পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
শোক আসলে ভীষণ চেনা একটা অনুভূতি। কখন ও না কখনও আমাদের সবাইকেই এই অনুভুতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। শোক ও শোকপ্রকাশ কিন্তু আলাদা। শোক বলতে আমরা বুঝি তাৎক্ষণিক একটা আবেগ, যা মনের ভিতরে জন্ম নিয়ে আমাদের বিহ্বল করে দেয়। আর যেভাবে কেউ সেই শোকের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন, সেই প্রক্রিয়াটি হল শোকপ্রকাশ।
এই প্রসঙ্গেই আসে কুবলার-রস মডেলের কথা। এই মডেলে শোকপ্রকাশের পাঁচটি ধাপের কথা বলা হয়েছে। প্রথমেই আসে অস্বীকার। অর্থাৎ প্রিয়জনকে হারানোর কথা মানতেই চান না অনেকে। দ্বিতীয় ধাপ—রাগ। কেন এমনটা হল, তা নিয়ে তীব্র রাগ। তৃতীয় ধাপ—দরাদরি। এর পর আসে ডিপ্রেশন বা অবসাদ। সবশেষে আসে মেনে নেওয়া। একটা সময় পর্যন্ত এই পাঁচটি ধাপকে চূড়ান্ত মান্যতা দেওয়া হতো। কিন্তু ফাংশনাল নিউরোইমেজিং আসার পর এই ধারণা অনেকটাই বদলে যায়। কারণ এর মাধ্যমে মস্তিষ্ক কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেই সম্পর্কে রিয়েল টাইমে আমরা বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছি। তা থেকে আরও জানা গিয়েছে, প্রত্যেকের ক্ষেত্রে এই পাঁচটি ধাপ যে পর পর আসে, এমনটা নয়। তবে এই শোক থেকে উত্তরণের যে পর্ব, তা আমাদের মস্তিষ্কের কাছে নতুন এক শিক্ষা। আসলে প্রতিটি ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে মস্তিষ্ক নিজের মতো করে কিছু কোডিং করে। হয়তো আমরা কাউকে নিয়মিত ফোন করতাম। তাঁর মৃত্যুর পর সেই নম্বরটি আর ডায়াল করা হয় না। সেই শিক্ষাটি মস্তিষ্ক গ্রহণ করে ও সেই অনুযায়ী নিজেকে পরিবর্তন করে। নতুন স্নায়ুবিন্যাস করে। যা নিউরোপ্লাস্টিসিটি নামে পরিচিত।
শোকপ্রকাশের জন্য কাঁদা উচিত কি না, তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন। আসলে বিশ্বের কোনও কোনও অংশে কান্নাকে দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু প্রিয়জনের মৃত্যুতে কান্না আসবে, এটাই স্বাভাবিক। কান্না একটি প্রতিবর্ত প্রক্রিয়া। তা চেপে রাখার চেষ্টা করবেন না। মনখারাপ হলে কাঁদুন। শোকের মধ্যে কাঁদলে চোখের জলের মধ্যে দিয়ে স্ট্রেস হরমোনগুলি নির্গত হয়। পাশাপাশি, অক্সিটোসিন ও এনডরফিনের ক্ষরণ হয়। অনেকটা পরিমাণ এনডরফিন ক্ষরণ হলে ব্যথা কম অনুভূত হয়। অনেকে কাঁদতে পারেন না।
কাছের কারও মৃত্যু হলে প্রয়োজন মানসিক সহযোগিতার। এই সময় প্রয়োজন আশপাশের বন্ধু ও পরিজনের সান্নিধ্য। কেউ কেউ ভাবেন, এই সময় কি শোকাহত মানুষটিকে শক্ত থাকতে বলা উচিত? বোধহয় না। তাঁদের ক্ষেত্রে প্রিয়জনের উচিত শোকপ্রকাশের পরিস্থিতি তৈরি করে দেওয়া। কারণ, অবদমিত শোক থেকে অনেক রোগের সূত্রপাত হয়। কখনও যদি কারও মনে হয়, শোকপ্রকাশের জন্য এই চেনা পরিবেশ থেকে দূরে কোথাও যাওয়া প্রয়োজন, তাহলে সেক্ষেত্রে মানুষটিকে সঙ্গ দিন। পাশাপাশি, প্রথম থেকেই ছোটদের বিভিন্ন আবেগ-অনুভূতির অনুভব শিক্ষাও অত্যন্ত প্রয়োজন।
স্বাভাবিকভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শোকের অভিঘাত না কমলে তাকে প্রোলং গ্রিফ ডিসঅর্ডার বলা হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে শোকের অভিঘাত এক বছরের বেশি বা ছোটদের ক্ষেত্রে ছ’মাসের বেশি হলে বা তাঁরা তীব্র মানসিক কষ্টে ভুগলে, জীবনের তাৎপর্য হারিয়ে গেলে বা যদি মনে হয় মৃতের সঙ্গে নিজের জীবনের একটি অংশ হারিয়ে গিয়েছে—এমন কিছু বিষয় থাকলে ওই ব্যক্তি পিজিডি-তে ভুগছেন বলে প্রাথমিকভাবে দাবি করা হয়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন। দরকারে থেরাপির পাশাপাশি ওষুধেরও প্রয়োজন হতে পারে।
জীবনে শোক-বিচ্ছেদ থাকবেই। কিন্তু,জীবন তো থেমে থাকে না। দুঃখ ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে শিল্পমাধ্যম অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। গল্প, গান, সিনেমায় নিজেদের আবেগের প্রতিফলন দেখে তাঁরা অনেকটা আশ্বস্ত হন। কেউ কেউ শোক কাটিয়ে ওঠার এই পর্বে নিজেকে খুঁজে পান সৃষ্টিশীলতার দুনিয়ায়। আসলে এই শোক কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন নতুন করে কাজকর্ম শুরু করা। শুরুতে সমস্যা হলেও ধীরে ধীরে মিলবে সাফল্য।
লিখেছেন সুদীপ্ত রায়চৌধুরী