মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
পুজোর বাজার করি
আঁকাআঁকিতে আমি কোনওদিনই খুব একটা দড় নই। তাই সরস্বতী পুজোর আলপনা দেওয়ার দায়িত্ব আমার ওপর কখনওই পড়ে না। তাই বলে সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতিতে আমি পিছিয়ে থাকি তা কিন্তু নয়। জানুয়ারি মাস পড়লেই সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতি আরম্ভ হয়ে যায় মনে মনে। প্রস্তুতি বলতে নিজের সাজগোজ নিয়ে ভাবনা। ছোটবেলায় মা যেমন সাজিয়ে দিতেন তেমনই সেজে পুজোয় গিয়ে বসতাম। কিন্তু এখন নিজের সাজ নিয়ে নিজেই ভাবি। কোন শাড়ি পরব, তার সঙ্গে কী ব্লাউজ মানাবে, কেমন গয়না পরা যায়, চুলের সাজ ঠিক কেমন হলে ভালো লাগবে এইসব নিয়ে ভাবার মজাই আলাদা। তবে এই সময় স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা এসে যায় বলে পড়ার ফাঁকে ফাঁকেই সাজের চিন্তা করতে হয়।
আলপনা দিতে না পারলেও পুজোর বাজারের কথা শুনলেই আমি এক পায়ে খাড়া। বাজারে গিয়ে বেছে বেছে ফল, সব্জি কেনা, হলুদ ও গোলাপি মঠ কেনা, ভোগের সরঞ্জাম কেনা, মিষ্টি, দই বেছে বেছে কেনা এইসবে আমার খুব উৎসাহ। একবার শেষ মুহূর্তে দেখা গেল কড়াইশুঁটি আনা হয়নি। ব্যস, আবার যাও বাজারে। বাজারের দিকটা ছাড়াও আমি ঠাকুরের আসন সাজাতে খুব ভালোবাসি। ফুল, ফল, দই, মিষ্টি, খই, মুড়কি ইত্যাদি আলাদা আলাদা থালা সাজিয়ে দেবী সরস্বতীর সামনে রাখার ভার তাই আমার ওপরেই থাকে। এছাড়া সকলের বই , খাতা, কলম মায়ের পায়ে রাখতেও ভুল হয় না কখনও। আর মা সরস্বতীর জন্য বাসন্তী গাঁদা দিয়ে মালা গাঁথার কাজটাও আমার। ছোটবেলা থেকেই দেখছি আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পুজোয় কখনও পুরোহিত ডাকা হয় না। আমার বব্বাবাই (প্রয়াত কবি নীরেন্দ্রনাথ চাক্রবর্তী, মায়ের ঠাকুরদা) পুজো করতেন। গত বছর বব্বাবা চলে গিয়েছেন। এই প্রথম তাঁকে ছাড়াই আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পুজো হবে। আজ তেরো বছরে পৌঁছে মনে হচ্ছে আবার যেন নতুন করে পুজোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।
জাগরী বিশ্বাস, অষ্টম শ্রেণী
সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুল
সাজো সাজো রব পড়ে যায়
সরস্বতী পুজোয় আমার মতো সব ছাত্রছাত্রীরাই বেশ আনন্দে কাটায়। পুজোর কিছুদিন আগে থেকে সাজো সাজো রব পড়ে যায়। পুজো পরিচালনার জন্য শিক্ষক শিক্ষিকারা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন। কমিটির মধ্যে একজনকে সম্পাদক ও আর একজনকে সহ সম্পাদক করা হয়। এরা সবাইকে কাজ ভাগ করে দেয়। যার যা কাজ দায়িত্ব সহকারে পালন করতে হয়। এবার পুজোয় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য কার্ড ছাপানো হয়ে গিয়েছে। সেই কার্ড নিয়ে আমরা বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছি। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। পুজো আর বেশি দিন বাকি নেই। তাই প্যান্ডেল, মাইক, জেনারেটর, পুরোহিত, ঢাকি ইত্যাদি ঠিক করা হয়ে গিয়েছে। প্রতিমাও বায়না করা হয়ে গিয়েছে। এবার আমাদের প্রতিমা খুব সুন্দর দেখতে হয়েছে। পুজোর আগের দিন বিকেলে মা’কে প্যান্ডেলে বসানো হবে। প্যান্ডেল সাজানোর কাজও চলছে জোরকদমে।
এসবের পাশাপাশি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটকের প্রস্তুতি চলছে। পুজোর দিন নতুন পোশাক পরে বিদ্যালয়ে পুষ্পাঞ্জলি দেব। অন্যান্য কাজও করব। দুপুরে সবাইকে প্রসাদ বিতরণ করা হবে। সন্ধ্যার সময় সাড়ম্বরে সন্ধ্যারতি হবে। রাতে সবাই মিলে বাজি পোড়াব, খুব আনন্দ করব। এরপর ঘট বিসর্জন হবে। রাতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ওপর সব দায়িত্ব দিয়ে সবাই মিলে বিভিন্ন মণ্ডপে ঠাকুর দেখতে যাব।
