কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
আপনার আগের ছবি ‘টোপ’-এ আমরা চন্দন রায় সান্যাল অর্থাত্ গজাকে দেখেছি, সে গাছে থাকে। পশুদের সঙ্গে কথা বলে। সে একজন অন্য জগতের বাসিন্দা। আবার ‘উড়োজাহাজ’ ছবিতেও চন্দনের ভাবনার স্তরটা অন্য রকমের। যে স্বপ্ন নিয়ে দিব্য বেঁচে থাকতে পারে। আমরা কি কোনও ট্রিলজির গন্ধ পেতে পারি?
একেবারেই নয়। কোনও গন্ধ পাওয়ার কারণই নেই। যেমন ভাবে মাথায় এসেছে তেমন ভাবেই তৈরি করেছি।
বর্তমান সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি ‘উড়োজাহাজ’-এ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। চারপাশের এই অস্বস্তিকর পরিবেশ, আপনাকে বিরক্ত করে?
সে আর বলতে! অবশ্যই বিরক্ত করে। এইসব তো আর ঘটার মতো ঘটনা নয়। যে কোনও সুস্থ মানুষের বিরক্ত হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
এই বিরক্তিকর পরিবেশটা কি আপনার শিল্পীসত্তাকে ট্রিগার করে?
(ভেবে) তা হয়তো করে না। একজন কৃতী মানুষ অবশ্যই এইসব ঘটনা দেখে দুঃখ পান। কিন্তু রিঅ্যাক্ট করা বন্ধ করেন না। কেউ কবিতায়, কেউ ছবিতে, কেউ ফিল্মে, নানারকম ভাবে রিঅ্যাক্ট করে।
এরকম তো অনেক কৃতী মানুষ রয়েছেন, যাঁরা হয়তো এই ঘটনাগুলো নিয়ে রিঅ্যাক্টও করেন। কিন্তু তাঁদের নিজস্ব ক্ষেত্রে সময়কে তুলে ধরার বিষয়টা দেখা যায় না। শৈল্পিক ক্ষেত্রে সময়কে তুলে ধরাটা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?
(খানিক ভেবে) সময়কে তুলে ধরা উচিত নয়। সময় নিজের থেকেই জায়গা করে নেবে। যদি সময় নিজের থেকে চলে আসে, তাহলে ভালো। যদি না আসে তাহলেও খারাপ আমি বলব না। অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা নিজের কাজে সেভাবে রিঅ্যাক্ট করেন না। তাই বলে তাঁদেরকে ত্যাজ্য বা ব্রাত্য বলে দাগিয়ে দেওয়ার কোনও মানে হয় না।
আমরা দেখেছি, আপনার ছবির মধ্যে কোথাও যেন কবিতা সম্পৃক্ত হয়ে যায়। সেটা চিত্রনাট্য হতে পারে, দৃশ্যায়ন হতে পারে। চলচ্চিত্র এবং কবিতা, এই দু’টো বিষয় পাশাপাশি কীভাবে যায়? প্রক্রিয়াটা যদি বলেন।
আসলে কবিতা বিষয়টা আলাদা। আমার ছবিতে কবিতা খোঁজার কোনও কারণ নেই। চারপাশে শুনি অনেকে বলেন, কবিতার মতো। কবিতার মতো বলতে তাঁরা হয়তো বোঝাতে চান, একটু অন্যরকম। অন্যভাবে দেখা এবং বলা। নিজেকে এক্সটেন করাটাই আমার ছবিতে আসে। যেমন ‘উড়োজাহাজ’ একটা স্বপ্ন দেখা মানুষের গল্প। সেই স্বপ্নই একটা সময় মানুষের জীবনে ভয়ঙ্কর সময় ডেকে আনে। যেখানে যেখানে ছবিটি দেখানো হয়েছে, আমি দর্শকদের অসম্ভব বাহবা পেয়েছি। একজন দর্শক আমাকে এসে বললেন, আপনার ছবির জন্য বেঁচে থাকতে ভালো লাগে। হয়তো তাঁরা কোথাও একটা আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে যান। সেটাকে কবিতা বললে, সবটা বলা হল না।
দীর্ঘদিন ধরে প্রচুর ফেস্টিভ্যাল, প্রচুর পুরস্কার পেয়ে এসেছেন। এখনও ছবি তৈরি করার তাগিদ কোথা থেকে অনুভব করেন?
তাগিদ ফিল্ম তৈরি করার। কোনও কিছু পাওয়ার তাগিদ আমার নেই। আমি সারা জীবনে দেশে-বিদেশে যা পুরস্কার পেয়েছি, সেটা একমাত্র সত্যজিত্ রায় পেয়েছেন। কিন্তু তার ফলে আমার মনে হয়নি, সবটুকু করতে পেরেছি। তাগিদটা আরও কাজ করার। তাগিদটা আরও কবিতা লেখার।
কবিতা লেখার প্রসঙ্গে যদি বলি, আপনি তো এখনও কবিতা পাঠের আসরে যান। নিয়মিত চর্চা করেন। নতুনদের মধ্যে তাগিদ অনুভব করেন?
