কারও কাছ থেকে কোনও দামি উপহার লাভ হতে পারে। অকারণ বিবাদ বিতর্ক এড়িয়ে চলুন। স্বাস্থ্য ... বিশদ
‘একটা সমস্যায় পড়ে তোকে ফোন করলাম। ‘পারমিতার একদিন’-এর কস্টিউম তুই কর’— অনেক রাতে ল্যান্ডলাইনে ফোন করে একথা বলেছিলেন অপর্ণা সেন। সেই শুরু। ‘কস্টিউম ডিজাইন নিয়ে ভাবিনি। কিন্তু সিনেমা নিয়ে আমার আগ্রহ ছিলই। রিনাদি (অপর্ণা সেন) বললেন, তোর যেমন রুচি সেটা আমার কাজে লাগবে। তোকে সব শিখিয়ে দেব’, বললেন সাবর্ণী দাস। টলিউডের প্রথম সারির কস্টিউম ডিজাইনার।
‘রিনাদি প্রথমে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুই কী ভাবছিস? সনকা (ওই ছবিতে অপর্ণা অভিনীত চরিত্র) কেমন পোশাক পরবে? আমি মধ্য কলকাতায় থেকেছি। উত্তর কলকাতায় যেমন দেখেছি, আমার বন্ধুর মায়েরা যেমন শাড়ি পরতেন, সেটা বললাম। রিনাদি বললেন, এই তো তুই জানিস। করতে গিয়ে দেখলাম কাজটা কঠিন। পদে পদে বকুনি খাচ্ছি আর শিখছি। রিনাদিই কলকাতায় প্রথম অভিনয়ের ওয়ার্কশপ শুরু করেছিলেন। বলেছিলেন, এই ওয়ার্কশপে থাকলে বুঝতে পারবি আমাকে নরম শাড়ি দিতে হবে। যাতে আঁচলের খুঁটটা হাতে জড়াতে পারি। কড়া মারের শাড়ি দিবি না। উনিই আমার মাস্টারমশাই’, কৃতজ্ঞতার স্বর প্রায় ৮০টা ছবির কারিগর সাবর্ণীর।
সাবর্ণীর মায়ের আলমারিতে ছিল নানা প্রাদেশিক শাড়ির সমাহার। তা দেখেই ছোট থেকে টেক্সটাইলের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তাঁর। ইন্ডাস্ট্রিতে এই পেশায় তাঁর পূর্বজা কারা? সাবর্ণীর উত্তর, ‘রিনাদির কাছে শুনেছি উনি আসার আগে যাঁরা সাপ্লায়ার অর্থাৎ যাঁদের দিয়ে কস্টিউম তৈরি করানো হয়, তাঁদের সঙ্গে পরিচালকরা বসে পোশাক পরিকল্পনা করে নিতেন। সত্যজিৎ রায় পোশাক নিয়ে খুব সচেতন ছিলেন। ওঁর সব ছবির কস্টিউম করতেন ওঁর স্ত্রী বিজয়া রায়। এছাড়াও আরও অনেকে করতেন, সকলের নাম এখনই মনে পড়ছে না।’
সাবর্ণী নিজের পরিচয় লুক বা ক্যারেক্টার ডিজাইনার হিসেবে দিতেই স্বচ্ছন্দ। কস্টিউম ডিজাইনারের সঙ্গে লুক ডিজাইনারের পার্থক্য কোথায়? বুঝিয়ে বললেন, ‘আমি কস্টিউম ডিজাইন করি বটে। কিন্তু আমার মূল কাজ লুক ডিজাইন। যাঁরা ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তাঁরা কস্টিউম ডিজাইন করতে পারেন। ধরা যাক ‘রকি রানি’তে আলিয়া (ভাট) যে ধরনের ব্লাউজ পরেছেন, আমার সাধ্য নেই ওই ব্লাউজ তৈরি করব। আমি নকল করে কারিগরকে বলতে পারি। কিন্তু ওগুলো খুব টেকনিক্যাল জিনিস।’ সাবর্ণী অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, ‘বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে যাঁরা পড়াশোনা করে এসেছেন, তাঁরা ফ্যাশনটা বোঝেন। কিন্তু লুক কেমন হবে তা কি সকলে বোঝেন? যেমন আমি ফ্যাশনের অনেক কিছু পারি না। রাজ (চক্রবর্তী, পরিচালক) আমাকে ‘যোদ্ধা’ ছবির গানের কস্টিউম করতে বলেছিলেন। আমি বলেছিলাম, সম্ভব নয়। কারণ টেকনিক্যালি আমি পারব না। আমার ওটাতে আগ্রহও নেই।’
ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে এই পেশার সম্মান কতটা? সাবর্ণীর অভিজ্ঞতা, ‘আমার প্রথম ছবি অপর্ণা সেনের সঙ্গে। ঋতুপর্ণ ঘোষ, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আমার বন্ধু। কিন্তু এঁদের সঙ্গে কাজ করেছি, তার সুযোগ অন্য ক্ষেত্রে নিই না। ফলে ব্যবহারিক সম্মান আমি পেয়েছি। এর উল্টোদিকও আছে। অনেক ডিজাইনার দাবি করে, শ্যুটিংয়ে তাকে কেন ঘরে খাবার দেওয়া হবে না? নতুনরা ভাবে, এটা তার প্রাপ্য। আদেশ করার স্বর তাদের কথায় ধরা পড়ে। আসলে মনে রাখতে হবে আমি একজন টেকনিশিয়ান। স্টার নই। এটা মাথায় রাখলে পুরোটা অনেক সম্মানের হবে বলে মনে হয়।’
বাইরে থেকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির যা যা দেখা যায়, তার মধ্যে সিংহভাগ গ্ল্যামার। নতুন যাঁরা কাজ করতে আসবেন বলে ভাবছেন, তাঁদের জন্য সাবর্ণীর কী পরামর্শ? হেসে বললেন, ‘ফিল্মে গ্ল্যামার শুধুমাত্র স্ত্রিনে। প্রসেনজিৎ বা ঋতুপর্ণাকে যে পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় সেটা কেউ দেখতে পান না। নতুনদের জন্য কঠিন সময়। তবে আমি উৎসাহই দেব। কিন্তু একটু পড়াশোনা করতে হবে। ফ্যাশন ডিজাইনিং পড়ে এলেও জানতে হবে যেটা পড়েছেন, শুধু সেটাই অ্যাপ্লায়েড নয়। তার বাইরেও অনেক কিছু শিখতে হবে।’