আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
মস্তিষ্কের হঠাৎ প্রদাহজনিত (ফুলে যাওয়া) অসুখ হল এনসেফালাইটিস। সাধারণত মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ডে সংক্রমণের কারণে এমন হয়।
ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং পরজীবী সংক্রমণ থেকে এই অসুখ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
আবার নানা কারণে, শরীরের রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থাই ভুল করে ব্রেনের কোষগুলিকে আক্রমণ করে বসে। সেখান থেকেও মস্তিষ্কে প্রদাহ দেখা দিতে পারে।
সংক্রমণজনিত এনসেফালাইটিসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস, আরবো ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে এনসেফালাইটিস-এর মতো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আরবো ভাইরাস বাসা বাঁধে কুকুর, বিড়াল, শুয়োর, ছাগলের মতো প্রাণীর দেহে। মশা, এঁটুলির মতো পোকা (পশুদের গায়ে থাকে এই ধরনের পোকা) দ্বারা ভাইরাস বাহিত হয়। পতঙ্গগুলির কামড়ে মানবদেহে ভাইরাসটি প্রবেশ করে। তবে রোগটি মানুষ থেকে মানুষে হাঁচি, কাশি, সর্দি, স্পর্শ থেকে ছড়ায় না।
রোগের ধরন
জাপানিজ এনসেফালাইটিস। এক্ষেত্রে মশা ভেক্টরের ভূমিকা পালন করে টিক বোর্ন এনসেফালাইটিস। এক্ষেত্রে এঁটুলি জাতীয় পোকা পালন করে ভেক্টরের ভূমিকা স্তন্যপায়ী জন্তুর কামড় থেকে দেহে রেবিস ভাইরাসের সংক্রমণ এবং সেখান থেকে এনসেফালাইটিস হতে পারে।
ইনকিউবেশন পিরিয়ড
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া নাকি পরজীবী? কোন ধরনের জীবাণু দ্বারা মানবদেহে সংক্রমণ ঘটেছে তার উপর নির্ভর করে ইনকিউবেশন পিরিয়ড। ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে সাধারণত ৫ থেকে ১৫ দিন হল ইনকিউবেশন পিরিয়ড।
উপসর্গ
মুশকিল হল, রোগীর দেহে প্রাথমিক উপসর্গগুলি তেমনভাবে নজরে আসে না। ফলে রোগ ধরা বেশ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। রোগীর সাধারণ ফ্লু হওয়ার মতো শারীরিক অসুস্থতাও দেখা দিতে পারে। অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে— সারা শরীরে ব্যথা, সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ার মতো ঘটনা, খিদে কমে যাওয়ার মতো সমস্যা।
তবে আশঙ্কাজনক উপসর্গগুলিও চেনা প্রয়োজন। রোগীর হঠাৎ বিভ্রান্তি হওয়া, শরীরের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়া, বমি, প্রবল ক্লান্তি, খিঁচুনি, অলীক কল্পনা করা ও তা প্রত্যক্ষ করা, প্রলাপ বকা, প্রবল বিরক্তি, আলোয় থাকতে না চাওয়া, তীব্র মাথা ব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিলেই হাসপাতালে নিয়ে যান রোগীকে।
রোগনির্ণয়ক পরীক্ষা
নিউরোইমেজিং পরীক্ষা দ্বারা এনসেফালাইটিস নির্ণয় করা যায়—
এমআরআই ব্রেন
সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড একজামিনেশন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, পরজীবীর উপস্থিতি জানাতে রক্তের সেরোলজি পরীক্ষা।
চিকিৎসা
কোন ধরনের জীবাণু দ্বারা রোগী আক্রান্ত হয়েছেন তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি। তবে প্রাথমিক ভাবে রোগীর উপসর্গ কমানোর দিকে নজর দেওয়া হয়। এছাড়া রোগীর শরীরে পর্যাপ্ত মাত্রায় পুষ্টিপদার্থ এবং জলের জোগান বজায় রাখা দরকার। এরপর জীবাণুর প্রকৃতি নির্ণয় হয়ে গেলে রোগীকে সেই বুঝে অ্যান্টিভাইরাল বা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল থেরাপি দিতে হবে। রোগীর শরীরে খিঁচুনি দেখা দিলে তা বন্ধ করা দরকার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে প্রদাহ কমাতে স্টেরয়েড প্রয়োগ করা যেতে পারে।
কাদের ঝুঁকি বেশি
বয়স্ক মানুষ, ২ বছর বয়সের নীচে থাকা শিশু, এবং যাঁদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে গিয়েছে এমন মানুষের এই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
রোগ প্রতিরোধের উপায়
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এনসেফালাইটিস হওয়ার পিছনে দায়ী থাকে পতঙ্গ বা ভেক্টর। অতএব মশা এবং এঁটুলিজাতীয় পোকার কামড় থেকে বাঁচলেই এই অসুখগুলি থেকে বাঁচা সম্ভব। সেক্ষেত্রে পতঙ্গ বিতাড়ক নানা স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। মশার প্রাদুর্ভাবের সময় হাত পা ঢাকা জামাকাপড় পরা উচিত। এছাড়া এনসেফালাইটিস থেকে বাঁচতে টিকা নেওয়া যেতে পারে।