উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
এখনও পর্যন্ত বাজারে সরু ও পালিশ করা চকচকে চালের চাহিদা বেশি। কিন্তু দৃষ্টিনন্দন এই চালের পুষ্টিগুণ প্রায় নেই বললেই চলে। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, চালের উপরে যে পাতলা খোসা থাকে, সেটির মধ্যেই আবদ্ধ থাকে পুষ্টিগুণ। চালের খোসায় থাকে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফোলেট সহ ভিটামিন বি, প্রোটিন, ফাইবার। রাইস মিলে ধান ভাঙানোর পর সেই খোসা উঠে যাওয়ায় সেসব নষ্ট হয়ে যায়। চালের মধ্যে থেকে যায় চাষের সময় প্রয়োগ করা রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অবশেষ। দেখতে সুন্দর লাগার জন্য রাইস মিলে চাল পালিশ করে দেওয়ায় ৬০-৭০ ভাগ পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে লাল অথবা কালো চাল অনেক বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ বলে দাবি তাঁদের। কৃষি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দেখতে খুব একটা ভালো না হলেও রেড রাইস ও ব্ল্যাক রাইসের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। এ ছাড়াও এই দুই ধরনের চাল লোহা, জিঙ্ক ও ফাইবার সমৃদ্ধ। এবং কম শর্করাযুক্ত। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৪০-৪২। ফলে মধুমেহ রোগীরা অনায়াসেই এই চালের ভাত খেতে পারেন। তাঁদের বক্তব্য, ব্ল্যাক রাইস তার গুণের কারণে মানবদেহ থেকে টক্সিন নির্গমণে যেমন সহায়তা করে, তেমনই হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে, ওজন কমাতেও বিশেষ কার্যকরী।
রাজ্যে বিভিন্ন জেলায় উৎপাদিত লাল ও কালো চাল জৈব কৃষি হাট, কৃষক বাজার, রাজ্য সরকারের সুফল বাংলা-র স্টল এমনকী অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি কম-বেশি রপ্তানি হচ্ছে। ফুলিয়া কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সহকারি কৃষি অধিকর্তা ড. অনুপম পাল জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্র অঞ্চলের রপ্তানিযোগ্য কালো চাল সুগন্ধী ‘কালাভাত’ এখন এ রাজ্যে চাষ হচ্ছে। আমাদের কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কালো চালের সাতটি জাত সংরক্ষণ করা হয়েছে। অন্যান্য দেশি ধানের মতো এই ধান চাষের খরচ কম। সঠিক পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করতে পারলে একই বীজ দিয়ে দীর্ঘদিন চাষ করা যাবে। এমনিতেই এই ধরনের ধানে রোগপোকার আক্রমণ কম হয়। জৈব উপায়ে চাষ করতে পারলে বিঘায় প্রায় ৬ কুইন্টাল ফলন পাওয়া সম্ভব। বাজারে দামও মেলে ভালোই। প্রসঙ্গত, ব্ল্যাক রাইস কেজি প্রতি ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ব্ল্যাক রাইসের রং কালচে লাল। ভাতের রং কালো। এই চালে ক্যান্সার প্রতিরোধক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগের উপস্থিতি রয়েছে। ফাইবার বেশি থাকায় এই চাল অ্যান্টি ডায়াবেটিক। কালো চাল লোহা ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ। এই চালের ভাত আঠালো ও সুগন্ধী। পায়েস, খিচুড়ি, ঘি-ভাত, পাস্তা, পাঁপড়, নুডুলস করেও খাওয়া যায়। সুগন্ধী লাল ও কালো চাল ধোয়া জল শিশু ও রোগীদের পথ্য হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
অতীতে আউশ ও আমনের বেশিরভাগ ধানের চালের রং ছিল লাল। ঢেঁকিতে সেসব চাল ভাঙা হতো। কিছুটা খোসা উঠে গেলেও চালের উপরের অংশে লালভাব থাকত। সেই চাল বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের খাওয়ানো হতো। এই চালে থাকা লোহা ও ফলিক অ্যাসিড চাহিদা মেটাত। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, লাল চালের কয়েকটি জাত, ষাটিয়া, শালকেলে, কেলে আউশ, কেলাস, ভুতমুড়ি, অগ্নিবাণ, লাল দুধেশ্বর, খাড়া প্রভৃতি। পালিশ না করা চাল বিভিন্ন শপিং মলে ব্রাউন রাইস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। মণিপুরে কালোচাল চাহা জাতটিও প্রচলিত। এখন ওই চাল অসমেও পাওয়া যাচ্ছে। সাদা চালের সঙ্গে পথ্য হিসেবে লাল বা কালো চালের ভাত সপ্তাহে অন্তত দুদিন খাওয়া যেতে পারে। এইসব চালের উপরের খোসা মোটা। তাই ভাত হতে একটু বেশি সময় লাগে। সেজন্য একরাত ভিজিয়ে রেখে প্রেসার কুকারে ৫টি সিটি দিলে ভাত হয়ে যায়।
উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের দেবেশগঞ্জ, শ্রীধরকাঠি প্রভৃতি গ্রামের বহু কৃষক রেড রাইস ও ব্ল্যাক রাইস ধানের চাষ করছেন। কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে ব্লকে ফার্মার্স স্কুল খোলা হয়েছে। সেখানে কীভাবে এই সব ধান চাষ করতে হবে, তা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। চাষিরা জানিয়েছেন, আমনের মরশুমে তাঁরা ব্ল্যাক রাইস ও রেড রাইস চাষ করে থাকেন। আষাঢ় মাসের শেষে অথবা শ্রাবণের প্রথমে ধান রোয়া করা হয়। বীজতলা তৈরি করে তিন সপ্তাহের চারা মূল জমিতে বসাতে হবে। গুছিতে একটি করে চারা বসাতে পারলে ফলন বেশি পাওয়া যায়। মোটামুটিভাবে ১২০দিনের ফসল। রেড রাইসের মধ্যে তালমুগুর জাতটি লবন সহনশীল। পাটনাই, ওড়াশালের মতো জাতগুলিও ভালো। এরা জল জমা সহ্য করতে পারে।