পরের দিন সন্ধেবেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সেখানে বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান করা হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচ, গান, আবৃত্তি, হাস্যকৌতুক ইত্যাদি হবে। শেষে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অভিনীত একটি নাটক মঞ্চস্থ হবে। আমিও সেই নাটকে অভিনয় করব। পরের দিন দুপুরে প্রীতিভোজ হবে। এরপর সন্ধেবেলায় সবাই মিলে মা সরস্বতীকে বিসর্জন দিতে যাওয়া হবে। সেই সঙ্গে পরের বছর এভাবে আনন্দ করার জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকব।
লোকনাথ সাউ
নবম শ্রেণী, এগরা রামকৃষ্ণ শিক্ষা মন্দির
পুজোর দিন কুল খাব
সরস্বতী পুজোর কথা উঠলেই আমার মনে পড়ে যায় অতীতের এক ঘটনা। ছোটবেলা থেকে শুনেছি যে সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেলে পরীক্ষায় ফেল করব। কিন্তু অবাধ্য ইচ্ছা যায় কোথায়, সকলের চোখের আড়ালে কয়েকটা কুল চুরি করেছিলাম আর তারপর সন্তর্পণে সেগুলো বারান্দায় বসে খেয়েছিলাম, পাছে কেউ দেখে বকে ওঠে ‘আবার তুমি পু্জোর আগে কুল চুরি করে খাচ্ছো, দুষ্টু মেয়ে?’ খাওয়া তো হল আয়েস করে কিন্তু তারপর কয়েকদিন আমার রাতের ঘুম ছুটে গেল এই ভেবে যে নিশ্চয়ই আমার আর নতুন ক্লাসে ওঠা হল না কারণ সরস্বতী পুজোর কয়েকদিন পরেই আমার বার্ষিক পরীক্ষা থাকে।
প্রতি বছর এই দিনে সকালে স্নান করে শাড়ি পরে বাড়ির সরস্বতী ঠাকুরের পুজো সেরে আমাদের আবাসনের পুজোয় যাই। পুজোর কাজ, দুপুরে খাওয়াদাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে হুল্লোড় করে খিচুড়ি খাওয়ার আনন্দই আলাদা। বিকেলে নাচ গান আবৃত্তি আর গল্পে মেতে উঠি আমরা সবাই। এইভাবেই ভীষণ আনন্দে কেটে যায় দিনটা। তবে সারাদিনের এত আনন্দের মধ্যে আর পড়া হয় না। সব শেষে রাতে মা যখন পড়তে বসতে বলেন তখন খুব সহজে বলে দিই ‘পড়ব কী করে? বইগুলো তো ঠাকুরের পায়ে তুমিই রাখতে বলেছ।’ মা হেসে ফেলেন, নিশ্চয়ই বুঝতে পারেন আমার না পড়ার বাহানা। অপরাধী মন রাতে বাগদেবীকে বলে এবারটা পাশ করিয়ে দিও মা, পরের বার খুব ভালো করে পড়ব।
সুলগ্না মৈত্র
অষ্টম শ্রেণী, গার্ডেন হাই স্কুল
বাগদেবীকেই মনের কথা বলি
জ্ঞান হওয়া থেকেই শুনে আসছি, সরস্বতী বিদ্যার দেবী। পড়াশোনার সঙ্গে এই দেবীর গভীর সম্পর্ক। তাই এই দেবীকে যথেষ্ট সমীহ করতে হয়। না হলে রেজাল্টে না জানি কী হয়! তবে যে কোনও পুজোতেই আমার একটু বেশিরকমের আগ্রহ আছে। কারণটা হল পুজোর আনন্দময় ভাবগম্ভীর পরিবেশটা আমার দারুণ লাগে। দুর্গাপুজোর পর এই সরস্বতী পুজোর মজাটাই আলাদা। তাছাড়া এই পুজোটা পড়ুয়াদেরই একান্ত নিজস্ব। স্কুলের গতানুগতিক দিনগুলোর বাইরে একটু আলাদাভাবে দুটো দিন পাই। খুব ছোটবেলায় দেখেছি আমাদের বাড়িতে বাবা ছোট্ট একটা প্রতিমা এনে পুজো করত। পরে কীভাবে যেন এই সরস্বতীকেই খুব আপনার মনে হতো। সবচেয়ে বড় কথা পরীক্ষা বা অন্য কোনও সমস্যায় পড়লে তখন এই মা সরস্বতীকেই মনের কথা জানাই। এখন নিজেই পুজোর কিছুটা জোগাড়-যন্ত্র করি। বাড়ির পুজো হয়ে গেলে স্কুলে যাই। অবশ্য সাজানোর ব্যাপারটা আগের দিন বিকেল থেকেই শুরু হয়ে যায়। রঙিন কাগজের শিকল, গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে মণ্ডপ সাজানোয় একটা আলাদা মজা আছে। সরস্বতী পুজোয় অঞ্জলি দেওয়ারও একটা বাসনা থাকে। ছোটবেলায় অতক্ষণ না খেয়ে থাকতে কষ্ট হতো। এখন আনন্দই হয়। সরস্বতী পুজো পর্যন্ত কুল খাওয়ার ব্যাপারে একটা নিষেধাজ্ঞা থাকে। যদিও কেন এই নিষেধাজ্ঞা আমার কাছে এখনও পরিষ্কার নয়। আর স্কুলে পুজোর পর দুপুরে সব বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া —মনে হয় অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছি।
হৃশম রায়চৌধুরী
নবম শ্রেণী, সল্টলেক এ ডি স্কুল