মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
মাধ্যমিক পরীক্ষা এগিয়ে আসছে। আর মাত্র কিছুদিন সময় হাতে আছে। শেষ বেলার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে একইসঙ্গে সব যেন গুলিয়ে যাচ্ছে, আর বাড়ছে ভয়টাও। আসলে, যা হচ্ছে তাকে বলা যেতে পারে পরীক্ষার উদ্বেগ। এই প্রথম স্টুডেন্ট লাইফে নিজের স্কুলের বাইরে গিয়ে বড় পরীক্ষা দিতে হবে। আর সেটাতে ভালো করবার চিন্তায় মনের ভিতর অনেক কাটাকুটির খেলা তৈরি হচ্ছে। মেন্ডেলের সংকরায়ণ পরীক্ষাটা লিখতে পারব তো বা উদ্ভিদের অযৌন জননের উদাহরণগুলো ভুলে যাচ্ছি যে। আচ্ছা ছবি ঠিক যা যা প্র্যাকটিস করেছি তার মধ্যেই আসবে তো। প্রশ্নব্যাঙ্কের একই প্রশ্নের উত্তর নানা জায়গায় নানারকম পাচ্ছি কেন। কোনটা ঠিক। কোনটা ভুল। এইরকম নানা প্রশ্ন মনের ভিতরে অনবরত ঘুরছে। আর উদ্বেগ বাড়ছে।
মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান নিয়ে তোমাদের চিন্তা করবার কিছু নেই। এটা ধরে নিয়ে তোমরা চূড়ান্ত প্রস্তুতি নাও। লেখা পড়ায় যা যা অভ্যাস করেছ এতদিন, তার মধ্যে থেকেই দেখবে জানা সব প্রশ্ন পরীক্ষায় এসেছে। কাজেই মাথা ঠান্ডা করে সেটা গুছিয়ে লিখে ফেলাই তোমার কাজ। লেখার সময় কী কী সতর্কতা নিতে হয়, সে বিষয়ে তোমাদের কিছু ধারণা আছে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিশ্চয় তোমাদের সেকথা বলেছেন। যেমন ধরো, খাতা পরিচ্ছন্ন রাখবার কথা, সঠিক বানানে উত্তর লেখা অভ্যাস করা, প্রশ্নের নম্বর পরপর সাজিয়ে উত্তর লেখা, একটি নির্দিষ্ট নম্বরের প্রশ্নের নানা অংশের উত্তর খাতায় ছড়িয়েছিটিয়ে না লেখা, এসব কথা নিশ্চিত অনেকবার শুনেছ। এখন মনে রেখেছ কি না সেটা একটা প্রশ্ন বটে। তবে কথাগুলো মনে রেখো। কাজের কথা। সঠিক উত্তর সাজানো পরিচ্ছন্ন খাতায় বেশি নম্বর ওঠে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
এবার আসি বিষয়ের কথায়। লেখার গোড়াতে আমি বলেছি, এখন তোমরা ইচ্ছে করলে, পাঠ্যবিষয়ের ধারণাগুলিকে মনে মনে ভাবা অভ্যাস করতে পারো। এর মানে কী? আসলে তোমরা দেখবে, পরীক্ষার আগে সব গুলিয়ে যাবার যে অনুভূতিটা আমাদের হয়, সেটার কারণ হল পড়া বিষয়গুলোকে কিছু বিচ্ছিন্ন তথ্যের মতো করে আমরা মনে রাখতে চেষ্টা করি। ভাবি যত বেশি তথ্য মনে রাখতে পারব, পরীক্ষায় তত সুবিধা হবে। অবজেকটিভের উত্তর দিতে সুবিধা হবে। এবার পরীক্ষার আগে দুশ্চিন্তার মধ্যে যখন সেই তথ্যগুলোকে ঘেঁটে দেখতে যাই, তখন কিছু মনে পড়ে, কিছু ভুলে যাই। আরও চিন্তা বাড়ে। ধরো তোমাকে বলা হল, উদ্ভিদের চলন ও গমন থেকে সব উদাহরণ মুখস্থ করে লিখে ফেল। তুমি দেখবে, লিখতে গিয়ে সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। একের উদাহরণ অন্যের ঘাড়ে গিয়ে বসছে। এবার যদি, উদ্ভিদের চলনকে ভেঙে সামগ্রিক চলন বা ট্যাকটিক, ট্রপিক বা অভিমুখী চলন, আর ন্যাস্টিক বা তীব্র উদ্দীপনা নির্দিষ্ট চলন হিসেবে বুঝে নেওয়া যায়, তাহলে তার উদাহরণ দেওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। সামগ্রিক চলন যখন বলব সেখানে উদাহরণ হিসেবে যে অতি ক্ষুদ্র জীবের চলন, যা বস্তুত গমন বোঝাবে সেটা আর আলাদা করে মনে রাখতে হবে না। একইভাবে, কোষের বিভাজন দশার বৈশিষ্ট্য, প্রোফেজ মেটাফেজ অ্যানাফেজ টেলোফেজ আর মুখস্থ করে রাখতে হবে না। বুঝে, ভেবে নিতে পারলে ধারাবাহিকভাবে তাদের দশার বৈশিষ্ট্য মনে এসে যাবে। উদ্ভিদ ও প্রাণী হরমোনের কাজ, স্নায়ুতন্ত্রের গঠনকেও আমরা এইভাবে ভেবে নিতে পারি। বিচ্ছিন্ন নয়, একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখাটাই এখানে প্রস্তুতি।
