কৌশানী মিত্র: সায়ন্তন ঘোষালের বিমল-কুমার ফ্র্যাঞ্চাইজির বৈশিষ্ট্য বোধহয় ফ্রেশ লোকেশন আর জমজমাট অভিযান। আজকাল নাকি দর্শক গোয়েন্দা-অ্যাডভেঞ্চার আর থ্রিলার ছাড়া কিছুই দেখছেন না! কিন্তু এই ঘরানার ভালো কাজ আর বাংলায় কোথায়, তাই অগত্যা আমাদের ঘরকুনো দর্শক, ছুটির দিনে বাড়িতে মাংস-ভাত খেয়ে দুপুরে জব্বর ঘুম দেওয়া দর্শক এখন বিদেশমুখী। হলিউড আর বলিউডেই যারা নিজেদের নিয়তি লিখে রেখেছেন তাদের জন্য ‘সুরিন্দর ফিল্মস’ প্রযোজিত ‘সাগরদ্বীপে যকের ধন’ একটি শীতকালীন উপহার। হ্যাঁ মানলাম টলিউডের বিগ বাজেট ততটা ‘বিগ’ নয়। কিন্তু সেই দিয়েও যে সাধ্যমতো একটা আধুনিক গ্রাফিক্সের কাজ সমেত অ্যাডভেঞ্চার ছবি তৈরি করে ফেলা যায়, সেটুকু ভাবার জন্য পরিচালককে হ্যাটস অফ।
গল্প বললে মজা নষ্ট, তাই রেখে ঢেকে বলা যেতে পারে। বিমল এবং কুমার এবার রেড মার্কারির খোঁজে পাড়ি দেবে থাইল্যান্ড। সঙ্গে থাকবে রুবি চ্যাটার্জি আর একটি ফুটফুটে শিশু। বৈজ্ঞানিক রাধেশ্যাম ধর, যিনি এই রেড মার্কারির খোঁজ পেয়েছিলেন তাঁর ছেলে বাঁকাশ্যাম ধর এবং ফেলুদার যেমন সিধু জ্যাঠা সেরকম বিমলের হীরুদা, তাঁরাও সঙ্গী হবেন। গল্পের শুরুতেই রুবি তার স্যারের কাছে পুরো ব্যাপারটা জানাবে, সেই বৈজ্ঞানিক মানুষটিও পৌঁছে যাবেন থাইল্যান্ড। অচেনা দেশে গাইড আল মাহারি। এই এত চরিত্রের এক জায়গায় জড়ো হওয়ার মাঝের গল্পগুলিও বেশ সুন্দর ভাবে বুনেছেন পরিচালক। শেষটিও ভাবনায় এবং চিত্রায়নে বাহবা দেওয়ার মতন। চিত্রনাট্য এবং গল্প সাজানো হয়েছে বেশ যত্ন নিয়ে। সিনেমাটোগ্রাফার রম্যদীপ সাহা এবং কালারিস্ট দেবজ্যোতি ঘোষের নাম বিশেষ ভাবে বলা দরকার। আর অবশ্যই সেই গ্রাফিক্স টিম, যাদের প্রায় নিখুঁত কাজের জন্য কোথাও একফোঁটা খামতি লাগেনি। মনে হয়নি নকল। পরিচালক বুদ্ধিমান, তিনি সাধ্যের অসাধ্য কিছু দেখাতে চেয়ে লোকের কাছে সেটাকে হাস্যকর করে তোলেননি। বিমলের ভূমিকায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কুমার (গৌরব চক্রবর্তী), রুবি (কোয়েল মল্লিক) চরিত্রের সঙ্গে মানানসই, পরিণত। শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, অ্যাডোলিনা বেশ ভালো। তবে আলাদা করে বলতে হবে কাঞ্চন মল্লিক এবং রজতাভ দত্তের কথা। কাঞ্চনের চরিত্রটি এখানে কমিক রিলিফ, হঠাৎ হঠাৎ উটকো প্রশ্ন করা ওর স্বভাব অথচ তা সারা ছবিতে কোথাও একঘেয়ে লাগেনি। শুধু সংলাপ নয় অ্যাক্টিভিটি বেসড কমেডি যে কত ভালো হতে পারে তা কাঞ্চন দেখিয়েছেন। রজতাভ সম্পূর্ণ অন্য এক লুকে চুটিয়ে অভিনয় করেছেন। তা বলে কি আর দু’ঘণ্টার ছবি সবটাই এ প্লাস! না ঠিক তাও নয়। এই যেমন কোয়েল মল্লিক বাচ্চাটিকে নিয়ে যখন উঁচু ঝর্ণার ওপর থেকে নীচের দিকে লাফ দেন তখন ‘বাহুবলী’-র কথা মনে পড়ে। ওঁরা যে তারপরেও বেঁচে ছিলেন সে ভগবানের অসীম কৃপা। আল মাহারিকে খুঁজে পেতে বিমলকে অযথা কিছু ঘুষি হজম করতে হয়, যার কোনও দরকার ছিল না। তবে এটুকুই, প্রযোজকের আকাল, স্বল্প বাজেট, পরিচালক সায়ন্তন কিন্তু এইসব কিছু মেনে নিয়েই এক টানটান অ্যাডভেঞ্চার ছবি বানিয়েছেন। প্রযোজক এবং পরিচালকের কাজ শেষ। এবার দর্শকের মানে আপনাদের পালা। দেখুন যদি কিছু পাল্টানো যায়!