পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
এসি গাড়ি থেকে নেমেই গরমটা টের পেল সুরথ। চাঁদিফাটা রোদে এখন টুকটাক কেনাকাটা সেরে কোনওক্রমে গাড়িতে বসতে পারলে শান্তি। এসিটা বাড়িয়ে দিয়ে গান শুনতে শুনতে পৌঁছে যাওয়া যাবে বাড়ি। বাড়ি না তো, সদ্য কেনা ১২০০ স্কোয়্যার ফুটের দক্ষিণ খোলা ফ্ল্যাটে। যদিও দক্ষিণ দিকটা খুব একটা খোলা হয় না, রোজ বাড়ির কাছাকাছি এসে তনয়া নইলে মাকে ফোনে জানিয়ে দেয় এসিটা অন করে দিতে। যাতে গিয়ে ফ্রেশ হতে হতে ঘরটা ঠান্ডা হয়ে যায়। বাড়িতে এসেই ফ্রিজ খুলে ঢকঢক করে ফ্রুট জ্যুস খেয়ে ফ্রেশ হতে ঢুকল সুরথ। গরমে রান্নাবান্নার পাটও নেই। বাড়িতেই কনভেকশন আছে। বয়েলড চিকেন আর চিজি ভেজ দিয়েই সবাই ডিনারটা সেরে ফেলবে।
এ গল্প সুরথের একার নয়। সুরথের মতো আরও লক্ষ কোটি সুরথ আমরা সকলেই। তাই এ গল্পের চরিত্র আমরাও। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে এবারের থিম ‘আমার স্বাস্থ্য আমার অধিকার’। কিন্তু স্বাস্থ্যের অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে স্বাস্থ্য ভালো রাখার দিকগুলোর সঙ্গেই আপস করছি না তো? ভাবাচ্ছে বইকি! এবছরের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে সচেতন করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আবহাওয়াবিদরাও বলছেন, গোটা দুনিয়ার তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি বেড়েছে। ভারতের গড় তাপমাত্রা ২০২৩-এর আগে ছিল ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন তা বেড়ে ২৭.৪ ডিগ্রিতে এসে ঠেকেছে। কেন তাপমাত্রার এমন ঊর্ধ্বগতি? এই সমস্যাকে যদি বর্তমান সময়ের একটি ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়’ ধরি, তবে তার নেপথ্যে কিন্তু মানুষেরই হাত আছে।
মানুষ কেন ভিলেন?
স্বাস্থ্য আসলে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ ভালো থাকার সমষ্টি। তাই তাকে ভালো রাখতে গেলে প্রকৃতিকেও ভালো রাখতে হবে। জলীয় বাষ্পের হার বৃদ্ধি, তীব্র গরমের সঙ্গে গলগল করে ঘাম, হাওয়ায় অস্বাস্থ্যকর উপাদান বৃদ্ধি— এগুলো ফুসফুসের নানা রোগ, নানা মরশুমি অসুখ ডেকে আনছে রোজ। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ভাইরাল ফিভার এখন সারা বছরের সঙ্গী। এগুলোর নেপথ্যে অনেকাংশে মানুষই দায়ী।
প্রকৃতি নিজস্ব নিয়মে কিছু ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন দিন-রাতের পরিবর্তন, ঋতুচক্র পরিবর্তন ইত্যাদি। কিন্তু উষ্ণায়নের দিকটি অনেকটাই ‘ম্যান মেড’। আসলে ঘরে ঘরে ফ্রিজ, এসি, গাছ কেটে ও পুকুর বুজিয়ে বহুতল নির্মাণ বেড়েছে বহুলাংশে। কার্বন মনোঅক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের (সিএফসি) মতো দূষিত গ্যাস আমরাই নিত্য জুগিয়ে যাচ্ছি প্রকৃতির বুকে। বর্তমানে আমরা যে পরিমাণে গাড়ি ব্যবহার করি, এসি-ফ্রিজ-মাইক্রো আভেন ব্যবহার করি, এগুলো থেকে বেরনো সিএফসি, কার্বন ডাই অক্সাইড সবই গিয়ে জমছে ওজোন স্তরে। তাতে তৈরি হচ্ছে ছিদ্র। ফলে সূর্যের আলো আরও তীব্রভাবে আরও শক্তি নিয়ে পৃথিবীতে আসছে। প্রকৃতিরও নির্দিষ্ট সহনক্ষমতা আছে। নিয়ম না মেনে জলা জায়গা বুজিয়ে, গাছ কেটে বহুতল ওঠায় মাটির নীচের জলও শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে তার পক্ষেও এই আলোর তেজ শোষণ করার ক্ষমতা অনেকটা কমে আসছে। এই আলো বিচ্ছুরিত হয়ে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে পড়ছে প্রকৃতিতে। পৃথিবীতে আকাশ, জল, অরণ্য, ভূমিভাগ সবই রয়েছে। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বাস্তুতন্ত্র রয়েছে। শক্তির তরঙ্গ যখনই এক বাস্তুতন্ত্র থেকে আর এক বাস্তুতন্ত্রে যেতে পারে না, তখনই তাপমাত্রা বাড়ছে। তাই বসন্তেই চাঁদিফাঁটা রোদ, লু সইতে হচ্ছে। বৃষ্টি হচ্ছে না। প্রকৃতি তার রূপ পাল্টে ফেলছে নিয়ত।
সব আরাম বাদ?
বাঁধতে হবে অনিয়মকে। নিজেদের দরকারের বাইরে আরাম বিলাসিতায় রাশ টানতে হবে। আগে ১০-৫টা অফিস হতো। এখন দুই-তিন-চার শিফটে অফিস হয়। সারাদিন-সারারাত অফিসের এসিগুলো নাগাড়ে চলে। ব্যক্তিগত পরিবহণ ছেড়ে মেট্রো, বাস, ট্রেনের মতো গণপরিবহণের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য দিতে হবে উৎসাহ। এমনিতেই কলকারখানার ধোঁয়া, গণপরিবহণের কার্বনের জ্বালানি পরিবেশের ক্ষতি করছে। আমরা বাকিটুকু রক্ষা না করে, তার উপর আরও ক্ষতি চাপিয়ে দিচ্ছি। নিজেদের দরকারটুকু একটু কাটছাঁট করে পরিমার্জন করে এই সমস্যার সমাধান করতেই হবে।