শৌণক সুর: প্লাস্টিক একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার হলেও বর্তমানে এটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিশ্বে দূষণের একটি অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। বাজার করতে হলে প্লাস্টিকের ব্যাগ, মিষ্টির প্যাকেটও প্লাস্টিকের। জলের বোতল, দুধের প্যাকেট, এমনকী খাবার থালা-বাটি-গ্লাসও প্লাস্টিকের। দৈনন্দিন জীবনের একেবারে গভীরে ঢুকে গিয়েছে এর ব্যবহার। ইতিমধ্যেই পাহাড়, সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে প্লাস্টিকের ব্যবহার রুখতে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। এছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। একাধিকবার অভিযানও চালানো হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি কিছুতেই বাগে আসছে না। ইতিমধ্যেই হাওড়া পুরসভা প্লাস্টিক বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে ইউএনডিপির বা ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে নাম লিখিয়েছে। পুরসভার দাবি, আন্তর্জাতিক এই উদ্যোগে অংশগ্রহণ করার ফলে শীঘ্রই হাওড়া শহরে চালু হবে প্লাস্টিক বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার কাজ। প্লাস্টিকমুক্ত দেশ গড়ার ডাক দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর ‘মন কি বাত’-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একাধিকবার প্লাস্টিকের ব্যবহারের ফলে হওয়া দূষণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। চেষ্টা করেছেন জনমানসে সচেতনতা বৃদ্ধি করার। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। বাজারে গিয়ে এটা সেটা কেনার সময়ই পকেট থেকে টুক করে বেরিয়ে পড়ে প্লাস্টিকের থলি। তাতে মনপসন্দ জিনিস কিনে বাড়ি রওনা দেন বেশিরভাগ মানুষই। দোকানে, শপিং মলে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও তাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। হাতে গোনা কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ীরা এই নির্দেশিকা মানলেও বাকিরা কেউই এই নির্দেশ মানেন না। ফলে এবার সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহারের চিন্তা-ভাবনা করছে প্রশাসন। অর্থাৎ, এমন প্লাস্টিক যা একবারের বেশি ব্যবহার করা যাবে না। তবে নিত্যদিনের ব্যবহারের সামগ্রীর পাশাপাশি ঘরের প্রায় সমস্ত জিনিসপত্রের মধ্যেই কমবেশি প্লাস্টিকের ব্যবহার দেখা যায়। যেমন টিভির ফ্রেম, ওয়াশিং মেশিনের বডি, ঘর সাজানোর নকল ফুল, ফ্রিজের ভিতরের বেশ কিছু অংশ, আধুনিক ট্রলি ব্যাগ, জলের বোতল, স্নানের বালতি। এসবই কি তাহলে খারাপ? একটি যুগান্তকারী আবিষ্কারের কি শুধুই খারাপ দিক আছে। ভালো কিছুই নেই। নিশ্চয়ই আছে। পরিবেশ মন্ত্রকের নিয়ম মেনে প্লাস্টিকের ব্যবহার করতে হবে এবং তা প্রস্তুতের কিছু নিয়মকানুনও রয়েছে। এমনকী, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্লাস্টিক টেকনোলজিরও উন্নতি সাধন করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে একাধিক কোর্স। সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব প্লাস্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বা সিপেট শুরু করেছে প্লাস্টিক টেকনোলজি সম্পর্কিত ডিপ্লোমা, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা এবং পোস্ট ডিপ্লোমা কোর্স। প্লাস্টিক টেকনোলজি এবং প্লাস্টিক মোল্ড টেকনোলজির উপর ডিপ্লোমা কোর্সের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক। এই বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। এই কোর্সের মেয়াদ ৩ বছর। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন প্লাস্টিক প্রসেসিং অ্যান্ড টেস্টিংয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসসি। কোর্সের মেয়াদ ২ বছর। পোস্ট ডিপ্লোমা ইন প্লাস্টিক মোল্ড ডিজাইনের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং/ প্লাস্টিক/ পলিমার/ টুল প্রোডাকশন/ অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং/মেকাট্রনিক্স/ টুল অ্যান্ড ডাই মেকিং/ পেট্রোকেমিক্যালস/ ইন্ডাস্ট্রিয়াল/ ইনস্ট্রুমেন্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তিন বছরের ডিপ্লোমা। পাশাপাশি সিপেট থেকে প্লাস্টিক টেকনোলজি এবং প্লাস্টিক মোল্ড টেকনোলজির উপর ডিপ্লোমা কোর্স পাশরাও এই কোর্সে আবেদনের যোগ্য। এই কোর্সটির মেয়াদ দেড় বছর। প্লাস্টিক টেকনোলজির এই সব ক’টি কোর্সের ক্ষেত্রেই বয়সের কোনও কড়াকড়ি নেই। সেমিস্টার পিছু ডিপ্লোমা কোর্সের খরচ ১৬ হাজার ৭০০ টাকা। অন্যদিকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা এবং পোস্ট ডিপ্লোমার ক্ষেত্রে সেমিস্টার পিছু খরচ ২০ হাজার টাকা। সঙ্গে অন্যান্য খরচ এবং হোস্টেল ফি অতিরিক্ত। সকল কোর্সের মতোই বিশেষ এই কোর্সগুলিও জুলাই মাস নাগাদই চালু হবে।
কোথায় আবেদন করতে হবে? আগামী ৩১ মে ‘সিপেট জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগজাম-২০২০’-র মাধ্যমে ভর্তির প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হবে। এটি কেন্দ্রীয় সরকারের রসায়ন এবং পেট্রোরসায়ন বিভাগের একটি সংস্থা। আগ্রহীরা https://eadmission.cipet.gov.in/ -এ গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনকারীর একটি বৈধ ইমেল আইডি থাকতে হবে। সাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার পর প্রার্থীর নির্দিষ্ট মাপের স্ক্যান করা ফোটো, স্বাক্ষর এবং প্রয়োজনীয় নথি সাবমিট করতে হবে। এরপর নেট ব্যাঙ্কিং, ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হবে। অফলাইনেও চালানের মাধ্যমে ফি জমা দেওয়া যাবে স্টেট ব্যাঙ্কের যে কোনও শাখায়। অনলাইনে ফি জমা দেওয়ার পর এক কপি প্রিন্টআউট রেখে দেবেন এবং অফলাইনে ফি জমা দিলে সেটির স্ক্যান কপি সাইটে আপলোড করতে হবে। দুটি ক্ষেত্রেই আবেদনপত্র যথাযথভাবে পূরণ করার পর এক কপি করে প্রিন্টআউট নিয়ে রেখে দেবেন। তবে এগুলি কোথাও পাঠানোর প্রয়োজন নেই। আবেদন করার শেষ তারিখ ২২ মে। নির্দিষ্ট সেন্টারে অনলাইনের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাইয়ের পরীক্ষা হবে আগামী ৩১ মে।
রাজ্যের কলকাতা, আসানসোল এবং হলদিয়ায় সেন্টার রয়েছে। বিশদ জানার জন্য আগ্রহীরা ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। প্রয়োজনে ইমেল করতে পারেন eadmission@cipet.gov.in -এ। এছাড়া ১৮০০ ১২১ ৮৮২০ হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করেও সরাসরি কথা বলতে পারেন।