অনেকের কবিতা পড়ে মুগ্ধ হই। তাঁদের লেখা পড়ে বুঝতে পারি, কবিতার প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে কবিতা লিখছেন। কিছু পাওয়ার জন্য লিখছেন না। এই কথাটাই সিনেমা করিয়েদের উদ্দেশে বলতে পারলে খুশি হতাম। সেটা বলতে পারছি না। বাংলা ছবির মান আরও একটু ওঠা দরকার।
ঠিক কোথায় খামতি থেকে যাচ্ছে বলে মনে হয়?
একটাই কথা বলতে হয়, ভয়হীন এবং লোভহীন হওয়া দরকার। ফিল্মকে গভীর বিশ্বাসের সঙ্গে ভালোবাসা দরকার। তাহলেই ফিল্ম আরও ভালো হবে।
কবি ভাস্কর চক্রবর্তী, কবি সুব্রত চক্রবর্তী তো আপনার খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। তখনকার সাহিত্য সমাজ থেকে এখনকার সময় তো একটা পরিবর্তন এসেছে…
(থামিয়ে) না না এগুলো ঠিক নয়। সময় সবসময় সুন্দর থাকে। সময়কে সুন্দর করে নিতে হয়। আমাদের সময়ও সুন্দর ছিল। ভাস্কর, সুব্রত, শামসের আমরা গভীর বন্ধু ছিলাম। সেই বন্ধুত্বের কোনও তুলনা হয় না। তাঁরা সবাই চলে গিয়েছেন। মাঝে মাঝে আমার খুব একা লাগে। এখনকার সময় এই সময়ের মতো। এখন নিশ্চয়ই কবিদের মধ্যে বন্ধুত্ব আছে।
আপনাদের বন্ধুত্বের গল্প বলবেন?
বন্ধুত্বের গল্প বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হয়। ভাস্কর হঠাত্ আমায় একদিন বললেন, আমার প্রথম বই বেরচ্ছে ‘শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা’। আপনাকে উত্সর্গ করব। ভাস্কর আমাকে আপনি করে বলতেন। আমিও আপনি করে বলতাম। সুব্রতদা আমার থেকে বয়সে বড় ছিলেন। আমি তুমি করে বলতাম। আমি ওদের বাড়িতে থেকেছি। শামসেরের বাড়িতে যেতাম। বন্ধুত্বের গল্প বলে সেই ব্যাপারটাকে সঠিকভাবে প্রকাশ করা যাবে না।
আগামী ছবির বিষয়ে যদি কিছু বলেন?
একদমই কাঁচা অবস্থায় রয়েছে। সে সদ্য জন্মেছে। এখনই তাকে নিয়ে নাড়াচাড়া করা উচিত হবে না। গল্প ভেবে রেখেছি। দেখা যাক। এই ছবিটা মুক্তি পাক।
এখন যেসব তরুণ পরিচালক বাংলা ভাষায় অন্যধারার ছবি তৈরি করছেন...
(থামিয়ে) কারা তাঁরা?
প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য। তাঁর ছবি প্রেক্ষাগৃহ পায় না। পেলেও সেটা হাতে গোনা। এর কারণ কী? দর্শকদের কি এখনও স্বাদ তৈরি হয়নি?
আসলে ছবি দেখার অভ্যাস বদলে গিয়েছে। এখন ঘরে বসে ছবি দেখতে চায়। শুনেছি অনেকে সেল ফোনে ছবি দেখতে চায়। এই অভ্যাসগুলো হলে গিয়ে ছবি দেখার অভ্যাসকে ক্ষতি করেছে। তারপর খুব বেশি ভালো ছবিও তৈরি হয় না। যার ফলে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নেয়। ভালো ছবি তৈরি করতে পারলে সেই অভ্যাস ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
আপনি তো দেশের বাইরে যান। ওখানে ছবি দেখার অভ্যাসটা কীরকম?
যথেষ্ট। বিদেশে হলে গিয়ে ছবি দেখছেন দর্শক। এটা খুবই ভালো লাগার বিষয়।
‘টোপ’, ‘উড়োজাহাজ’ দু’টি ছবিতেই চন্দন রায় সান্যাল, সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় ছিলেন। একটা টিম তৈরি হলে কি কাজ করতে সুবিধা হয়?
না। আমি অনেক নতুনদের সঙ্গে কাজ করেছি। যখন যাঁদের মনে হয়, তাঁদের নিয়ে কাজ করতে অসুবিধা হয় না। ‘আনওয়ার কা আজব কিস্সা’তে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি ছিলেন। অমৃতা চট্টোপাধ্যায় ছিলেন। ওঁরা তো নতুন ছিলেন। আমি ওঁদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশি। কাজেই অসুবিধা হওয়ার কারণ নেই।