প্রতিটি অধ্যায়ের ক্ষেত্রে এখন এই ‘ভাবনা’ পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখতে পারো। সিলেবাসের প্রথম অধ্যায়ে আছে পাঁচটি উপ একক। প্রথমটি হল, গাছেদের উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা ও তাদের চলন ও গমন। চলন গমন ব্যাপারটি কীভাবে ঘটছে, মানে স্থান ত্যাগ হচ্ছে, না দেহের অংশ নড়াচড়া করছে এখানে সেটাই মূল ব্যাপার। আর সেখানে কোন উদ্দীপনা সেই কাজ করিয়ে নিচ্ছে সেটা জানতে হচ্ছে। আবার, উদ্ভিদ হরমোনের অধ্যায়ে, উদ্ভিদদেহটি চিন্তা করো। পাতা ফুল ফল মুকুল বীজ কলাস্তর ইত্যাদি। কোন হরমোন কোথা থেকে বের হচ্ছে ভাবো। এবার তাদের কাজের তালিকাটি ক্ষরণস্থান, কাজের জায়গা ও কাজের ধরণ অনুসারে সাজিয়ে নাও। মানুষের হরমোনের বেলাতেও ছকটি একই। এখানে বাড়তি সুবিধা হল, গ্রন্থির নাম আছে। কাজেই সেটা মাঝে রেখে হরমোনের নাম ও কাজ গুছিয়ে নেওয়া যায়। হরমোনের নাম থেকে কাজে বা গ্রন্থিতে না গিয়ে, গ্রন্থি থেকে হরমোনের দিকে এগলে দেখবে খটোমটো নাম মনে রাখার ঝামেলা এড়ানো যাবে। স্নায়ুকোষ আর স্নায়ু এক নয়। তাদের গঠন ও স্নায়ুতন্ত্রের গঠন আলাদা। স্পষ্ট ধারণা ছাড়া এখানে কোনও প্রশ্নের নির্ভুল উত্তর করা যাবে না। মানুষের মস্তিষ্কের গঠন নিয়ে প্রশ্নের উত্তর করতে হলেও ধারণা স্বচ্ছ হতে হবে। প্রতিটি খণ্ডকের ধারণা এখানে পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন। প্রতিবর্ত ক্রিয়া, প্রতিবর্ত চাপ থেকেও প্রশ্ন এলে তাদের গঠনের ধারণা না থাকলে উত্তর করতে অসুবিধা হতে পারে।
বংশগতির অধ্যায়ে যেখানে তোমরা TT ও Tt ব্যবহার করে সংকরায়ণের পরীক্ষাগুলি করছ, চেষ্টা করো অন্য চিহ্ন ব্যবহার করে তার সমাধান করতে। যেমন G/g, R/r বা অন্য কিছু। এতে মুখস্থ হয়ে থাকার ত্রুটি এড়ানো যাবে। প্রশ্ন যদি ঘুরিয়েও আসে, তোমার অসুবিধা হবে না।
এ প্রসঙ্গে, পরিবেশ, সম্পদ ও সংরক্ষণ অধ্যায়টি সবচাইতে বেশি ভাবনা দাবি করে। পরিবেশ নিয়ে পরীক্ষার্থীর নিজের ভাবনাকে প্রকাশ করবার সুযোগ আছে এখানে। আমরা যে পরিবেশে বাস করছি, সেখানে যা যা ঘটছে তার সব কথা বইতে লেখা থাকবে, এটা সম্ভব নয়। বাড়ির পাশে বয়ে যাওয়া নদী, পাহাড়, চাষের জমি, গ্রামের পুকুর কীভাবে মারা যাচ্ছে তা তাদের প্রতিবেশীই জানে। চাষের সার, কীটনাশক বিষের কুফল লিখতে হলে অনেককেই বই পড়তে হবে না। সচেতন অভিজ্ঞতা থেকেই লেখা সম্ভব কী কী আমরা দেখছি চারপাশে প্রতিদিন, কীভাবে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।। সেই দেখাটাকে এখানে গুরুত্ব দিতে হবে।
দূষণের প্রশ্নের উত্তর করতে হলে তাই নিজেদের চারপাশে আমাদের তাকাতে হবে। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা ধোঁয়াশা কুয়াশা চারদিক নজরে থাকা খুব দরকার। শহরে প্রতিদিন দূষণের হার যেভাবে বাড়ছে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ঘটনায় পরিবেশ দূষণের কথা যেভাবে উঠে আসছে সেখান থেকে তথ্য নিয়ে নিজের ভাবনাকে উত্তরে সাজিয়ে রাখা যায়। সেটাও প্রস্তুতি। প্লাস্টিক দুষণ এখানে বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ। সংরক্ষণের প্রশ্নে, উত্তরের সময় মূল কাঠামোর ধারণাটি বই থেকে নিয়ে তাকে মনে মনে নানা ধরণের প্রশ্নের জন্য সাজিয়ে রাখতে পারো। ইন সিটু ও এক্স সিটু সংরক্ষণের সুবিধা ও অসুবিধাও এখানে বিবেচ্য।
ভাবনার ও পড়াশোনার কাজ পাশাপাশি চালিয়ে নিয়ে যেতে পারলে পরীক্ষায় বিশেষ সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আসলে ভাবনা প্রক্রিয়াটিতে আমাদের লক্ষ থাকে না। অভ্যাসও তাই গড়ে ওঠে না। মূল টার্গেট হল নম্বরটা। মনে রেখো এদের মধ্যে কিন্তু কোনও দ্বন্দ্ব নেই। ভাবনাও আসুক, আসুক নম্বরটাও। জানি, সবাই নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে প্রস্তুতি নেবে। এই আলোচনা সেখানে যদি কোনও আলো ফেলে, আত্মবিশ্বাস যদি তাতে বাড়ে সেটাই লাভ। শুভেচ্ছা রইল।