পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
মনোজিৎবাবু সম্প্রতি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। নিয়ম করে রোজ মর্নিং ওয়াক করেন। ফেরার পথে বাজারটা সেরেই ফেরেন। সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই বুকে একটা অস্বস্তি অনুভব করলেন। ও কিছু নয়, গ্যাস হয়েছে ভেবে একটু লিকুইড গ্যাসের ওষুধ গলায় ঢেলে যথারীতি মর্নিংওয়াকে বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ হাঁটার পর বুকের বাম দিকটা যেন চাপ ধরে এল, শুরু হলো শ্বাসকষ্ট, সারা শরীর ভিজে গেল ঘামে। জ্ঞান হারিয়ে পার্কেই লুটিয়ে পড়লেন। সৌভাগ্যক্রমে স্থানীয় একজন চিকিৎসকও সেদিন প্রাতঃভ্রমণকারীদের দলে ছিলেন। সবাই ‘গ্যাস’, ‘গ্যাস’ করে চিৎকার করলেও, ডাক্তারবাবু বুঝলেন মনোজিতের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তাঁর গাড়িতেই রোগীকে পাঠানো হলো এক নার্সিংহোমে। দিন দশেক যমে মানুষে টানাটানির পর সে যাত্রায় মনোজিৎবাবু সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েই বাড়ি ফিরলেন।
অজ্ঞতা কীভাবে বিপদ ডেকে আনে বুকে ব্যথা মানেই গ্যাস অম্বলের ব্যথা, এটা আমরা অনেকেই ভেবে নিই। অম্বলের বড়ি, গ্যাসের ওষুধ, ব্যথার বড়ি খাইয়ে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ করে ফেলি। অনেকে আবার খালি পেটে গ্যাস হয়েছে এবং তার থেকে বুকে ব্যথা হচ্ছে ভেবে রোগীকে জোর করে কিছু খাইয়ে দেন। কেউ বুকে ম্যাসেজ করেন কিংবা সেঁক দেন। এইসব উল্টোপাল্টা কাজের ফলে চিকিৎসার সময় এবং সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও, অনেক হার্ট অ্যাটাক রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। আমাদের অজ্ঞানতাই ঠেলে দেয় তাঁকে মৃত্যুর দিকে।
বয়সটাও গুরুত্বপূর্ণ বাড়িতে কারও বুকে ব্যথা হলে প্রথমে তার বয়সটা খেয়াল করুন। একজন পাঁচ বছরের শিশুর বুকে ব্যথা হলে নিশ্চয়ই আগে হার্টের অসুখের কথা ভাববেন না। অথচ পঞ্চাশ বছর বয়সী কেউ বললে, আগে সেটাই ভাববেন।
বুকে ব্যথার ধরনটা খেয়াল করুন। বুক থেকে পিঠ, ঘাড় বা হাতের দিকে ছড়াচ্ছে কিনা! সঙ্গে শ্বাসকষ্ট এবং অতিরিক্ত ঘাম আছে কিনা! রোগীর কোনও প্রেসার বা হার্টের অসুখের পূর্ব ইতিহাস আছে কিনা, সেটা জেনে নিন। রোগীর পালসটা দেখুন। একটু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে সাধারণ মানুষও বুঝতে পারবে, রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কিনা! অনেক সময় এসব উপসর্গের সঙ্গে মাথা ঘোরে, গা গোলায়, বমিও হয়।
চটজলদি কী করবেন রোগীর জামা কাপড় ঢিলে করে দিয়ে খোলা জায়গায় শুয়ে দেবেন, যেখানে বাতাসের অভাব নেই। লোকজনের ভিড় সরিয়ে দেবেন। রোগীকে মুখে কিছু শক্ত খেতে দেবেন না।
গলা শুকিয়ে গেলে সামান্য জল দিয়ে গলা ভিজিয়ে দেবেন। হাতের কাছে অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট থাকলে ৩০০ মিলিগ্রাম খাইয়ে দেবেন। বুকে ম্যাসেজ করতে যাবেন না। ডাক্তার ডেকে সময় নষ্ট না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাছাকাছি কোনও হাসপাতাল কিংবা নার্সিংহোমে নিয়ে যাবেন, যেখানে হার্টের চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত আছে। হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের ক্ষেত্রে ‘গোল্ডেন আওয়ার’ বলে একটা কথা আছে। যত তাড়াতাড়ি রোগের চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন, ততই রোগীর বেঁচে ওঠার সম্ভাবনা বাড়বে।
হাসপাতালে কী করা হয় আইসিসিইউ-তে রোগীকে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। রোগের সঠিক কারণ নির্ণয় করে তখনই চিকিৎসা শুরু হয়। যদি রোগীর হার্টের ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে থাকে, তবে সেই জমাট রক্ত তরল করার জন্য নানা ধরনের ওষুধ, ইন্ট্রাভেনাস ইত্যাদি দেওয়া হয়। একে বলে থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি। যদি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে ধমনিতে ব্লক ধরা পড়ে, তাহলে অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি করা হয়।
মনে রাখুন শেষ কথা হল, বুকে চাপ ধরা ব্যথা হলে সেটাকে কখনওই গ্যাসের ব্যথা বলে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করবেন না।
গ্যাসের ওষুধ নিশ্চয়ই খাওয়াতে পারেন। আধঘন্টা অপেক্ষা করেও দেখতে পারেন, কিন্তু তার বেশি নয়। মনে রাখবেন, পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বা মহিলার দশ জনের মধ্যে নয়জনের ক্ষেত্রেই বুকে চাপ ধরা ব্যথার প্রধান কারণ হলো হার্ট অ্যাটাক। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পারলে প্রায় সবাই সুস্থ হয়ে যান।