সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
সময় পাল্টাচ্ছে। এখন ছোট থেকে পড়ুয়াদের পড়াশোনা নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকরা। তাই শৈশব থেকেই আচার-ব্যবহার, চরিত্র গঠনের পাশাপাশি কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলে তাঁদের ছোট্ট শিশুটির ভবিষ্যৎ উজ্বল হতে পারে তা নিয়ে সর্বদাই চিন্তায় ডুবে থাকেন মা-বাবারা। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলো, সাঁতার, আঁকা কোনটিতে ভর্তি করলে সুফল মিলবে তা নিয়েও কপালে চিন্তার ভাঁজ অভিভাবকদের। ছোটবেলা থেকেই রাশ টেনে ধরতে চান তাঁরা। কিন্তু সে তো শুধুমাত্র বাড়িতে। স্কুলে গেলে কী হবে? সেখানে বাচ্চা ঠিকভাবে পড়াশোনা করছে তো, নাকি কেবলই দুষ্টুমি করছে! শিক্ষকরা ঠিকমতো নজর দিচ্ছেন না বলেও অনেক সময় অনুযোগ করেন অভিভাবকরা। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্কুলে প্রচুর পড়ুয়া থাকে। আর শিক্ষকদের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকে। ফলে চেষ্টা করেও সকল শিশুদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এছাড়া শিক্ষকদের পক্ষে শিশুদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বসে তাঁদের মনস্তত্ব বুঝে সমস্যা মেটানোও সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাঁদেরও একাধিক ক্লাস নিতে হয়। তা বন্ধ করে কোনও একজন শিশুর সমস্যা মেটানো বা কথা বলা বাস্তবিক সম্ভব নয়।
তাহলে উপায়! ভরসা সেই কাউন্সেলরই। কিন্তু স্কুলে কাউন্সেলর, তাও আবার হয় না কী! নিশ্চয়ই হয়। এখন দেশের নামজাদা স্কুলগুলিতে কাউন্সেলর রাখা হচ্ছে। দুষ্টু পড়ুয়াদের শান্ত থুড়ি গাইড করতে তাদের মতো করে বোঝান কাউন্সেলর। বড়দের মতো বকাঝকা নয় বরং শিশুসুলভ রাস্তাতেই মুশকিল আসান করেন তাঁরা। ‘হামি’ ছবির ভুটু ভাইজানকে যেভাবে অবলীলায় শান্ত করে ফেলতেন ছবিতে স্কুলের ‘কাউন্সেলর’ অপরাজিতা আঢ্য।
কিন্তু আসলে এই কাজটি ঠিক কী ধরনের তা জানতে আমরা কথা বললাম পেরেন্টিং কনসালটেন্ট পায়েল ঘোষের সঙ্গে। তিনি জানালেন, শুধু শিশুকে নয় অভিভাবকদেরও কাউন্সেলিং করা হয়। অনেকেরই বদলির চাকরি। সেক্ষেত্রে শিশুদের অনেক সময় স্কুলে ভর্তি নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। লাগাতার স্কুল পরিবর্তনের ফলে শিশুদের মনের উপর চাপ পড়ে। তা কাটিয়ে ওঠার জন্য শিশুদের সঙ্গে সাবলীলভাবে কথা বলে সমস্যার সমাধান করা হয়। কোন ধরনের স্কুল শিশুটির জন্য ভালো হবে, কোথায় মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে, সেই বিষয়ের দিকেও নজর রাখেন কাউন্সেলররা। এছাড়া স্কুলে অন্যান্যদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সমস্যাও অনেক পড়ুয়াদের মধ্যে দেখা যায়। অনেকক্ষেত্রে বিশেষ কোনও কারণে শিশুদের মন খারাপ হয়, যা তারা সকলের সঙ্গে শেয়ার করতে পারে না। সেই মানসিক চাপ কাটানোর দিকেও নজর রাখেন কাউন্সেলররা। মোদ্দা কথা তাঁদের কাছে এসে মন খুলে কথা বলে শিশুরা। অনেক অভিভাবকদের মধ্যে নামীদামি স্কুলে ভর্তি করার প্রবণতা দেখা যায়। সেখানে ভর্তি হতে না পারলে জীবনের সব শেষ এমন একটা ব্যাপার। এর ফলে শিশুদের উপর লাগাতার চাপ বাড়ান মা-বাবারা। ফলে বাড়ির স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়। অভিভাবকদের