডিউল তৈরি হচ্ছে। যেমন, আমাদের এখানে ৮টা সেমেস্টারে ২টো বিষয় এআই বা মেশিন লার্নিং নিয়ে অফার করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে ওটা বাড়তে থাকবে। হয়তো আগামী দিনে ৮টা সেমেস্টারে ৮টা বিষয় পাওয়া যাবে।’ শিক্ষাবিদরা বলছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠান যেমন, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি একদম নির্দিষ্টভাবে পড়ায়। যেটুকু একজন পড়ুয়া চাইছে, সেইটুকুই পড়ানো হয়। আমাদের দেশেও ধীরে ধীরে সেই পথেই হাঁটতে যাচ্ছে।
চিন্ময়বাবু বলছিলেন, ‘আসলে এইভাবে পড়াশোনাটা এগলে ওই বিষয়ে অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারেন পড়ুয়ারা। আমাদের সময় এগুলো ছিল না। কিন্তু আমি তো এখন সেটাই পড়াচ্ছি। সরকারি প্রতিষ্ঠান বলতে আইআইটি, এনআইটি, আইআইআইটিতে সুযোগ হয়েছে এই বিষয় নিয়ে পড়ার। যাদবপুরে ফাইনাল ইয়ারে প্রজেক্টের সময় নির্দিষ্ট এই বিষয় রয়েছে।’
এআই, ডেটা সায়েন্স, মেশিন লার্নিংয়ের বিষয়ে দেশের বুকে চাকরির সুযোগ অনেকটাই বাড়ছে।
বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, ২০১৯ সালে এআই আসার পর থেকে চাকরির সুযোগ অনেকটাই বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে শুধুমাত্র ভারতেই প্রায় ৩ লক্ষ এআই কেন্দ্রিক চাকরি তৈরি হবে। কারণ, এই ক্ষেত্রে যে হারে বিনিয়োগ বাড়ছে, তার ভিত্তিতেই অনুমান করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও একটি ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ কমতে থাকলেই আর একটা দরজা খুলে যায়। এক্ষেত্রে এআই সেই কাজ করেছে। সেই সূত্র ধরেই এআই ডেভেলপমেন্ট, ডেটা সায়েন্স, সাইবার সিকিউরিটি, রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাহিদা বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে এই মুহূর্তে ভারতে এআইয়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে। এখানে প্রায় ২৬ শতাংশ ক্ষেত্রে ভাগ বসিয়েছে এআই। এর পরেই আসে শিক্ষা। সেখানেও ১৪ শতাংশ ভাগ বসিয়েছে এআই। দিনকয়েক আগেই লিঙ্কড ইনের চিফ প্রোডাক্ট অফিসার টোমের কোহেন বলেছেন, ‘আমাদের নিজেকে উন্নত করতে হবে। তথ্য বলছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারতে অর্ধেকেরও বেশি চাকরি এআই দ্বারা প্রভাবিত হতে চলেছে।’
অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, এআই কেন্দ্রিক চাকরির সুযোগ সারা পৃথিবীর সঙ্গে দেশেও বৃদ্ধি পেতে চলেছে। কিন্তু এর জন্য দেশের মধ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে দরকার সঠিক পরিকাঠামো। রোবোটিক্স, মেশিন লার্নিং পরবর্তী এআই কেন্দ্রিক বিষয়গুলি পড়াতে গেলে পরিকাঠামো অত্যন্ত জরুরি। তার পাশাপাশি যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকেরও দরকার।