রাগ-অভিমান-ঝগড়াঝাঁটি-অশান্তির ফলে শিশু আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। সেই সমস্যা থেকে ফের শিশুটিকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে অনেকখানি সাহায্য করেন কাউন্সেলররা। কিন্তু কারা এই পেশায় আসতে পারবেন প্রশ্ন করা হলে পায়েল ঘোষের জবাব, মূলত সাইকোলজি এবং চাইল্ড সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করে থাকলেই এই পেশায় আসা যায়। বর্তমানে কিছু গভর্নমেন্ট স্কুলে কাউন্সেলর নিয়োগ করা হলেও নামীদামি অধিকাংশ প্রাইভেট স্কুলেই কাউন্সেলর নিয়োগ করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ সাগ্নিক মুখোপাধ্যায় জানান, বড়দের মধ্যে যেমন সাইকোলজিক্যাল সমস্যা দেখা দেয়, তেমনই শিশুদের মধ্যেও হয়।
সেই সমস্যার সমাধান করাই কাউন্সেলরদের কাজ। সোজা কথায় বলতে গেলে, একটি স্কুলে প্রচুর পড়ুয়া রয়েছে। তাদের মধ্যে কোনও একজনের সমস্যা দেখা দিলে শিক্ষকদের পক্ষে অনেক সময় তা সমাধান করা সম্ভব হয় না। তারজন্যই প্রয়োজন হয় কাউন্সেলরদের। পারিবারিক সমস্যার কারণে বহু শিশু আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। তখন শিশুদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করা হয়। প্রয়োজনে কথা বলা হয় অভিভাবকদের সঙ্গেও। সাইকোলজি নিয়ে পড়শোনা করে এই পেশায় আসাই সুবিধাজনক বলে জানিয়েছেন সাগ্নিকবাবু।
সম্প্রতি স্কুল কাউন্সেলিংয়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স চালু করেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এক বছরের এই কোর্সটি পড়ানো হয় রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ ক্যাম্পাসের অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজি বিভাগে। কোর্স ফি ২০ হাজার টাকা। আসন সংখ্যা মাত্র ২০টি। বিশেষ এই কোর্সে আবেদন করার জন্য সাইকোলজি বা অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজিতে এমএ বা এমএসসি থাকতে হবে। ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করা হয়। বিজ্ঞপ্তি বের হওয়ার পর www.caluniv.ac.in ওয়েবসাইট থেকে আবেদনপত্র ডাউনলোড করতে হবে। ফর্ম যথাযথভাবে পূরণ করার পর তার সঙ্গে ২০০ টাকার একটি ডিমান্ড ড্রাফট দিতে হবে। তফসিলি এবং প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে দিতে হবে ১০০ টাকা। ড্রাফটটি ‘university of calcutta’-এর অনুকূলে কলকাতায় প্রদেয় হতে হবে। ওই ড্রাফটির পিছনে প্রার্থী নিজের নাম এবং যে কোর্সের জন্য আবেদন করছেন তা লিখতে হবে। এর সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথিপত্রের স্বপ্রত্যয়িত নকল-সহ পূরণ করা আবেদনপত্র খামে ভরে পাঠাতে হবে। খামের উপর অবশ্যই যে কোর্সের জন্য আবেদন করছেন তা লিখে দেবেন। আবেদনপত্রটি পাঠাবেন-The office of The Secretary, University college of Science, Technology and Agriculture. 92, Acharya Prafulla Chandra Road, Rajabazar, Kolkata 700009 এই ঠিকানায়। আগ্রহীরা আবেদনপত্রটি সাধারণ ডাকে জমা দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে সরাসরিও জমা দিতে পারেন।
‘হামি’ ছবিতে স্কুল কাউন্সেলরের চরিত্রে অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য।